Durga Puja 2022: কেমন ছিল ‘বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসব’? ইতিহাস তুলে ধরলেন সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বংশধর

Durga Puja 2022: ১৬০০ সাল থেকেই হালিশহরে দোলমঞ্চের পশ্চিম দিকে একটি আটচালা নির্মাণ করে সেখানেই সপরিবার দুর্গার পুজো শুরু করেছিল এই পরিবার। তারপর সেই পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৬১০ সাল থেকে বড়িশার কাছারিবাড়িতে আটচালার চণ্ডীমণ্ডপ নির্মাণ করে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়।

Durga Puja 2022: কেমন ছিল 'বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসব'? ইতিহাস তুলে ধরলেন সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বংশধর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 01, 2022 | 12:00 AM

কলকাতা: তিনি জমিদার বাড়ির বংশধর। সেই জমিদার বাড়ি, যারা কলকাতায় (Kolkata) প্রথম দুর্গাপুজো (Durga Puja) করেন। ঐতিহাসিকরা তেমন তথ্যই পেয়েছেন। সেই সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের বংশধরের কলমে এবার বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসবের (Kolkata Durga Puja) কথা। কলম নয়, বলা ভাল ল্যাপটপে। সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের ৩৬তম প্রজন্ম হলেন শুভদীপ রায় চৌধুরী। আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক। তিনি তুলে ধরেছেন বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসবের কথা। স্বাভাবিক ভাবেই তাতে জায়গা পেয়েছে তাঁর পরিবারের দুর্গাপুজোর কথা।

সূত্রানুসারে, ১৬০০ সাল থেকেই হালিশহরে দোলমঞ্চের পশ্চিম দিকে একটি আটচালা নির্মাণ করে সেখানেই সপরিবার দুর্গার পুজো শুরু করেছিল এই পরিবার। তারপর সেই পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ১৬১০ সাল থেকে বড়িশার কাছারিবাড়িতে আটচালার চণ্ডীমণ্ডপ নির্মাণ করে দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন লক্ষ্মীকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়। তৎকালীন সময়ে বড়িশা উন্নত জনপদ ছিল এবং গ্রামে উচ্চবর্ণের হিন্দু, নিম্নবর্ণের হিন্দু ও ইসলাম ধর্মাবলম্বী মানুষ মিলেমিশে থাকতেন। তাই মূলত, প্রজাদের মনোরঞ্জনের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের এক সূত্রে বেঁধে দেওয়ার এক অন্যতম দায়িত্ব পালনের জন্য এমন একটি পুজোর যে বিকল্প নেই সে কথা বিলক্ষণ জানতেন জমিদার লক্ষ্মীকান্ত রায়চৌধুরী।

কিন্তু সাবর্ণ রায় চৌধুরীদের দুর্গাপুজো ছাড়াও বিভিন্ন প্রাচীন উৎসব রয়েছে। পরিবারের সন্তান মহেশচন্দ্র রায় চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত মা চণ্ডী, দুর্গাপুজোর পঞ্চমীর দিনটিকে তাঁর আবির্ভাব তিথি হিসাবে পালন করা হয়। এছাড়া চন্দ্রকান্ত রায় চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত অন্নপূর্ণা মন্দির, সন্তোষ রায় চৌধুরীর প্রতিষ্ঠিত কালীঘাট মন্দির, ময়দা কালীবাড়ি, জমিদার নন্দদুলাল রায় চৌধুরীর করুণাময়ী কালীমন্দির, নিমতা কালীবাড়ি, সিদ্ধেশ্বরী কালী (হালিশহর), রাধাকান্ত মন্দির ইত্যাদি। এই সমস্ত মন্দিরেও পুজোপার্বণ হয় এবং সারা বছর আধ্যাত্মিক এবং সাংস্কৃতিক কাজে মেতে থাকেন জমিদারবাড়ির সদস্যরা। তাই এই বাড়ির ঠাকুরদালানে দাঁড়ালেই মনে হয় যেন ইতিহাস এবং ঐতিহ্য কথা বলছে।

সাবর্ণ রায় চৌধুরী পরিবারের ৩৬তম প্রজন্ম শুভদীপ রায় চৌধুরী কলকাতার সাতটি প্রাচীন বনেদি বাড়ির ইতিহাস এবং পুজোর রীতিনীতি লিপিবদ্ধ করেছেন ‘বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসব’ বইয়ে। হাজারো ইতিহাসের উত্থান-পতনের সাক্ষী এই শহর। রাজনীতির কচকচানিতে যখন বিদ্ধ তিলোত্তমা ঠিক সেই সময় কলকাতার ঐতিহ্য জানান দেয় যে এই শহর প্রায় দুই হাজার বছরেরও প্রাচীন। শহর কলকাতার সমাজের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গিয়েছে উৎসব। আর সেই উৎসবগুলির অন্যতম দুর্গাপুজো। ইতোমধ্যেই দুর্গাপুজো আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু কলকাতার দুর্গাপুজো বললেই যাঁদের নাম সর্বাগ্রে উচ্চারিত হয় তাঁদের পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস নিয়েই কাজ করেছেন গবেষক শুভদীপ রায় চৌধুরী। আর তাঁর এই কাজকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছে কলিখাতা প্রকাশনী। স্কটিশ চার্চ কলেজে স্নাতক এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর পাশের পর একাধিক আঞ্চলিক বিষয় নিয়ে গবেষণা শুরু করেন তিনি। তবে তাঁর সবচেয়ে প্রিয় বিষয় বাঙালির উৎসবের শিকড়কে খুঁজে বের করা। আর সেই কাজে তিনি বছরের পর বছর গবেষণা করে তৈরি করলেন ‘বনেদি কলকাতার দুর্গোৎসব’ বইটি। আপাতদৃষ্টিতে বইটির নাম শুনে শুধুমাত্র দুর্গাপুজোর রীতিনীতি রচিত হয়েছে বলে মনে করলেও বাস্তবিকই এই বইটি এক ঐতিহাসিক দলিল হিসাবে থেকে যাবে। কারণ এই বইয়ে সাতটি পরিবারের প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে এবং একইসঙ্গে দুর্গাপুজো সম্পর্কে ঐতিহাসিক তথ্য রয়েছে। বইটির ভূমিকা লিখেছেন স্তোত্রকার পণ্ডিত অজয় ভট্টাচার্য। 

বইটির প্রথম অধ্যায়ে বাংলা তথা ভারতের দুর্গাপুজোর ইতিহাস রয়েছে। এছাড়া শোভাবাজার রাজবাড়ি, সাবর্ণ রায় চৌধুরী বাড়ি, বাগবাজার হালদার বাড়ি, হাটখোলার দত্ত বাড়ি, কলুটোলার মতিলাল শীল বাড়ি, ভবানীপুর মিত্র বাড়ি এবং সার্দান অ্যাভিনিউের ঘোষরায় বাড়ির ইতিহাস লিপিবদ্ধ রয়েছে এই বইতে। এছাড়া বইটিতে দেবী দুর্গার ধ্যান ও স্তোত্র বর্ণিত রয়েছে। লেখকের আশা, বইটি সাধারণ মানুষ এবং গবেষকদের প্রভূত সাহায্য করবে আরও বিস্তৃত গবেষণার ক্ষেত্রে।

শুভদীপ বলেন, “প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ ড. সৌমিত্র শ্রীমানী, স্কটিশ চার্চ কলেজের সহ-অধ্যক্ষ ড. সুপ্রতিম দাশ এবং নবাব ওয়াজিদ আলি শাহর বংশধর শাহেনশাহ মির্জার আকুণ্ঠ সহযোগিতায় বইটি আরও সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে। এবং সমস্ত কাজটি সম্ভব হয়েছে কলিখাতা প্রকাশনীর সহযোগিতায়।” উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক সন্দীপন মিত্র, রায় চৌধুরী পরিবারের সৌমেন রায় চৌধুরী এবং স্বরাজ রায় চৌধুরী। 

রাজবাড়ির বংশধর রাজাদের লাম্পট্য নিয়ে কি লিখেছেন? মানে লেখা পক্ষপাতদুষ্ট হয়নি? পুজোয় তো সাহেবদের মদ খাওয়ানো, বাঈজি নাচ এসব হত শোনা যায়? এই প্রশ্নের উত্তরে শুভদীপ সোজাসুজি বললেন, “না, রাজবাড়ি তথা বনেদি বাড়ির ইতিহাস লিখতে গিয়ে আমি এমন বহু তথ্য পেয়েছি যার সঙ্গে আমরা যা শুনে থাকি, তা পুরোপুরি সামঞ্জস্য নয়। তবে তৎকালীন সময়ে বাবু কালচার কিংবা বাঈজি নাচের যে আসর বসত সেই উল্লেখও করেছি আমার বইটিতে। শোভাবাজার রাজবাড়িতে কবে শেষ বাঈজি এসেছিলেন তাঁর উল্লেখ রয়েছে। তবে সমস্ত তথ্যটাই যাচাই করে লিখেছি যাতে পাঠক এবং গবেষকরা পরবর্তীকালে এই বই পড়ে আরও নতুন ইতিহাসের উপাদান লাভ করতে পারেন।” রাজপাটের পাট চুকেছে। তবে এই বইয়ের পাতায় পাতায় বেঁচে উঠেছে রাজকাহিনি।