‘দম বন্ধ হয়ে আসছে’, নাটকীয়ভাবে সাংসদ পদ ছাড়লেন দীনেশ ত্রিবেদী

আজ রাজ্যসভায় ইস্তফা ঘোষণা করলেন তৃণমূল সাংসদ দীনেশ ত্রিবেদী। এদিকে, পদত্যাগের ঘোষণার পরই দলের প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় জানান, দীনেশের পদত্যাগে উনি দুঃখিত। ভোটের আগে এভাবে ইস্তফা দেওয়া ঠিক হয়নি।

'দম বন্ধ হয়ে আসছে', নাটকীয়ভাবে সাংসদ পদ ছাড়লেন দীনেশ ত্রিবেদী
ছবি- টুইটার
Follow Us:
| Updated on: Feb 12, 2021 | 4:25 PM

নয়া দিল্লি: নাটকীয়ভাবে রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন তৃণমূল নেতা দীনেশ ত্রিবেদী। শুক্রবার রাজ্যসভায় বক্তব্য রাখতে উঠেই পদত্যাগের ঘোষণা করলেন তৃণমূল সাংসদ। তিনি বলেন, “এখানে থেকে কোনও কাজ করা যাচ্ছে না, দম বন্ধ হয়ে আসছে।” তবে দল ছেড়ে বিজেপি বা অন্য কোনও রাজনৈতিক দলে যোগ দেবেন কিনা, সে বিষয়ে কোনও কিছু জানাননি প্রাক্তন রেলমন্ত্রী।

সামনেই বিধানসভা নির্বাচন। তার আগেই রাজ্যসভার সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার সময় বাকি দলত্যাগীদের মতোই দীনেশ ত্রিবেদীর গলাতেও দমবন্ধ হয়ে আসার কথাই শোনা গেল। এদিন অধিবেশন চলাকালীন বক্তব্য রাখতে উঠে তিনি বলেন, “আমি বেশি সময় নেব না। দুই মিনিটের মধ্যেই আমার বক্তব্য শেষ করব। আমি মনের কথা অনুসরণ করে এগোচ্ছি। আমার মতে কাজ না করার থেকে পদত্যাগ করাই শ্রেয়।”

আরও পড়ুন: ‘মরতেও পিছপা হব না’, রক্ত দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি লিখলেন ওঁরা

আশির দশকে কংগ্রেসে যোগ দিয়েছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী। পরবর্তী সময়ে কংগ্রেস ছেড়ে জনতা দলে যোগ দেন দীনেশ। ১৯৯০ থেকে ১৯৯৬ সাল অবধি তিনি জনতা দলের সাংসদও ছিলেন। এরপর ১৯৯৮ সালে তৃণমূল কংগ্রেসে নাম লেখান ত্রিবেদী। অর্থাৎ তৃণমূলের উত্থান পর্ব থেকেই দলের সঙ্গে ছিলেন তিনি। তৃণমূলের প্রথম মহাসচিবও ছিলেন দীনেশ ত্রিবেদী।

২০০২ থেকে ২০০৮ সাল অবধি রাজ্যসভায় তৃণমূলের সাংসদ ছিলেন তিনি। এরপর ২০০৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বারাকপুর থেকে প্রার্থী হন এবং নির্বাচনেও জেতেন। সেই বছরই কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী হন দীনেশ। ২০১১ সালে দায়িত্ব পান রেলমন্ত্রীর। কিন্তু রেলের ভাড়া বৃদ্ধি কেন্দ্র করে বিতর্কিত মন্তব্যের জেরে ওই বছরই রেলমন্ত্রীর দায়িত্ব ছাড়তে হয় তাঁকে। গত লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর গতবছরই দলের তরফে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানো হয়। কিন্তু আজ দলকে কিছু না জানিয়েই কার্যত নাটকীয়ভাবে ইস্তফা দিলেন তিনি।

পদত্যাগের কারণ হিসাবে তিনি জানান, দলের তরফে তাঁকে রাজ্যসভায় পাঠানোর জন্য তিনি কৃতজ্ঞ। কিন্তু এখানে থেকে কাজ করা যাচ্ছে না। সবাইকেই কখনও না কখনও অন্তরাত্মার ডাক শুনতে হয়। রাজ্যে যেভাবে হিংসা ছড়াচ্ছে, তাতে খুবই খারাপ লাগছে তাঁর। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী উল্লেখ করে তিনি বলেন, “উঠো, জাগো ও লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যাও। এই মন্ত্র অনুসরণ করেই আমি এগোতে চাই, তাই এখান থেকে পদত্যাগ করছি।” তবে রাজ্যবাসীর জন্য তিনি কাজ চালিয়ে যেতে চান বলেই জানান।

পদত্যাগের ঘোষণা শুনেই রাজ্যসভার ডেপুটি চেয়ারম্যান দীনেশ ত্রিবেদীকে বলেন, ‘‘এইভাবে ইস্তফা দেওয়া যায় না। ইস্তফা দেওয়ার একটি পদ্ধতি আছে। আপনি রাজ্যসভার চেয়ারম্যানের কাছে লিখিত ভাবে পদত্যাগপত্র জমা দিন।’’

এদিকে, ত্রিবেদীর পদত্যাগের ঘোষণার পরই প্রবীণ সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “দীনেশের পদত্যাগে আমি দুঃখিত। ওনার ক্ষোভের বিষয়ে আগে কোনও কথা স্পষ্টভাবে বলেননি। তবে ভোটের আগে এভাবে ইস্তফা দেওয়া ঠিক হল না।” অন্যদিকে, অপর সাংসদ তথা দীনেশ ত্রিবেদীর সতীর্থ শুখেন্দু শেখর রায় কড়া সুরেই বলেন, “তৃণমূল মানে গ্রাসরুট। ওনার পদত্য়াগে বরং আরও একজন নেতা রাজ্যসভায় যাওয়ার সুযোগ পাবেন। উনি বলেছেন দমবন্ধ হয়ে যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পরও ওনার দমবন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তখন দিদির কাছে লুটিয়ে পড়েছিলেন। সেখান থেকে ওনাকে রাজ্যসভায় পাঠানো হল। কয়েক মাস পরই আবার দমবন্ধ হয়ে আসল। এভাবে বারবার দমবন্ধ হয়ে গেলে তো সমস্যা।”

বিরোধী দলগুলির মধ্যে বাম পরিষদীয় দলনেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “আমার করুণা হচ্ছে। ওনার উপরও আর তৃণমূলের উপরও। দলত্যাগীরা সকলে একই কথা বলছেন যে দলে থেকে কাজ করতে পারছি না।” বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক কৈলাশ বিজয়বর্গীয় বলেন, “পিসি আর ভাইপোর অহংকারের কারণে আত্মসম্মানযুক্ত কোনও ব্যক্তিই তৃণমূলে থেকে কাজ করতে পারবেন না। কয়েক বছর আগেই ওনার সঙ্গে বিমানবন্দরে দেখা হয়েছিল, তখন বলেছিলেন খুব খারাপ পরিস্থিতি। আমাদের দলে আসবেন কিনা, সে বিষয়ে কিছু জানাননি। তবে উনি যদি বিজেপিতে আসতে চান, আমরা স্বাগতই জানাব।”

পদত্যাগের আগেই দীনেশের মুখে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রশংসা ঘিরেও শুরু হয়েছে জল্পনা। তিনি বক্তব্য পেশের শুরুতেই বলেছিলেন, “করোনাকালে দেশ যেভাবে কাজ করেছে তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। প্রধানমন্ত্রী যেমন বলেছিলেন যে ১৩০ কোটি একসঙ্গে কাজ করেছে, তা একদমই ঠিক।”  ঘটনাক্রমে গতকাল প্রধানমন্ত্রীর একটি টুইটও রিটুইট করেন তিনি। দুয়ে দুয়ে চার করেই দীনেশ ত্রিবেদীর বিজেপিতে যাওয়ার সম্ভাবনা আরও প্রবল হচ্ছে।

আরও পড়ুন: West Bengal Bandh Live Updates: প্রতিবাদে কোথাও ফুটল গোলাপ, কোথাও পুড়ল মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল