Calcutta High Court: ১২ বছরের নাবালিকার গর্ভে ২৮ সপ্তাহের যমজ ভ্রূণ, কেন ‘গর্ভপাতের’ অনুমতি দিল না হাইকোর্ট?

High Court: নিয়ম অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করানো যায়। কিন্তু তারপর গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হয়।

Calcutta High Court: ১২ বছরের নাবালিকার গর্ভে ২৮ সপ্তাহের যমজ ভ্রূণ, কেন ‘গর্ভপাতের’ অনুমতি দিল না হাইকোর্ট?
প্রতীকী ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 07, 2023 | 5:15 PM

কলকাতা: ১২ বছর বয়সি অন্তঃসত্ত্বা নাবালিকার গর্ভে ২৮ সপ্তাহের যমজ ভ্রূণ। পরিবারের অভিযোগ, নাবালিকাকে ধর্ষণ করা হয়েছিল এবং সেই কারণেই ওই নাবালিকা গর্ভবতী হয়ে পড়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, গর্ভাবস্থায় ২৪ সপ্তাহ পর্যন্ত গর্ভপাত করানো যায়। কিন্তু তারপর গর্ভপাত করাতে হলে আদালতের অনুমতি প্রয়োজন হয়। সেই মতো কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) সার্কিট বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়েছিল নাবালিকার মা। আবেদন জানিয়েছিলেন, যাতে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়া হয়। কিন্তু সেই আবেদনে সাড়া দিল না আদালত। মেডিকেল বোর্ডের আশঙ্কা, গর্ভপাত করানো হলে নাবালিকার প্রাণহানি হতে পারে। সেই কারণে, গর্ভপাতের আবেদনে ফিরিয়ে দিল হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ। তবে অতীতে এর থেকে বেশি সময়ের গর্ভাবস্থাতেও আদালত থেকে গর্ভপাতের অনুমতি দেওয়ার নজির রয়েছে।

ঘটনা ১: গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের কথা। গর্ভপাতের আবেদন নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন এক দম্পতি। চিকিৎসকরা জানিয়েছিলেন, গর্ভস্থ শিশু সুস্থ ছিল না। ভ্রূণের মেরুদণ্ডের গঠন ঠিক ছিল না এবং সেই কারণে ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর শিশুর স্বাভাবিক জীবন যাপন করার সম্ভাবনা ক্ষীণ। সেই ঘটনায় দম্পতির আবেদনের ভিত্তিতে গর্ভধারণের ৩৫ সপ্তাহ পর গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল হাইকোর্ট।

ঘটনা ২: গতবছরের শেষের দিকে ডিসেম্বর মাসে দিল্লি হাইকোর্টেও এই গর্ভপাত সংক্রান্ত একটি মামলা উঠেছিল। সেক্ষেত্রে ২৬ বছর বয়সি এক অন্তঃসত্ত্বা যুবতীর গর্ভাবস্থার ৩৩ সপ্তাহে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট। শারীরিক পরীক্ষার সময়ে জানা গিয়েছিল, গর্ভস্থ ভ্রূণের মস্তিষ্কের কার্যকলাপ স্বাভাবিক নয়। কিন্তু সেই মামলায় বিচারপতি এও প্রশ্ন তুলেছিলেন, যে সমাজে শুধু কি সুস্থ শিশুরাই থাকবে? বিষয়টি নিয়ে বেশ উদ্বেগও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।

ঘটনা ৩: চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের কথা। এটিও দিল্লি হাইকোর্ট। এক্ষেত্রেও শারীরিক নির্যাতনের শিকার এক নাবালিকা অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছিল। আদালতের কাছে নাবালিকার আবেদন ছিল, সে স্কুলে যেতে চায় এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে চায়। গর্ভাবস্থার ২৫ সপ্তাহে তাকে গর্ভপাতের অনুমতি দিয়েছিল দিল্লি হাইকোর্ট।

তবে এক্ষেত্রে ১২ বছরের নাবালিকার গর্ভে যমজ ভ্রূণ। গর্ভাবস্থারও ২৮ সপ্তাহ হয়ে গিয়েছে। এমন অবস্থায় গর্ভপাত করানো ঠিক হবে কি না, তা জানতে মেডিক্যাল বোর্ডকে গোটা বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বলেছিলেন হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চের বিচারপতি। জোনাল মেডিক্যাল বোর্ডের তরফে রিপোর্টে জানানো হয়েছে, নাবালিকা ২৮ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা। যজম ভ্রুণ দুটিও ঠিকঠাক রয়েছে এবং কোনও জন্মগত বিকৃতি নেই। ১২ বছর বয়সেই গর্ভবতী হয়ে পড়া ছাড়া আর কোনও গর্ভাবস্থা সংক্রান্ত জটিলতাও নেই।

কী আশঙ্কা করছে মেডিক্যাল বোর্ড? কেন গর্ভপাতে আপত্তি চিকিৎসকদের?

মেডিক্যাল বোর্ড বলেছে, এই বয়সে গর্ভবতী ওই নাবালিকার গর্ভপাত করাতে গেলে ব্যাপক রক্তক্ষরণ, সংক্রমণের ঝুঁকি থাকতে পারে। সেপসিস হতে পারে। সার্জারি কিংবা অ্যানেস্থেসিয়ার সময়েও ঝুঁকি রয়েছে। এমনকী এই বয়সে গর্ভপাত করাতে গেলে গর্ভবতী মায়ের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। সেক্ষেত্রে যদি দুই সন্তানের জন্ম দেওয়া হয়, তাহলে এতটা ঝুঁকি থাকে না বলে মত দিয়েছিল মেডিক্যাল বোর্ড। সেই কারণে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ নাবালিকার জীবনকে সবথেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেছে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ওই গর্ভপাতের অনুমতি দেয়নি।

এসএসকেএম হাসপাতালে স্ত্রী রোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক সুভাষ বিশ্বাস বলছেন, এই ধরনের ক্ষেত্রে ২৪ সপ্তাহের পর গর্ভপাত করাতে হলে, আদালত একটি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করে এবং সেই বোর্ড তাদের পর্যবেক্ষণ জানায়। সেক্ষেত্রে মেডিক্যাল বোর্ড যদি বলে থাকে সেটি ঠিক হবে না, তাহলে সবদিক বিবেচনা করেই বলেছে। কারণ, সবার আগে মায়ের জীবন বাঁচানো দরকার।