Bengal Weather: কালিম্পংয়ের চেয়েও ‘ঠান্ডা’ রাজস্থান, রেকর্ড-ভাঙা গরম দার্জিলিং-গ্যাংটকে

Bengal Weather: মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ একেবারে পরিষ্কার। চড়া রোদের ফল এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি।’

Bengal Weather: কালিম্পংয়ের চেয়েও ‘ঠান্ডা’ রাজস্থান, রেকর্ড-ভাঙা গরম দার্জিলিং-গ্যাংটকে
কী বলছেন আবহাওয়াবিদরা?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: May 31, 2023 | 9:43 PM

কলকাতা: গরমের ছুটিতে বাঙালির গন্তব্য কোথায়? উত্তর সহজ, বেশিরভাগই হয় দার্জিলিংয়ে, নয় সিকিমে। পাহাড়ি হোম স্টে, হোটেলে উপচে পড়া ভিড় আর এনজেপিগামী ট্রেনের লম্বা ওয়েটিং লিস্টই তার সাক্ষী। আবহাওয়ার (Weather Update) যা মতিগতি, তাতে অবশ্য রাজস্থানে গেলেও মন্দ হত না। অন্তত কালিম্পংয়ের চেয়ে বেশি ‘ঠান্ডা’ পেয়ে যেতেন  পর্যটকরা। অবাক লাগলেও এটাই সত্যি।

সত্যিটা কেমন? মঙ্গলবারের তাপমাত্রার রিপোর্ট দেখলে চোখ কপালে উঠে যেতে পারে। রাজস্থানের জলসলমেরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা মাত্র ২৭.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যোধপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মৌসম ভবনের তথ্য বলছে, মে মাসে এত কম সর্বোচ্চ তাপমাত্রার সাক্ষী কস্মিনকালে হয়নি জয়সলমের, যোধপুরের মতো মরুশহর। বরং, এই সময় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩-৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াসের আশপাশেই থাকার কথা। এটাই স্বাভাবিক। কোনও কোনও বছর ৪৮-৪৯ ডিগ্রিতেও পৌঁছেছে পারদ। সেই তুলনায় মে-শেষে এমন আবহাওয়া, প্রকৃতি সদয় বললেও কম বলা হয়! 

Weather Update

অথচ, এই প্রকৃতিই বাংলায় নির্দয়। মঙ্গলবারের কথাই ধরা যাক। কালিম্পংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে গিয়েছিল ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। পর পর দু’দিন দার্জিলিংয়ের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পঁচিশের উপরে। মঙ্গলবার ২৫.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ২৫.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে ৬ ডিগ্রি বেশি। মে মাসে এত গরম! কখনও দেখেনি বাঙালির প্রিয় শৈলশহর। এতদিন রেকর্ড ছিল ১৯৮৯ সালের দখলে। সেই রেকর্ড এ বার ভেঙে গেল। 

রেকর্ড ভেঙেছে পড়শি শৈলশহর গ্যাংটকেও। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছয় ২৫.৯ ডিগ্রিতে, বুধবার পারদ উঠে যায় ২৬.১ ডিগ্রিতে। দার্জিলিংয়ের মতো সর্বকালীন রেকর্ড না ভাঙলেও, বুধবার ২৩ বছরের উষ্ণতম দিন কাটিয়েছে সিকিমের রাজধানী। শেষ বার ২০০০ সালের ১৪ মে তাপমাত্রা পৌঁছেছিল ২৬.১ ডিগ্রিতে। তার পর এ বার। 

লক্ষ লক্ষ পর্যটক একটু আরামের খোঁজে পাহাড়ে ছুটেছেন। সেখানেও এত গরম! কিন্তু কেন?

মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান, অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ব্যাখ্যা, ‘বৃষ্টি হচ্ছে না। আকাশ একেবারে পরিষ্কার। চড়া রোদের ফল এই তাপমাত্রা বৃদ্ধি।’ রোদের ফল ভোগ করতে হচ্ছে বাকি উত্তরবঙ্গকেও। মালদহ, উত্তর-দক্ষিণ দিনাজপুর তো বটেই, শিলিগুড়িতেও চল্লিশের উপর তাপমাত্রা। তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি জলপাইগুড়ি, কোচবিহারেও। 

দক্ষিণবঙ্গেও ফের তাপপ্রবাহের আঁচ। ৪১ ডিগ্রির উপরে পুরুলিয়া, চল্লিশের উপরে বাঁকুড়া। কলকাতা ও লাগোয়া জেলায় অস্বস্তিকর ভ্যাপসা। দিনদুপুরে ঘেমে নাকাল আমজনতা। রাতেও স্বস্তি নেই। একটানা ২৯ ডিগ্রির আশপাশে কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। গুমোট গরমে ঘুম উধাও হওয়ার জোগাড়! একটাই কারণ, পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই। বুধবার ইতিউতি বৃষ্টি বৃষ্টি হয়েছে বটে, তাতে বড়সড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা কম।

সুজলা বাংলায় বৃষ্টি নেই, অথচ মরুরাজ্যে বৃষ্টি হয়েই চলেছে। এ বছর মে মাসে রাজস্থানে যা বৃষ্টি হয়েছে, তা গত ১০৬ বছরে হয়নি। মৌসম ভবনের রিপোর্ট বলছে, এ বার রাজস্থানে গড়ে ৬২.৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। শেষবার এত বৃষ্টি রাজস্থানে হয়েছিল ১৯১৭ সালে। ২৯ মে বিকানেরে ৭২.৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়। একদিনে এত বৃষ্টি এ বারই প্রথম। অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টির ঠেলায়, ভরা গ্রীষ্মে বন্যার মুখেও পড়েছে মরুরাজ্য। শুধু কী রাজস্থান, বৃষ্টি হয়ে চলেছে গুজরাট, দিল্লি, পঞ্জাব, হরিয়ানাতেও। এর সবচেয়ে বড় শিকার সম্ভবত আইপিএল। দু’দিন ফাইনাল, দু’দিনই তাড়া করে বৃষ্টি!

আবহাওয়ার এমন বদলের পিছনে কার হাত?

সঞ্জীববাবুর মন্তব্য, ‘সবই পশ্চিমী ঝঞ্ঝার জন্য। ঝঞ্ঝা এতই শক্তিশালী যে আরব সাগর থেকে বিপুল পরিমাণে জলীয় বাষ্প টানছে। ফলে ঝড়-বৃষ্টিতে বিরাম নেই।’ এমন অনেক ঝঞ্ঝার আশীর্বাদেই এপ্রিল, মে মাসে একাধিক বার বৃষ্টি পেয়েছে বাংলা। এ বার ব্যতিক্রম কেন? সঞ্জীববাবুর ব্যাখ্যা, ‘ঝঞ্ঝার প্রভাব মূলত উত্তর-পশ্চিম ভারতই পাচ্ছে। সাধারণত, এদিকে কোনও নিম্নচাপ অক্ষরেখা তৈরি হলে, তবেই বঙ্গোপসাগর থেকে জলীয় বাষ্প ঢোকে। আমরা বৃষ্টি পাই। এখন তেমন কোনও অক্ষরেখা নেই। সাগর থেকে যেটুকু জলীয় বাষ্প ঢুকছে, তাতে আর্দ্রতা বেড়ে আরও অস্বস্তি বাড়ছে।’

আবহাওয়া দফতরের ইঙ্গিত, ৬-৭ জুন নাগাদ গরম আরও বাড়তে পারে। বর্ষা আসার আগে স্বস্তি দূর অস্ত!