AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ: ৯০-এ পা রাখলেন শঙ্খ ঘোষ

"তোমার জন্মদিনে কী আর দেব এই কথাটুকু ছাড়া আবার আমাদের দেখা হবে কখনও।"

পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ: ৯০-এ পা রাখলেন শঙ্খ ঘোষ
৯০-এ পা রাখলেন শঙ্খ ঘোষ।
| Edited By: | Updated on: Feb 06, 2021 | 5:40 PM
Share

অরুণাভ রাহারায়: “কবির বয়স বাড়ে না। জগত তাঁর কাছে নতুন থাকে, তিনি সব সময় পৃথিবীকে নতুন করে দেখান। শিশুর চোখে এই দুনিয়া যেমন সদ্যজাত, কবির চোখ দিয়ে দেখলে পৃথিবীকে তেমনই নতুন লাগে। …শঙ্খর কথা আজ তাঁর পঞ্চাশ বছেরের জন্মদিনে যখন ভাবি তখন তো শুধু কবি শঙ্খ ঘোষের কথাই ভাবি না, ভাবি আমার সমান বয়সী ত্রিশ বছরের বন্ধুর কথা।”

শঙ্খ ঘোষের পঞ্চাশ বছরের জন্মদিন উপলক্ষে ওপরের কথাগুলি লিখেছিলেন বিশিষ্ট প্রাবন্ধিক তথা তাঁর অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু অশ্রুকুমার সিকদার। লেখাটির শিরোনাম ‘শঙ্খকে, জন্মদিনে’। অনেক বছর বাদে সম্পূর্ণ লেখাটি যখন পড়ছি নিবিড়ে চিনতে পারছি কবি ও ব্যক্তি শঙ্খ ঘোষকে। আজ ৯০ বছরে পা রাখলেন তিনি। অশ্রু বাবুর লেখাটি ছোটবেলায় পড়েছিলাম। তখন মন গঠনের সময়। শঙ্খ ঘোষের কবিতা মনে দাগ কেটেছিল গভীর ভাবে। পরে যখন কলকাতায় এলাম প্রতি রবিবার হাডকোয় স্যারের আবাসন হয়ে উঠল আমাদের অবারিত দ্বার। রবিবারের আড্ডায় কবিকে কাছ থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছি। অবশ্য প্রথমবার গিয়েছিলাম ২০১০ সালে, এক সন্ধেবেলায়। দেবীপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পাদিত ‘পাতাহরপ’ পত্রিকায় জন্য লেখা নিতে, সেই পত্রিকার প্রকাশকের সঙ্গে। সাদা পাতায় লিখেদিয়েছিলেন এক মায়াবি ছড়া। লেখার গুণেই আজও তা মনে আছে:

সন্ধি

এক্ষুনি না দৌড়ে এলে শ্রবণা কক্ষনো আর বইপত্তর ছোঁব না। হঠাৎ হঠাৎ কেনই-যে ও আড়ি দেয় তারপরে কোন ভিন্ন পাড়ায় পাড়ি দেয় সে সব কথার কিচ্ছুটি তো জানি নি থাকছি শুধু একলা বসে মানিনী মন্দ কিছু বলেছিলাম কুক্ষণেই তাই বলে কি আমার মনেও দুঃখ নেই? এই কথাটা একটুও কি ভাববি না? এসব কিন্তু সত্যি ব্যথা কাব্যি না। কষ্ট দিয়ে হয়েছি তো ঢের বেকুব তাও যদি না আসিস, এবার মারব খুব।

ধীরে ধীরে আমিও একদিন হয়ে উঠলাম রবিবারের আড্ডার নির্ভুল সদস্য। সারাটা ঘরে বই আর বই। মধ্যে একটা বেতের চেয়ারে বসে আছেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সকাল ১০টা থেকে একে একে আড্ডায় আসতেন সন্দীপন চক্রবর্তী, তাপস চক্রবর্তী, ইমানুল হক, একরাম আলি, সব্যসাচী দেব, শিখাদি, প্রদীপদা এবং আরও অনেকে। ঠিক হল একটা পিকনিকের আয়োজন হবে। হলও তাই। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে আমরা সবাই মিলে গেলাম খড়দার শ্যামের ঘাটে একটা সুবিশাল বাড়িতে। সাদা বাসে চড়ে আমাদের সঙ্গে পিকনিকে চললেন কবি শঙ্খ ঘোষ। দৃশ্যটি ভাবলে এখনও রোমাঞ্চ হয়। মনে ছিল প্রবল আনন্দ। পিকনিকে এসে গান গাইলেন স্যারের এক প্রাক্তন ছাত্রী। সঙ্গে ছিলেন প্রতিমা ম্যাম এবং স্যাররে দুই মেয়ে। গিয়েছিলেন বাদল বসু। যে বিরাট বারান্দায় বসে আমরা আড্ডা দিচ্ছিলাম সে দিন, মুহূর্তে তা হয়ে উঠল আমাদের ‘ছন্দের বারান্দা’।

যখন স্কুলে পড়ি, মাধ্যমিকের জন্য ইনপর্টেন্ট ছিল ‘বিজ্ঞাপন’ রচনা। তখনই পড়েছিলাম ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’। এ শহরের রাস্তায় চলার সময় কবিতাটির ধক টের পাই এখনও। অথচ কি আশ্চর্য প্রেমের কবিতা:

একলা হয়ে দাঁড়িয়ে আছি তোমার জন্যে গলির কোণে ভাবি আমার মুখ দেখাব মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে।

একটা দুটো সহজ কথা বলব ভাবি চোখের আড়ে জৌলুশে তা ঝলসে ওঠে বিজ্ঞাপনে, রংবাহারে।

কে কাকে ঠিক কেমন দেখে বুঝতে পারা শক্ত খুবই হা রে আমার বাড়িয়ে বলা হা রে আমার জন্মভূমি!

বিকিয়ে গেছে চোখের চাওয়া তোমার সঙ্গে ওতপ্রোত নিওন আলোয় পণ্য হল যা-কিছু আজ ব্যক্তিগত।

মুখের কথা একলা হয়ে রইল পড়ে গলির কোণে ক্লান্ত আমার মুখোশ শুধু ঝুলতে থাকে বিজ্ঞাপনে।

২০০৭ সালের ১৪ মার্চ গুলি চলল নন্দীগ্রামে। শঙ্খ ঘোষ তখন বেড়াতে গিয়েছেন দার্জিলিঙে। শিলিগুড়িতে ফিরে হাতে তুলে নিলেন কলম। লিখলেন অমোঘ উচ্চারণ– ‘আমি তো আমার শপথ রেখেছি অক্ষরে অক্ষরে, যারা প্রতিবাদি তাদের জীবন দিয়েছি নরক করে’। দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ল লাইনগুলি। একটি সাক্ষাৎকারে পড়েছি কবিতাটি লেখা হয়েছিল অশ্রুকুমার সিকদারের বাড়িতে বসে। এরপর বহু আন্দোলনে শঙ্খ ঘোষের এই কবিতাকে মিছিলের মুখ হয়ে উঠতে দেখেছি।

একবার কলেজ স্ট্রিটে কবির সঙ্গে হঠাৎ দেখার স্মৃতি মনে পড়ছে। বাটার কাছ দিয়ে হাঁটছি এক সকালবেলায়। আমার মুখোমুখি গাড়ি থেকে নামলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সাদা ধুতি ও পাঞ্জাবিতে উলটো দিক দিয়ে হেঁটে আসছেন তিনি। আমি পুঁটিরামে রাধাবল্লভি খেয়ে মেসে ফিরছিলাম। এ কথা বললামও স্যারকে। তিনি মৃদু হেসে ঢুকে পড়লেন বইপাড়ায়। তখন তাঁকে নানা অনুষ্ঠানে নিয়মিত দেখি। একবার কবি সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের জন্মদিনে পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমি আয়োজিত এক বিশেষ অনুষ্ঠানে কবিতা পড়েছিলেন শঙ্খ ঘোষ। তাঁর কণ্ঠে সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা আলাদা মাত্রা যোগ করেছিল। শুরুতেই তিনি বলেছিলেন, “আজ ১২ ফেব্রুয়ারি। কাশিতে যদি গলা আটকে না-যায় তাহলে ১২টি কবিতাই পড়ব। ‘মশা’, ‘আশ্চর্য’, ‘যাচ্ছি’-সহ ১২ খানা কবিতা পড়েছিলেন তিনি। আমরা দু’চোখ ভরে তার আস্বাদ নিয়েছিলাম।

লিখতে গেলে কতই স্মৃতি মনে পড়ে! নভেম্বর ২০১৫-য় ‘এবং মুশায়েরা’ থেকে কবি রাহুল পুরকায়স্থর সম্পাদনায় প্রকাশ পায় ভুমেন্দ্র গুহর ‘কবিতা সমগ্র’। রাহুলদার সৌজন্যে বইটি সম্পাদনার সঙ্গে আমিও কিছুটা জড়িয়ে পড়েছিলাম। বই প্রকাশের পর উদ্বোধনের দিন ঠিক হল। রথতলায় রাহুলদার বাসভবনে ভুমেন্দ্র গুহর কবিতা সমগ্র উদ্বোধন করতে এলেন কবি শঙ্খ ঘোষ। সেদিনের বৈঠক ছিল বহুক্ষণের। যা আমি আজীবন ভুলতে পারব না। এসেছিলেন কবি রণজিৎ দাশ, হিরণ মিত্র, প্রশান্ত মাজি এবং আরও অনেকে। সন্ধেবেলায় ঘণ্টা খানিক অনুষ্ঠানের পর আড্ডা গড়াল রাত ১০টা অব্দি। শঙ্খ বাবু সরাটা সময় আমাদের সঙ্গে ছিলেন কিংবা আমরা সবাই তাঁর সঙ্গে তুমুল সময় উদযাপন করেছিলাম।

আজ কবি শঙ্খ ঘোষের জন্মদিনে তাঁরই কবিতা দিয়ে এ লেখা শেষ করলাম:

তোমার জন্মদিনে কী আর দেব এই কথাটুকু ছাড়া আবার আমাদের দেখা হবে কখনও

দেখা হবে তুলসীতলায় দেখা হবে বাঁশের সাঁকোয় দেখা হবে সুপুরি বনের কিনারে

আমরা ঘুরে বেড়াব শহরের ভাঙা অ্যাসফল্টে অ্যাসফল্টে গনগনে দুপুরে কিংবা অবিশ্বাসের রাতে

কিন্তু আমাদের ঘিরে থাকবে অদৃশ্য কত সুতনুকা হাওয়া ওই তুলসী কিংবা সাঁকোর কিংবা সুপুরির

হাত তুলে নিয়ে বলব, এই তো, এইরকমই, শুধু দু-একটা ব্যথা বাকি রয়ে গেল আজও

যাবার সময় হলে চোখের চাওয়ায় ভিজিয়ে নেবে চোখ বুকের ওপর ছুঁয়ে যাবে আঙুলের একটি পালক

যেন আমাদের সামনে কোথাও কোনেও অপঘাত নেই আর মৃত্যু নেই দিগন্ত অবধি

তোমার জন্মদিনে কী আর দেবে শুধু এই কথাটুকু ছাড়া যে কাল থেকে রোজই আমার জন্মদিন।

বড়দিনের আগের রাতে গির্জায় প্রার্থনাসভায় যোগ দিলেন মমতা
বড়দিনের আগের রাতে গির্জায় প্রার্থনাসভায় যোগ দিলেন মমতা
এবার বাংলাদেশে তৈরি হবে বিপ্লবী সরকার? ঢাকায় গুঞ্জন
এবার বাংলাদেশে তৈরি হবে বিপ্লবী সরকার? ঢাকায় গুঞ্জন
'ব্রাহ্মণের মেয়েকে' সরিয়ে বালিগঞ্জে নতুন মুখ আনলেন হুমায়ুন
'ব্রাহ্মণের মেয়েকে' সরিয়ে বালিগঞ্জে নতুন মুখ আনলেন হুমায়ুন
শুনানিতে যেতে না পারলে কী হবে? অকূলপাথারে বর্ধমানের মুখোপাধ্যায় পরিবার
শুনানিতে যেতে না পারলে কী হবে? অকূলপাথারে বর্ধমানের মুখোপাধ্যায় পরিবার
'এরা বাংলাকে বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে...', তৃণমূলকে তোপ মিঠুনের
'এরা বাংলাকে বাংলাদেশ তৈরি করতে চাইছে...', তৃণমূলকে তোপ মিঠুনের
তৃণমূলকে এনেছিলাম, এবার বিজেপিকে আনব: শুভেন্দু
তৃণমূলকে এনেছিলাম, এবার বিজেপিকে আনব: শুভেন্দু
'বাবরি পাহারা দিচ্ছে পুলিশ...', বাংলা নিয়ে তোপ BJP নেতার
'বাবরি পাহারা দিচ্ছে পুলিশ...', বাংলা নিয়ে তোপ BJP নেতার
কারা হচ্ছেন মাইক্রো অবজার্ভার, উদ্দেশ্য কী?
কারা হচ্ছেন মাইক্রো অবজার্ভার, উদ্দেশ্য কী?
মদ্যপান, ছোট পোশাকে নাচ নাকি ব্রাহ্মণের মেয়ে বলে বাদ পড়লেন নিশা?
মদ্যপান, ছোট পোশাকে নাচ নাকি ব্রাহ্মণের মেয়ে বলে বাদ পড়লেন নিশা?
মেয়ে হারিয়েছেন, হাঁসখালিকাণ্ডে সাজা শুনে কী বললেন নির্যাতিতার মা?
মেয়ে হারিয়েছেন, হাঁসখালিকাণ্ডে সাজা শুনে কী বললেন নির্যাতিতার মা?