Group C Recruitment Scam: গ্রুপ সি-তে শাসকের নিশানায় শুভেন্দু, দুর্নীতির কথাই কি ঘুরিয়ে কবুল তৃণমূলের?
Kunal Ghosh vs Suvendu Adhikari: এবার নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও পাল্টা দিতে শুরু করেছে তৃণমূল। তাহলে কি তৃণমূল জমানায় এককালে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেই কথাই ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছে তৃণমূল? কুণাল ঘোষের গতকালের দাবির পর থেকে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।
কলকাতা: রাজ্যে শিক্ষাক্ষেত্রে বেনিয়ম ও দুর্নীতির একের পর এক অভিযোগ প্রকাশ্যে আসছে। সম্প্রতি কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে গ্রুপ সি (Group C) পদের ৮৪২ জনের চাকরি বাতিল হয়েছে। তা নিয়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরেও। কারণ, শোনা যাচ্ছে এই তালিকায় রয়েছেন শাসক দলের নেতা-কর্মীদের ঘনিষ্ঠ একাধিক ব্যক্তি। আর এরই মধ্যে তৃণমূল মুখপাত্র তথা শাসক দলের রাজ্য সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) সরাসরি এই ইস্যুতে আক্রমণ করেছেন রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকে (Suvendu Adhikari)। কুণালের দাবি, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, তাঁদের মধ্যে ৫৫ জনের নাকি চাকরি হয়েছিল শুভেন্দুর কথায়। কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা যাতে শুভেন্দুকে তদন্তের আওতায় নিয়ে আসে, সেই দাবিও তুলেছেন তিনি। আর এখানেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, তাহলে কি ঘাসফুল জমানায় নিয়োগে যে বেনিয়ম হয়েছে, সেটাই ঘুরিয়ে কবুল করে নিচ্ছেন কুণাল ঘোষ? এমন প্রশ্ন ইতিমধ্যেই তুলতে শুরু করে দিয়েছেন রাজ্য রাজনীতির কারবারিরা।
ঠিক কী বলেছেন কুণাল?
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ রবিবার দাবি করেন, ‘শুভেন্দু অধিকারীর ব্যবস্থাপনায় ১৫০ জনকে চাকরি দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫৫ জনের চাকরি চলে গিয়েছে। আদালতের রায়ে যাদের চাকরি গিয়েছে, তাদের মধ্যে এমন ৫৫ জন রয়েছেন, যাঁরা শুভেন্দুর ১৫০ জনের তালিকার মধ্যে। অর্থাৎ, তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, শুভেন্দু অধিকারীও এইভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সামিল ছিলেন।’ হাতে একটি তালিকা দেখিয়ে কুণাল আরও বলেন, ‘এই ৫৫ জন, যাঁদের চাকরি গিয়েছে, এরা শুভেন্দু অধিকারীর সুপারিশে চাকরি পেয়েছিলেন। শুভেন্দু এদের চাকরি দিয়েছেন।’ কেবল একটি তালিকাতেই যদি এমন দৃশ্য হয়, তাহলে সামগ্রিক চিত্রটা কী, সেই নিয়েই প্রশ্ন রয়েছে কুণালের মনে।
তাহলে কি দুর্নীতির কথাই ঘুরিয়ে কবুল তৃণমূলের?
নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত যত এগোচ্ছে, তত চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসতে শুরু করেছে। গ্রেফতার হচ্ছেন একের পর এক বড়-ছোট-মাঝারি গোছের নেতা থেকে শুরু করে মিডলম্যানরা। আর যাঁরাই গ্রেফতার হচ্ছেন, তাঁদের থেকে সাবধানী দূরত্ব বজায় রাখছে শাসক শিবির। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা দলের প্রাক্তন মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় হোক বা অন্য কোনও নেতা… সবার ক্ষেত্রেই একই অবস্থান দেখা গিয়েছে ঘাসফুল শিবিরের। এরই মধ্যে আবার সম্প্রতি গ্রুপ সি পদে নিয়ম ভেঙে চাকরি পাওয়া যে কর্মীদের নিয়োগ বাতিল হচ্ছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে এমন একাধিক নাম উঠে আসছে, যাঁরা শাসক দলের কোনও নেতা-কর্মীর ঘনিষ্ঠ।
এদিকে শাসক শিবির থেকে শুরু থেকেই অবস্থান স্পষ্ট। দুর্নীতি বা বেনিয়ম যে হয়নি, এমন কথা তারা বলছে না। তারা বলছে, আদালতের বিচার্য। দোষী প্রমাণিত হলে শাস্তি হবে। তৃণমূল বার বার বোঝানোর চেষ্টা করেছে, কেউ দোষ করলে তার দায় দলের নয়। অর্থাৎ, বেনিয়ম বা দুর্নীতির ইস্যুতে দল যে সংশ্লিষ্ট নেতাদের থেকে দূরত্ব তৈরি করছে, তা বলাই যায়। এরই মধ্যে এবার নিয়োগ দুর্নীতির ইস্যুতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও পাল্টা দিতে শুরু করেছে তৃণমূল। তাহলে কি তৃণমূল জমানায় এককালে যে দুর্নীতি হয়েছে, সেই কথাই ঘুরিয়ে স্বীকার করে নিচ্ছে তৃণমূল? কুণাল ঘোষের গতকালের দাবির পর থেকে এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে শুরু করেছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।
কী বলছেন বিরোধী দলনেতা?
তৃণমূল মুখপাত্রর এই খোঁচায় পাল্টা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীও। তিনি অবশ্য এই অভিযোগকে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ। শুভেন্দু বলছেন, ‘তাঁর (কুণাল ঘোষের) একমাত্র এজেন্ডা হল শুভেন্দু অধিকারীকে বদনাম করা।’ কোনও তথ্য প্রমাণ ছাড়াই এমন দাবি করা হচ্ছে বলে দাবি শুভেন্দু অধিকারী।