Rajib Banerjee: চাটার্ড ফ্লাইট ধরে পদ্মবন, ফের ঘাসফুল, কেমন কাটল রাজীবের দশ মাস

Rajib Banerjee rejoins TMC: তারিখটা ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। চ্যাটার্ড ফ্লাইটে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক তৃণমূলত্যাগী নেতা। 'শাহি' বিমানে দিল্লির উড়ে যান রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

Rajib Banerjee: চাটার্ড ফ্লাইট ধরে পদ্মবন, ফের ঘাসফুল, কেমন কাটল রাজীবের দশ মাস
আবার তৃণমূলে ফিরলেন রাজীব। অলংকরণ: অভীক দেবনাথ
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 31, 2021 | 5:27 PM

কলকাতা: তারিখটা ছিল ২০২১ সালের ৩০ জুন। চাটার্ড ফ্লাইটে দিল্লি উড়ে গিয়েছিলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একঝাঁক তৃণমূলত্যাগী নেতা। ‘শাহি’ বিমানে দিল্লির উড়ে যান রাজ্যের প্রাক্তন বনমন্ত্রী রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর সঙ্গী ছিলেন উত্তরপাড়ার তৎকালীন বিধায়ক প্রবীর ঘোষাল, বালির তৎকালীন বিধায়ক বৈশালী ডালমিয়া, হাওড়ার প্রাক্তন মেয়র রথীন চক্রবর্তী ও অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ।

রাজধানীতে গিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করবেন রাজীববাবু। তারপর আবার ডুমুরজলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সভায় গেরুয়া পতাকা তুলে নেন রাজীব। সেই রাজীব ঘরওয়াপসি করলেন রবিবার। এবার ত্রিপুরায় গিয়ে অভিষেকের সভায় তৃণমূলের পতাকা তুলে নিলেন তিনি। তবে রাজীবের দলবদলের ইঙ্গিত তৈরি হয়েছিল প্রায় দশ মাস আগে। ফিরে দেখা যাক একটু।

রাজীবের পদ্ম-যোগের আগের কথা:

একুশের ভোটের তখনও বাকি। পালা করে বাংলায় আসছেন কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতারা। আর তৃণমূলে চওড়া হচ্ছে ‘দলে থেকে কাজ করতে পারছি না’ পর্ব। শুভেন্দু অধিকারীর দলবদলের জল্পনার মাঝে জায়গায় জায়গায় পড়ছে ‘দাদার অনুগামীদের’ পোস্টার। এদিকে তৃণমূলের আর এক হেভিওয়েট নেতা তখন দল ও মন্ত্রিসভার একের পর এক বৈঠকে অনুপস্থিত। প্রশ্ন উঠছিল, কিন্তু বারবার তা এড়িয়ে যাচ্ছিলেন ডোমজুড়ের তৃণমূল বিধায়ক। তার পর তাঁর পড়ল তাঁর অনুগামীদেরও পোস্টার। তার পর ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাস। ফেসবুক লাইভ এসে প্রথমবার দলবদলের ইঙ্গিত দিলেন রাজীব।

২০২১ সালের জানুয়ারি মাস। সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলে। অগত্যা মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ। কিন্তু একি? ইস্তফা দিয়ে সাংবাদিকদের দিকে এগিয়ে আসছেন রাজীব। হাতে যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরই ছবি। জিজ্ঞাসা করতেই কেঁদে ফেললেন। বললেন, আজীবন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর কাছে ‘মাদার ফিগার’ হয়েই থাকবেন। তাই ছবিটা নিয়ে যাচ্ছেন। বন্দ্য়োপাধ্য়ায়তকে ‘মা’ বলেছিলেন। প্রকাশ্য়েই কান্নায় ভেঙে পড়ে তাঁর প্রতি ক্ষোভ, অভিমান উগরে মন্ত্রিত্ব ছেড়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, ‘এমন কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে ভাবিনি।’

রাজীব এলেন পদ্মে, নিশানায় মমতা:

কাট- টু বিজেপি যোগ পর্ব। এবার মমতাকেই নিশানা করে একের পর এক সভা থেকে আক্রমণ শানাচ্ছেন রাজীব। কখনও বলেছেন, গত পাঁচ বছর ধরে শুধু কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করেছেন ‘উনি’। এমনই এক সভায় বলেন, “ছোটবেলায় বামপন্থীদের মুখে শুনতাম কেন্দ্র খারাপ। ঠিক সে পথেই হেঁটেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, কেন্দ্র এটা করেনি, ওটা করেনি…। কেন্দ্রের সঙ্গে এত ঝগড়া করে কী হবে?” অভিযোগ করেন ঝগড়া করে কেন্দ্রের সাহায্য না নিয়ে বাংলাকে বঞ্চিত করেছেন মমতা। একগুচ্ছ প্রকল্প মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র কেন্দ্রের সঙ্গে ঝগড়া করে তা বাংলাতে নিয়ে আসতে দেননি।

তার পর কখনও বলেছেন পিসি হয়ে সর্বনাশ করেছেন, কখনও বা অভিষেককে নিশানা করে বলেছেন, তৃণমূল কংগ্রেসের বড় বড় নেতারা মাত্র ৫০ কিলোমিটার দূরত্ব যেতেই হেলিকপ্টার ব্যবহার করেন। এই সূত্রে ‘গরীব’ দল তৃণমূলের প্রতি তাঁর কটাক্ষ ছিল, “এত হেলিকপ্টারের টাকা আসছে কোথা থেকে?”

সেই রাজীবকে আক্রমণ করেছেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রীও। হাওড়ায় নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে সোজাসাপটা জানিয়ে বলেন, “ডোমজুড়ের কাছে ক্ষমা চাইছি। কারণ, গত বছর এখানে গদ্দারকে প্রার্থী করেছিলাম। গদ্দার জনগণের টাকা মেরেছেন। আমায় বলেছিল, ওকে ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট দেওয়া হোক। যাতে আরও কমিশন নিতে পারে। সেচ দফতরে দুর্নীতি করে অনেক টাকা করেছে। অভিযোগ আসায় ওকে সেচ দফতর থেকে সরিয়ে দিই। পরে বন দফতর দিই। বুঝতে পারিনি তার ভিতরে এত প্যাঁচ রয়েছে। কলকাতায়, দুবাইয়ে অনেক সম্পত্তি করেছে। যাও মানুষকে জবাব দাও। তারপর ভোট চাও। আগে জানলে ওকে অনেক আগেই সরিয়ে দিতাম। এখন আবার গানের ক্যাসেট বের করছে… সবই নাকি উনি করেছেন! তাহলে তো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রয়োজন ছিল না। উনি একটা হরিদাস মন্ত্রী।” তার প্রতিক্রিয়ায় রাজীব আবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন অনেক টেক্সট মেসেজ আছে তাঁর কাছে। কে দুর্নীতিগ্রস্ত তা প্রমাণ করে দেবেন।

একুশের ভোটের ফলাফল শেষে…:

তবে ভোটের ফলাফল মিটতেই বদলে গেল চিত্রটা। একের পর এক দলবদলুরা ঘরওয়াপসি করছেন। তৃণমূল নেত্রী অবশ্য আভাস দিয়েছেন আগেই- ‘আসুক না। কে বারণ করেছে? এলে স্বাগত!’ মমতার এই ঘোষণার পরই দুই বিজেপি নেতা মুকুল রায় ও রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Rajib Banerjee) ফের তৃণমূলে প্রত্যাবর্তনের জল্পনা জোরাল হয়।

এদিকে ফের সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টে একটি পোস্ট করেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ যে পোস্টের শিরোনাম, ‘সমালোচনা তো অনেক হল’ ৷ পোস্টের বক্তব্য, তৃণমূল কংগ্রেস বিপুল জনসমর্থন নিয়ে ভোটে জিতেছে ৷ মানুষের আস্থা নিয়ে তৃতীয়বার মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘কথায় কথায় দিল্লি আর ৩৫৬ ধারার জুজু’ দেখালে বাংলার মানুষ তা ভালোভাবে মেনে নেবেন না ৷ সরাসরি শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশে কটাক্ষ। তার পর জল্পনা ছিলই। অবশেষে প্রায় দশ মাস পর আবার ‘মাদার ফিগার’-এর কাছেই ফিরে এলেন রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়।

আরও পড়ুন: Rajib Banerjee Joins TMC: উঠতে-বসতে ‘ভাইপো’ বলে কটাক্ষ করা রাজীব আজ বললেন, ‘অভিষেক আমার নেতা’