ভিডিয়ো: এসএসকেএমে মূক-বধিরদের ‘শব্দ’ দিলেন মানুষের ‘ভগবান’
পরিসংখ্যান বলছে ভারতে প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে ৪ শিশু জন্মগত ভাবে মূক ও বধির হয়ে জন্মায়। যার ফলে দেশে এই সংখ্যাটা অনেক।

কলকাতা: জন্মের পর চেয়েও কথা বলতে পারেনি ওরা। মা-বাবারা অধীর অপেক্ষায় বসে থেকেও শুনতে পারেননি ‘মা’ কিংবা ‘বাবা’ ডাক। কিন্তু সেই অপেক্ষার অবসান। জন্মগত মূক ও বধির শিশুদের কণ্ঠে কথা এনে দিচ্ছে এসএসকেএম, ফের শ্রবণ ক্ষমতা ফিরে পেয়ে স্বাভাবিক ছন্দে ফিরছে ওরা। ‘মা’ ডাক শোনার আশা পূরণ হচ্ছে ৫, ৬, কিংবা ১০ বছর বয়সী প্রত্যুষা, স্বপ্ননিকাদের মায়ের মতো হাজারো মা-বাবার।
পরিসংখ্যান বলছে ভারতে প্রতি ১০০০ জনের মধ্যে ৪ শিশু মূক ও বধির হয়ে জন্মায়। যার ফলে দেশে এই সংখ্যাটা অনেক। কিন্তু মা-বাবারা এগিয়ে আসেন না অস্ত্রোপচারের জন্য। কিন্তু সরকারি স্তরে বিভিন্ন প্রচারের ফলে এখন এগিয়ে আসছেন অনেক মা-বাবা। সে রকমই এগিয়ে এসেছিলেন প্রত্যুষার বাবা-মা। আজ তাঁদের মেয়ে কথা বলছে। গলার আওয়াজ ফিরে পেয়ে সে বলছে, “আতা গাছে তোতা পাখি, ডালিম গাছে মৌ।”
প্রত্যুষার মতোই কণ্ঠে আওয়াজ ফিরে পেয়েছে স্বপ্ননিকা-সহ আরও অনেকে। তাদের মা-বাবাদের চোখে মুখে যেন প্রাপ্তির আনন্দ। প্রত্যুষার মা জানান, চিকিৎসকের কাছ থেকে তাঁরা জানতে পারেন তাঁদের সন্তান জন্মগত মূক ও বধির। এরপর ভেলোর, অবশেষে অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বলছে প্রত্যুষা। অনেক ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যা থাকলে অস্ত্রোপচার করতে ভয় পান মা-বাবারা। কিন্তু চিকিৎকদের মতে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ককলেয়ার ইমপ্লান্টেশন অস্ত্রোপচার করলে শিশু শ্রবণ শক্তি ফিরে পায়। এ দিন বিশ্ব শ্রবণ দিবস উপলক্ষে এসএসকেমে একসঙ্গে এসেছিল প্রত্যুষা, স্বপ্ননীকার মতো জন্মগত মূক ও বধিরা যারা এখন কথা বলছে, যাপন করছে স্বাভাবিক জীবন।
এসএসকেএমের চিকিৎসক ও অধিকর্তা অধ্যাপক অরুণাভ সেনগুপ্ত জানান, এ পর্যন্ত মোট ৬৭টি শিশুর কণ্ঠে শব্দ এনে দিয়েছে তাঁদের হাসপাতাল। তাঁর কথায়, “একজন চিকিৎসকের কাছে এর থেকে আনন্দের কিছু নেই, যখন একটি বধির শিশু শ্রবণ ক্ষমতা ফিরে পায়। যখন তার মায়ের মুখে হাসি ফুটে ওঠে।” তিনি গ্রাম-বাংলার প্রত্যেক মা-বাবার কাছে আবেদন করেন, যদি কোনও শিশু জন্মের পর কথা বলতে বা শুনতে না পায়, তাহলে একদম দেরি না করে যেন যোগাযোগ করা হয়, সম্পূর্ণ বিনা খরচায় তাঁদের শিশু কথা বলতে পারবে।
এ বিষয়ে এসএসকেমের চিকিৎসক অধ্যাপক অরিন্দম দাস জানান, ককলেয়ার ইমপ্লান্টেশন ১ বছর থেকে যে কোনও বয়সে করা যায়। ভারতে ৭ মাসের শিশুরও ককলেয়ার ইমপ্লান্টেশন হয়েছে। শুধু শিশুদের নয় বয়স্কদের যারা হেয়ারিং-এড নিয়েও শুনতে পাচ্ছেন না তাঁদের ক্ষেত্রেও ককলেয়ার ইমপ্লান্টেশন করা যায়। এই ক্ষেত্রে হেয়ারিং-এডের থেকে একটি আধুনিক যন্ত্র অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে মাথায় বসানো হয়। যা শব্দ তরঙ্গকে ইলেকট্রিক এনার্জিতে রূপান্তর করে মস্তিষ্কে পাঠায়। অরিন্দমবাবু বলেন, “শিশুরা মায়ের পেটের মধ্যে থেকেই শুনতে পায়, যত দিন শিশু বধির থাকে ততদিন তাঁর মস্তিষ্কে কান দিয়ে কোনও শব্দ পৌঁছয় না। ফলে মস্তিষ্ক অন্ধকার থাকে। যার প্রভাব শিশুটির জীবনে পড়ে। তাই যত তাড়াতাড়ি অস্ত্রোপচার হয় ততই ভাল।”
আরও পড়ুন: এপিসেন্টার নন্দীগ্রাম! মমতা-শুভেন্দু দ্বৈরথ কি অবশ্যম্ভাবী? স্পষ্ট করলেন দিলীপ





