Abhishek Banerjee: ‘কারও কেনা গোলাম নই’, ফাঁকা রাজভবনের বাইরে গর্জন অভিষেকের
Abhishek Banerjee: সন্ধেয় আবার বাগডোগরা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা রাজ্যপাল। আর এদিকে শহরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের রাজভবন অভিযান। রাজভবন চত্বরের বাইরে একটি মঞ্চও বানানো হয়েছে। মিছিল শেষে সেই মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন অভিষেক। কী বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক?
কলকাতা: রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস শহরে নেই। রাজভবন ফাঁকা। রাজ্যপাল বোস আজ সকালেই দিল্লি থেকে সোজা উত্তরবঙ্গে গিয়েছেন। সেখানে বিপর্যস্ত পরিবারগুলির সঙ্গে দেখা করেছেন। আজই সন্ধেয় আবার বাগডোগরা থেকে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দেওয়ার কথা তাঁর। আর এদিকে শহরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূলের রাজভবন অভিযান। রাজভবন চত্বরের বাইরে একটি মঞ্চও বানানো হয়েছে। মিছিল শেষে সেই মঞ্চ থেকে বার্তা দিলেন অভিষেক। কী বললেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক?
- অভিষেক বললেন, “রাজ্যপাল বলেছিলেন শিলিগুড়িতে গিয়ে আমরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে পারি। তিনি শিলিগুড়ি সার্কিট হাউজ়ে রয়েছেন। তারপর আমি ডেরেক ও’ব্রায়েনকে বললাম একটু খবর নিয়ে দেখতে। খবর নিয়ে দেখা গেল, উনি চারটে অবধি শিলিগুড়িতে আছেন। সকাল সাড়ে ন’টা – দশটার মধ্যে মেল করে বলছেন, ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে শিলিগুড়িতে চলে যেতে। এই জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধেই আমাদের আন্দোলন ও লড়াই। আমরা কারও বন্ডেড লেবার নই।”
- রাজ্যপালের এই ঝটিকা সফর নিয়েও প্রশ্ন অভিষেকের। বললেন, “আপনি যদি তিন দিন থাকতেন বুঝতাম। ২ ঘণ্টায় কী বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শন হয়! আপনি সকাল বেলা এলেন, বন্যা পরিদর্শন করে দিল্লি ফিরে গেলেন? আপনি বাংলার রাজ্যপাল! আর রাজভবন খালি।”
- রাজ্যপাল না থাকায় তৃণমূলের প্রতিনিধি দলের কেউ রাজভবনের ভিতরে ঢুকবে না বলেও জানিয়ে দিলেন অভিষেক। বললেন, “আমাদের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সির নেতৃত্বে ২৫ জনের প্রতিনিধি দল যাবেন। তাদের মধ্য়ে থাকবে ১০ জন ভুক্তভোগীদের পরিবার। আমি তাঁদের অনুরোধ করেছি, যেহেতু রাজ্যপাল নেই, তাই রাজভবনে ঢুকবেন না। আপনারা গেটের বাইরে থেকে পুলিশ-প্রশাসনের যাঁরা রয়েছেন, বা যদি ওনার অফিসের স্টাফ কেউ থাকেন, তাঁর হাতে চিঠি তুলে দিয়ে চলে আসবেন। আমরা বরাবরই সৌজন্যতা দেখিয়েছি।”
- অভিষেক বললেন, “প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে তিনবার বৈঠক করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বলেছেন, এতদিন ধরে আটকে রাখা বাংলার প্রাপ্য টাকা ছেড়ে দেওয়ার জন্য। গত ৫ এপ্রিল আমাদের সাংসদদের এক প্রতিনিধিদলও গিয়েছিলাম দিল্লিতে। গিরিরাজ সিং বা প্রতিমন্ত্রী কেউই দেখা করেননি। সচিব দেখা করেছিলেন আমাদের সঙ্গে। আমাদের বলা হয়েছিল, বিষয়টি দেখা হবে। তারপরও ৬ মাস কেটে গিয়েছে। আমি যখন নবজোয়ার কর্মসূচিতে দু মাস রাস্তায় ছিলাম, মানুষের জ্বালা-যন্ত্রণা-দুর্দশা দেখেছি। প্রায় দু’বছর ধরে তাঁদের টাকা আটকে রেখেছে।”
- তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, “আমাদের অনেক ধমকানো-চমকানো হয়েছে। তারপরেও ২-৩ তারিখ তৃণমূল কর্মসূচি করেছে। সেই সফল কর্মসূচি আপনারা নিজের চোখে দেখেছেন। বিজেপি এতটাই ভীত-সন্ত্রস্ত যে ইডি-সিবিআই-এর পর দিল্লি পুলিশ, সিআরপিএফ, সিআইএসএফ-কে নামিয়েও তৃণমূলের কর্মসূচিকে দমাতে পারেনি। আমরা স্বৈরচারী শক্তির কাছে আত্মসমর্পণ করব না। আমরা লড়াই চালিয়ে গিয়েছি। কিন্তু, ৩ তারিখ যেভাবে ভুক্তভোগীদের উপর নির্মমভাবে আক্রমণ করা হয়েছে, তাতে মধ্যযুগীয় বর্বরতাও লজ্জা পাবে বলে মনে করি। মহিলাদের চুল ধরে টানতে টানতে ধাক্কা মেরে কৃষিভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এর জবাব আগামী দিনে গণতান্ত্রিক পথে বাংলার মানুষ দেবে।”
- তৃণমূলের সেকেন্ড-ইন-কমান্ড আরও বললেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পথ অবলম্বন করেই তৃণমূল লড়াইয়ের পথে নেমেছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইচ্ছাশক্তি, লড়াকু মানসিকতা, হার না মানা মানসিকতা, মানুষের স্বার্থে পথ চলার মনোভাব ও তাঁর দীর্ঘ আন্দোলনকে পাথেয় করে আমরা এই মিছিল করেছিলাম।”
- গতকালই অভিষেক কেন্দ্রকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন। ২০ লাখ মানুষকে দিয়ে কাজ করানো হয়েছে কি না এবং যদি কাজ করানো হয়ে থাকে, তাহলে কোন আইনবলে তাদের টাকা আটকে রাখা হয়েছে… এই নিয়ে কেন্দ্রকে বিবৃতি প্রকাশের জন্য বলেছিলেন তিনি। আজ রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়েও রাজ্যপাল বোসের উদ্দেশেও সেই একই কথা বললেন তিনি। অভিষেকের দাবি, রাজ্যপালও যেন কেন্দ্রের কাছে চিঠি পাঠিয়ে এই বিষয়টি নিয়ে জানতে চান।
- আজ বোসের দেখা না পেয়ে অভিষেক বললেন, “আমরা যখন কৃষিভবনে গেলাম, গিরিরাজ সিং পালিয়ে গেলেন বিহারে। প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতিও পিছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে গেলেন। আর আজ রাজ্যপালও চলে গেলেন।”
- অভিষেক বললেন, “ইডি একের পর এক নোটিস দিচ্ছে আমাকে। আমি তো কলকাতায় রয়েছি। সবার সামনে রয়েছি। নোটিস দিচ্ছে আমাকে, আমার মা-বাবা-স্ত্রীকে। তাহলে আপনারা কেন পালিয়ে বেরাচ্ছেন? কারণ, মানুষ প্রতিরোধের রাস্তা বেছে নিয়েছে। মানুষ যদি রাস্তায় নামে, কারও ক্ষমতা নেই তা আটকে রাখার।”
- অভিষেক বললেন, “রাজ্যপাল যতক্ষণ না আমাদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে দেখা করবে, আমরা এই ধরনামঞ্চ ছেড়ে যাব না। আমরা এখানেই থাকব। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে এই ধরনামঞ্চ চালাব। আমি এখানেই রাত কাটাব, এখানেই বসে থাকব। বিজেপির প্রতিনিধিদলকে আপনি একটা ফোনেই সাক্ষাতের জন্য সময় দিতে পারেন। আর দু’বার-তিনবার লিখিত মেল পাঠানোর পরও আমাদের সাক্ষাৎ দেওয়া হচ্ছে না।” তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক জানালেন, আজ রাত ৯টা পর্যন্ত কর্মসূচি চলবে। তারপর ফের আগামিকাল বেলা ১১টা থেকে কর্মসূচি শুরু হবে।
- অভিষেকের হুঙ্কার, “গরিব মানুষকে দিয়ে কাজ করিয়ে, টাকা আটকে রাখা হলে, বাংলা এর বিরুদ্ধে লড়বে। অন্য কোনও রাজ্য লড়ুক বা না লড়ুক।”