সর্বসম্মত রায় ‘সিবিআই তদন্ত’! তবে রাজ্যকে সম্পূর্ণ দোষী মানতে নারাজ, ভিন্ন পর্যবেক্ষণ দুই বিচারপতির
Post Poll Violence: একুশের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হতেই ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ উঠতে শুরু করে রাজ্যজুড়ে।
কলকাতা: ভোট পরবর্তী হিংসা মামলা নিয়ে পর্যবেক্ষণ আলাদা হলেও রায়দানের ক্ষেত্রে পাঁচ বিচারপতিই একমত হয়েছেন বৃহস্পতিবার। পাঁচজনই মনে করেন, ভোট পরবর্তী হিংসার মামলার তদন্ত করুক কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই। ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দল, বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায়, বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডন, বিচারপতি সৌমেন সেন,বিচারপতি সুব্রত তালুকদারের এজলাসে এই মামলার রায়দান পর্ব ছিল এদিন।
পাঁচ বিচারপতির বৃহত্তর বেঞ্চ এদিন নির্দেশ দিয়েছে, কমিটি, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন বা এই মামলার তদন্তের সঙ্গে যুক্ত যে কোনও কর্তৃপক্ষের কাছে যা তথ্য প্রমাণ রয়েছে তার সমস্ত কিছু দ্রুততার সঙ্গে সিবিআইকে হস্তান্তর করতে হবে। যাতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত শুরু করতে পারে।
বিচারপতি আইপি মুখোপাধ্যায়ের এদিনের পর্যবেক্ষণ, নির্বাচন কমিশন ৫ মে পর্যন্ত আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে ছিল। নথি বলছে তার পর হিংসার ঘটনা কমেছে। সে ক্ষেত্রে শাসকদল যে ভোট পরবর্তী হিংসা সমর্থন করছে তা বলা যায় না। ভোট পরবর্তী হিংসা মামলার ক্ষেত্রে রাজ্য উদাসীন তাও প্রমাণিত নয়।
অন্যদিকে বিচারপতি সৌমেন সেনের পর্যবেক্ষণ, জাতীয় কমিশনের রিপোর্টে রাজনৈতিক নেতা এবং পুলিশ সম্পর্কে যে মন্তব্য করা হয়েছে, তা এক্তিয়ার বহির্ভূত এবং নিষ্প্রয়োজন। কমিটির কাজ কী ঘটেছে শুধুমাত্র সেই ‘ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং’।
এই মামলায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি রাজেশ বিন্দলের পর্যবেক্ষণ, আদালতে নিয়মিত শুনানি চলেছে। তিন মাস কেটে গিয়েছে। হলফনামা দেওয়া ছাড়া কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ রাজ্য করেনি। বহু ক্ষেত্রেই প্রশাসন অভিযোগ নেয়নি কিংবা নিলেও পরে আর কিছু করেনি। আগে থেকেই ঠিক করে নেওয়া নির্দিষ্ট পথে তদন্তকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়েছে। রাজ্যজুড়ে বড় আকারে হিংসা হয়েছে। অথচ ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ নেওয়া হয়নি, এমন প্রমাণও রয়েছে। তাই নিরপেক্ষ সংস্থাকে তদন্তের দায়িত্ব দিলেই সবার আস্থা বাড়বে।
একুশের বিধানসভা ভোটের ফল প্রকাশ হতেই ভোট পরবর্তী হিংসার অভিযোগ উঠতে শুরু করে রাজ্যজুড়ে। একাধিক পিটিশন জমা পড়ে কলকাতা হাইকোর্টে। দোষীদের খুঁজে বের করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার হস্তক্ষেপ চেয়ে এই পিটিশনগুলি জমা পড়ে। ৪ মে ২০২১ কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন বা NHRC স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে ডিআইজি তদন্তের দাবি তোলে। ৩১ মে তিন সদস্যর কমিটি তৈরির নির্দেশ দেয়। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, রাজ্য মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ও রাজ্যের লিগ্যাল সার্ভিসের আধিকারিককে নিয়ে এই তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। এর পর ১৮ জুলাই এনএইচআরসিকে একটি কমিটি তৈরির নির্দেশ দেওয়া হয়। যারা ‘হিংসা বিধ্বস্ত’ জায়গা ঘুরে দেখেন।
ভোট পরবর্তী হিংসার ঘটনা নিয়ে হাইকোর্টে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পাতার রিপোর্ট দেয় জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। সেখানে অসংখ্য অভিযোগ তোলা হয়। “রাজ্যে আইনের শাসন নেই। শাসকের ইচ্ছাই এখানে আইন”, এমনও রিপোর্টে দাবি করে কেন্দ্রীয় মানবাধিকার কমিশন। একই সঙ্গে ওই রিপোর্টে তৃণমূলের একাধিক প্রথম সারির নেতা মন্ত্রীকে ‘কুখ্যাত দুষ্কৃতী’ বলেও উল্লেখ করা হয়। তালিকায় নাম রয়েছে বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক-সহ উদয়ন গুহ, পার্থ ভৌমিক, শেখ সুফিয়ানদের। এই রিপোর্টের তীব্র প্রতিবাদ জানায় রাজ্য। পাল্টা পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ তোলে রাজ্যের শাসকদল। কমিশনের তিন সদস্যের বিরুদ্ধে বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকারের সরাসরি যোগ রয়েছে বলে অভিযোগ তোলে সরকার। আরও পড়ুন: এবার ‘ভোট পরবর্তী হিংসা’র তদন্তে সিবিআই, মামলার প্রেক্ষাপট থেকে অগ্রগতি দেখে নিন ঝলকে