Roddur Roy: মহিলাদের উদ্দেশ্যে কুমন্তব্য, বিদ্বেষ, ষড়যন্ত্র… আর কী কী ধারা দেওয়া হল রোদ্দুরের বিরুদ্ধে?
Roddur Roy: ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩ (এ), ১২০ (বি), ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ৫০১, ৫০৫ এবং ৫০৯ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে। আগামিকাল (বুধবার) তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।
কলকাতা : কিছুদিন আগেই রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ভাইপো তথা তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কুরুচিকর মন্তব্য করেছিলেন রোদ্দুর রায় (Roddur Roy)। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছিল চারিদিকে। এই নিয়ে হেয়ার স্ট্রিট থানায় অভিযোগও দায়ের হয়েছিল। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই মঙ্গলবার গোয়া থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। মোট নয়টি ধারায় মামলা রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩, ১৫৩ (এ), ১২০ (বি), ৪৬৫, ৪৬৭, ৪৬৮, ৫০১, ৫০৫ এবং ৫০৯ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে রোদ্দুর রায়ের বিরুদ্ধে। আগামিকাল (বুধবার) তাঁকে কলকাতায় নিয়ে আসা হবে।
এক নজরে দেখা যাক রোদ্দুরের বিরুদ্ধে রুজু করা মামলাগুলি –
(ক) ১৫৩ ধারা – হিংসা ছড়াতে ইচ্ছাকৃতভাবে উস্কানি দেওয়া। এক্ষেত্রে যদি হিংসা ছড়ায় বা যদি না ছড়ায়, উভয়ক্ষেত্রেই এই ধারার আওতায় পড়ে। ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনও ব্যক্তি অসৎ উপায়ে, ইচ্ছাকৃতভাবে বেআইনি এমন কিছু করে – বা জেনে বুঝে এমন কোনও কিছুতে উস্কানি দেয়, যেটি হিংসা ছড়াতে পারে, সে ক্ষেত্রে যে কোনও একটি প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। যদি এ ক্ষেত্রে হিংসা না ছড়িয়ে থাকে, তাহলে সর্বোচ্চ ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এটি একটি জামিনযোগ্য ধারা।
(খ) ১৫৩ এ ধারা – ধর্ম, জাতি, জন্মস্থান, বাসস্থান, ভাষা ইত্যাদির ভিত্তিতে বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে বিদ্বেষের বাতাবরণ তৈরি করা এবং সামাজিক সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর, এমন কোনও কাজ করা। এ ক্ষেত্রে লিখিত বা মৌখিকভাবে অথবা কোনও আকার-ইঙ্গিতের মাধ্যমে, কিংবা দর্শনীয়ভাবে উপস্থাপন করা বা অন্য যে কোনও উপায়ে এমন কিছু করলেই তা এই ধারার আওতায় পড়বে। এমন কোনও কাজের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধর্মীয়, জাতিগত, ভাষা বা আঞ্চলিক গোষ্ঠী কিংবা বর্ণ বা সম্প্রদায়ের মধ্যে সম্প্রীতির জন্য ক্ষতিকর কিংবা জনসাধারণের শান্তি বিঘ্নিত করে বা বিঘ্নিত করতে পারে বলে মনে হয়, তাহলে তা এই ধারার আওতায় পড়ে। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা।
(গ) ১২০ বি ধারা – অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র। এক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত হলে, অপরাধের প্রকারভেদ অনুযায়ী দোষী সাব্যস্ত হওয়া ব্যক্তির দুই বছর বা তার বেশি মেয়াদের জন্য সশ্রম কারাদণ্ড থেকে শুরু করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এমনকী মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত রয়েছে। তবে এই ধারায় কোনও স্পষ্ট বিধান করা হয়নি। তবে কী ধরনের অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তার ক্ষেত্র বিশেষে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড বা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে।
(ঘ) ৪৬৫ ধারা – ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৬৫ ধারায় জালিয়াতির অভিযোগে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে, তার সাজার কথা উল্লেখ রয়েছে৷ কেউ এই ধারায় দোষী সাব্যস্ত হলে, তাকে সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে। এটি একটি জামিনযোগ্য ধারা।
(ঙ) ৪৬৭ ধারা – মূল্যবান কোনও সম্পত্তি, নথি, ইত্যাদির জালিয়াতি। এ ক্ষেত্রে কোনও নথির জালিয়াতি যা একটি মূল্যবান সম্পত্তি বা উইল, বা কাউকে দত্তক নেওয়ার ক্ষমতা, অথবা কোনও মূল্যবান সম্পত্তি হস্তান্তর করার জন্য কোনও ব্যক্তিকে কর্তৃত্ব দেওয়ার অভিপ্রায়ে বা অন্য কোনও কারণে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলে যাবজ্জীবন কারা দণ্ড অথবা দশ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা।
(চ) ৪৬৮ ধারা – প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি। যদি কোনও ব্যক্তি প্রতারণার জন্য ব্যবহার করতে কোনও নথির জাল করে, সে ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে তার সর্বোচ্চ সাত বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড এবং জরিমানা হতে পারে। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা।
(ছ) ৫০১ ধারা – মানহানিকর বলে জানা কোনও বিষয় লেখা বা ছাপানো। যদি কোনও ব্যক্তি বিষয়টি অপর কারও জন্য মানহানিকর হতে পারে বলে ধরে নেওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে জেনেও এমন কোনও কথা লেখে বা ছাপায়, সেক্ষেত্রে দোষী সাব্যস্ত হলে তার সর্বোচ্চ দুই বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড অথবা জরিমানা অথবা উভয়ই হতে পারে। এটি একটি জামিনযোগ্য ধারা।
(জ) ৫০৫ ধারা – সাধারণ মানুষের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে এমন কোনও বক্তব্য। যদি কেউ কোনও বিবৃতি, গুজব বা প্রতিবেদন তৈরি, প্রকাশ বা প্রচার করে যা কোন অফিসার বা জওয়ানকে বিদ্রোহী করে তুলতে পারে বা তাঁর কর্তব্য পালনে ব্যর্থ করতে পারে, সেক্ষেত্রে তা প্রমাণিত হলে ওই বক্তব্যের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে এই ধারার আওতায় দোষী সাব্যস্ত করা যায়। এটি একটি জামিন অযোগ্য ধারা।
(ঝ) ৫০৯ ধারা – কোনও মহিলার শালীনতার জন্য অবমাননাকর উদ্দেশ্যে কোনও শব্দ, অঙ্গভঙ্গি বা সমতুল্য কোনও কাজ। যে ব্যক্তি কোনও মহিলার শালীনতাকে অবমাননা করার উদ্দেশ্যে কোনও মন্তব্য করে, কোনও শব্দ বা অঙ্গভঙ্গি করে বা কোনও বস্তু প্রদর্শন করে… তাহলে এই ধরনের কাজ মহিলার গোপনীয়তার উপর অনুপ্রবেশ বলে বিবেচিত হবে। এক্ষেত্রে এক বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড কিংবা জরিমানা বা উভয়ই হতে পারে। এটি জামিনযোগ্য ধারা।