‘নাচ না জানলে উঠোন ব্যাঁকা’, রাজ্যে সন্ত্রাস রুখতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল, বেনজির নিশানা ফিরহাদের

ফিরহাদ আরও বলেন, "মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে শপথ নিয়েছেন তার চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। এর মধ্য়ে টিম পাঠাতে হবে! বাংলায় সন্ত্রাস হয় না। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সন্ত্রাস বলে চালিয়ে দেবেন না।"

'নাচ না জানলে উঠোন ব্যাঁকা', রাজ্যে সন্ত্রাস রুখতে কেন্দ্রের প্রতিনিধি দল, বেনজির নিশানা ফিরহাদের
ফাইল ছবি
Follow Us:
| Updated on: May 06, 2021 | 9:15 PM

কলকাতা: বঙ্গ নির্বাচন মিটতেও অব্য়াহত ভোট পরবর্তী সন্ত্রাস (post Poll Violence)। বাংলার রাজনৈতিক হিংসা নিয়ে উদ্বিগ্ন কেন্দ্র। ইতিমধ্যেই রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে বাংলার ভোট পরবর্তী হিংসা রুখতে কড়া পদক্ষেপ করা হয়েছে। গঠন করা হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি পদমর্যাদার চার আধিকারিকের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলার নির্বাচন পরবর্তী হিংসার তদন্ত, তার বিস্তারিত তথ্য রিপোর্ট করা হবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে। নির্বাচনের অনতিপরেই বঙ্গে আনা এই প্রতিনিধি দলের বিরুদ্ধে এ বার মুখ খুলেছেন তৃণমূল বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম (Firhad Hakim)। বেনজির বাক্যবাণে কেন্দ্রকে তোপ দাগলেন তৃণমূল নেতা (TMC)।

বহস্পতিবার, তৃণমূল বিধায়ক ফিরহাদ বলেন, “নাচ না জানলে উঠোন ব্যাঁকা। শূন্য হয়ে ফিরেছে তো, তাই দেখাচ্ছে বিরাট কিছু ঘটেছে।” কেন্দ্রকে এ দিন ‘চম্বলের ডাকাত’ বলে সম্বোধন করে তৃণমূল নেতা বলেন, “আসলে হেরে গিয়েছে তো! তাই বদলা বদলা করেছে। দল পাঠাচ্ছে। কেন্দ্রীয় দল না পাঠিয়ে ভ্যাকসিন পাঠাও।” প্রসঙ্গত,  মুখ্য়মন্ত্রী হয়ে শপথ গ্রহণের পরেই, করোনা নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্য়মন্ত্রী।  কোভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীকে (Narendra Modi) চিঠিও দেন তিনি। চিঠিতে, শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর আবেদন করার পাশাপাশি ভ্যাকসিনের জোগান বাড়ানোরও আবেদন করেন মমতা (Mamata Banerjee)। পশ্চিমবঙ্গে ১০ হাজার ডোজ রেমডেসিভির লাগবে প্রতিদিন, এমনটাও আবেদন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ফিরহাদ আরও বলেন, “করোনা নিয়ে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে পারছে না। তাই এ সব গল্প বানাচ্ছে।”

ফিরহাদ আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হয়ে শপথ নিয়েছেন তার চব্বিশ ঘণ্টাও হয়নি। এর মধ্য়ে টিম পাঠাতে হবে! বাংলায় সন্ত্রাস হয় না। দু-একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে সন্ত্রাস বলে চালিয়ে দেবেন না। আমাদের দলের কর্মী সমর্থকেরাও মারা গিয়েছেন। মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় (Mamata Banerjee) শক্ত হাতে ধরেছেন। সব সমস্যার আশু সমাধান হবে।” প্রসঙ্গত, ভোটের ফল প্রকাশের পর থেকেই রাজ্যের কলকাতা-সহ রাজ্যের একাধিক জেলা থেকে রাজনৈতিক হিংসার খবর এসেছে। শুধু বিজেপি নয়, অন্যান্য দলের কর্মীদের মৃত্যুর খবরও সামনে এসেছে। আগেই এই ইস্যুতে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে সোমবারই রাজ্য পুলিশের ডিজি ও কলকাতার পুলিশ কমিশনার তলব করেছিলেন রাজ্যপাল।

এরপরেই, কেন্দ্রের তরফে ভোট পরবর্তী হিংসার খতিয়ান দেখতে রাজ্যে চারজনের একটি প্রতিনিধি দল পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের আধিকারিকরা জানিয়েছেন, যে সমস্ত জায়গায় নির্বাচন-পরবর্তী হিংসা হয়েছে সেখানকার বর্তমান অবস্থা কী, যাঁদের উপর হিংসা হয়েছে তাঁরা বর্তমানে কী অবস্থায় রয়েছেন, সেটা খতিয়ে দেখার জন্য তাঁরা এসেছেন। প্রয়োজন হলে তারা সরকারি আধিকারিক রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্রসচিব অথবা রাজ্য পুলিশের ডিজি সঙ্গে বৈঠক করতে পারেন।  এ প্রসঙ্গে, ফিরহাদ বলেন, “করোনা নিয়ে ব্যর্থতা ঢাকতে টিম পাঠাচ্ছে। টিম আসবে। চা খাবে, গল্প করবে, চলে যাবে। বিজেপিকে, নরেন্দ্র মোদীকে বাংলার মানুষ রিজেক্ট করেছে। এ বারের নির্বাচনই তার প্রমাণ।”

উল্লেখ্য, বুধবার রাজভবনে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ নেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শপথবাক্য পাঠ করার পর তিনি নিজে তাঁর দায়িত্ব প্রসঙ্গে কিছু কথা সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন। সে সময় রাজ্যপাল (Jagdeep Dhankhar) রাজ্যের ভোট পরবর্তী হিংসার প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন। সেই প্রসঙ্গের রেশ টেনেই উত্তর দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। তিনি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, এই হিংসার দায় তাঁর নয়। তাঁর বক্তব্য, “আমি এখুনি শপথ নিলাম। এর আগে নির্বাচন কমিশনের আন্ডারে এই সরকারের পুলিশ কাজ করেছে। কোথাও কোথাও অশান্তি বেশি হচ্ছে। বিশেষ করে যেখানে যেই দল জিতেছে, বেশি অশান্তি করছে। আজকে গিয়েই আমি নতুন সেটআপ তৈরি করব। গত তিন মাসে এই সেটআপ আমার ছিল না। অনেক ইনএফেক্টিভ, ইনএফিসিয়েন্সি ছিল। আমি দেখে নেব, কেউ যেন প্রতিহিংসাপরায়ণ না হয়।”

আরও পড়ুন: মুখ্যমন্ত্রী হয়েই শীতলকুচির তদন্তে কড়া মমতা, সিআইডির নেতৃত্বে গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল