চুলোয় বিধিনিষেধ! শেষ ৩ মাসে হাওড়া-শিয়ালদহে ২ কোটির বেশি যাত্রী সওয়ার স্টাফ স্পেশালে

Staff Special Local Train: সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও এই কয়েক মাসে স্টাফ স্পেশালের যাত্রীদের টিকিটের টাকা থেকেও উপার্জন মন্দ হয়নি পূর্ব রেলের

চুলোয় বিধিনিষেধ! শেষ ৩ মাসে হাওড়া-শিয়ালদহে ২ কোটির বেশি যাত্রী সওয়ার স্টাফ স্পেশালে
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jul 26, 2021 | 11:19 PM

স্বর্ণেন্দু দাস: মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাজ্যে কড়া বিধিনিধেষ জারি করেছিল রাজ্য সরকার। ফলে বন্ধ হয়ে যায় লোকাল ট্রেন পরিষেবা। যদি জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্তদের জন্য স্টাফ স্পেশাল চালানো হচ্ছিল। ক্রমেই সেই জরুরি পরিষেবার আওতায় থাকা পেশার সংখ্যা বৃদ্ধি হয়। সেই মতো পাল্লা দিয়ে বাড়ি স্টাফ স্পেশালের সংখ্যাও। কিন্তু যে করোনাকে ঠেকাতে লোকাল বন্ধ রাখা হল, সেই করোনা সংক্রমণের আশঙ্কা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে এই স্টাফ স্পেশাল ট্রেনই। সোমবার পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে যে পরিসংখ্যান প্রকাশ্যে আনা হয়েছে, তাতে চক্ষু রীতিমতো চড়কগাছ হওয়ার জোগাড়। দেখা যাচ্ছে, শেষ ৩ মাসে হাওড়া এবং শিয়ালদহ মিলিয়ে সংখ্যায় অপ্রতুল এই স্টাফ স্পেশালে যাতায়াত করেছেন প্রায় ২ কোটি ২০ লক্ষের বেশি যাত্রী!

যদিও বর্তমানে করোনার সংক্রমণ কমছে। সেই সঙ্গে আলগা হচ্ছে বিধিনিষেধও। সরকারিভাবে সাধারণ যাত্রীদের জন্য লোকাল ট্রেন পরিষেবা এখনও শুরু হয়নি ঠিকই। কিন্তু জরুরি এবং বিশেষ পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত যাত্রীদের কথা মাথায় রেখে স্টাফ স্পেশাল ট্রেন চালাচ্ছে পূর্ব রেল। গত কয়েক মাসে ধাপে ধাপে সেই স্টাফ স্পেশাল ট্রেনে যাত্রীদের আনাগোনা বেশ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। সেই কথা মাথা রেখেই হাওড়া এবং শিয়ালদহ রুটে স্টাফ স্পেশাল ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, সাধারণ যাত্রীদের যাতায়াত বন্ধ থাকলেও এই কয়েক মাসে স্টাফ স্পেশালের যাত্রীদের টিকিটের টাকা থেকেও উপার্জন মন্দ হয়নি পূর্ব রেলের। সোমবার এই সংক্রান্ত বেশ কিছু পরিসংখ্যানও প্রকাশ্য এসেছে।

পূর্ব রেল সূত্রে খবর, যাত্রী সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় শিয়ালদহ শাখায় আরও ৭২ টি লোকাল ট্রেন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে, হাওড়া রুটেও ১০ টি লোকাল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে পূর্ব রেল। এই দুই শাখায় বর্তমানে যথাক্রমে ৪৬২ ও ২০৪ টি লোকাল ট্রেন চলছে।

অলংকরণ-অভীক দেবনাথ

অন্যদিকে, গত মে মাস থেকে এই দুই রুটে ধাপে ধাপে কীভাবে যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে ও তার সঙ্গে সাযুজ্য রেখে রেলও নিজের উপার্জন কতটা বাড়িয়েছে, সেই তথ্যও প্রকাশ করা হয়েছে। পূর্ব রেল সূত্রে খবর, হাওড়া রুটে গত মে মাসে যাত্রী হয়েছিল প্রায় ১৮ লক্ষ ১১ হাজার। সেই মাসে রেলের উপার্জন ছিল ৬৪ লক্ষ ৬৫ হাজার। জুন মাসে সেই উপার্জন সামান্য বেড়ে হয় ৭১ লক্ষ ৩১ হাজার টাকা। কারণ যাত্রী সংখ্যাও বেড়ে ১৮ লক্ষ ৪৮ হাজার হয়েছিল। জুলাই মাস শেষ হওয়ার আগেই অবশ্য যাত্রী সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩১ লক্ষে পৌঁছে গিয়েছে। ফলে এখনও পর্যন্ত উপার্জনও বেড়ে হয়েছে ১ কোটি ১৫ লক্ষ ৪৬ হাজার।

অলংকরণ-অভীক দেবনাথ

শিয়ালদহ রুটে আবার হাওড়ার তুলনায় যাত্রী বেশি। ফলে উপার্জনও বেশি রেলের। সূত্র জানাচ্ছে, গত মে মাসে শিয়ালদহ রুটে যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৩২ লক্ষ ২০ হাজার। ফলে ১ কোটি ৫ লক্ষ ২০ হাজার টাকা উপার্জন করেছিল রেল। জুন মাসে সেই উপার্জন বেড়ে হয় ১ কোটি ৭৭ লক্ষ ২১ হাজার টাকা। কারণ যাত্রী সংখ্যা বেড়ে হয়েছিল প্রায় ৫০ লক্ষ ২৭ হাজার। জুলাই মাসের কয়েকদিন বাকি থাকতেই শিয়ালদহ রুটে ২ কোটি ৭৬ লক্ষ ৪৫ হাজার টাকা উপার্জন করেছে রেল! কারণ যাত্রী সংখ্যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ৮২ লক্ষ ২৫ হাজার।

গত ৩ মাসে এই বিপুল সংখ্যক যাত্রী যে কোভিড বিধি মেনে যাতায়াত করেননি, তা পূর্ব রেলের আধিকারিকেরাও জানেন এমনকী, এই সংখ্যক যাত্রী শুধুই রেলের নথিভুক্ত। এ বাদে আরও অসংখ্য যাত্রী রয়েছে যাদের থেকে জরিমানা বাবদ শুধু জুন মাসেই দেড় কোটির বেশি টাকা আদায় করেছে পূর্ব রেল। দুই রুট মিলিয়ে এই যাত্রী সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষ। ফলে প্রশ্ন উঠছেই, যে কীভাবে এই বিপুল সংখ্যক যাত্রী কোভিড বিধিনিষেধ বজায় থাকা সত্ত্বেও স্বল্প সংখ্যক ট্রেনে যাতায়াত করছেন।

এই নিয়ে পূর্ব রেলের বক্তব্য, কোনও পরিকল্পনাই ১০০ শতাংশ বাস্তবায়িত করা সম্ভব হয় না। তবে প্রতিদিন যাত্রী সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে শারীরিক এবং তার সঙ্গে দূরত্বও যাতে মেনে চলা যায় সে বিষয়ের উপরেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। রাজ্য সরকারের নির্দেশ মত যে সমস্ত পেশার যাত্রীদের ছাড় দেওয়া হয়েছে, শুধুমাত্র তাদের মান্থলি এবং প্রতিদিনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে। সমস্ত যাত্রীদের প্রতি দিনের টিকিট দেওয়া হচ্ছে এমনটা নয়। তবে সমস্ত স্টেশনে কড়া নজরদারি রাখা যে সম্ভব নয় তা স্বীকার করছেন রেল আধিকারিকদের একটা বড় অংশ।

আরও পড়ুন: উচ্চ মাধ্যমিকে নয়া কেলেঙ্কারি! পাশ করাতে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন প্রধান শিক্ষক