‘আমার মুক্তি’, মমতা-অভিষেকের ছবি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট জেলবন্দি আনিসুরের!

"দীর্ঘ সময়কাল বারংবার মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে যারা আজ হাঁফিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক সন্নাসের পথে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে, কাল বেরোচ্ছি।''

'আমার মুক্তি', মমতা-অভিষেকের ছবি দিয়ে ফেসবুক পোস্ট জেলবন্দি আনিসুরের!
ফাইল চিত্র
Follow Us:
| Updated on: May 12, 2021 | 8:49 PM

কলকাতা: তৃণমূল নেতা কুরবান শাহ খুনের মামলায় জেলবন্দি বিজেপি নেতা আনিসুর রহমানের (Anisur Rahaman)। তবে গত মার্চ মাসে তাঁর মামলা প্রত্যাহার করে নেয় রাজ্য সরকার। ভোটমুখী বাংলায় শুভেন্দু অধিকারী-বিরোধী এই নেতার বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছিল রাজনৈতিক মহল। কিন্তু বাধ সাধে কলকাতা হাইকোর্ট। রাজ্যের সিদ্ধান্তকে ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ বলে উল্লেখ করেন আদালতের বিচারপতি। তার পর আবার জেলই ঠিকানা আনিসুরের। এর মধ্যেই বুধবার দেখা গেল জেলবন্দি আনিসুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট! লিখলেন ‘কাল বেরোচ্ছি।’

বুধবার আনিসুর রহমানের ফেসবুক প্রোফাইল থেকে লেখা হয়, “দীর্ঘ সময়কাল বারংবার মিথ্যা কেসে ফাঁসিয়ে যারা আজ হাঁফিয়ে গিয়ে রাজনৈতিক সন্নাসের পথে, তাদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক মোকাবিলা করতে, কাল বেরোচ্ছি।” পোস্টের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে একটি পোস্টার। যেখানে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, সাংসদ ও আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবির সঙ্গে পাঁশকুড়ার নেতার নিজের ছবিও রয়েছে। লেখা, ‘আমার মুক্তি।’ পোস্টটিতে আরও লেখা, ‘আগামীকাল মাননীয় সাংসদ আইনজীবী কল্যান বন্দোপাধ্যায় আসছেন আমার মুক্তির দিন’ (বানান অপরিবর্তিত)। সেই সঙ্গে লেখা, ‘কোভিড বিধি মেনে, মাস্ক পরে তমলুক কোর্ট চত্বরে থাকবেন।’

অর্থাৎ, এক সময়ের পূর্ব মেদিনীপুরের তৃণমূল নেতা থেকে বিজেপিতে যাওয়া আনিসুর ছাড়া পাচ্ছেন বৃহস্পতিবার। আর সেটা জানালেন ফেসবুক পোস্টেই। এর আগেও জেল থেকে কীভাবে ফেসবুক করছেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তবে আনিসুর এই প্রোফাইলটি নিজেই চালান কিনা তা স্পষ্ট নয়।

Anisur's FB post

উল্লেখ্য, পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তৃণমূলের সঙ্গে শুভেন্দু-বিরোধী বলে পরিচিত এই নেতার দূরত্ব তৈরি হয়। পরে ওই বছরেই বিজেপিতে চলে যান আনিসুর। ঘটনাক্রমে ২০১৯ সালে দুর্গাপুজোর নবমীর রাতে খুন হন পাঁশকুড়ার তৃণমূল ব্লক সভাপতি কুরবান শাহ। সেই মামলায় অভিযুক্ত হিসাবে উঠে আসে পূর্ব মেদিনীপুরের পাঁশকুড়ার এই বিজেপি নেতার নাম। গ্রেফতার হন তিনি। সেই আনিসুরের বিরুদ্ধেই ভোটমুখী বাংলায় গত মার্চে সমস্ত মামলা প্রত্যাহার করে নেয় মমতার সরকার। অবশ্য তার আগেই ইঙ্গিত মিলেছিল স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়।

নন্দীগ্রাম থেকে তৃণমূল নেত্রী স্বয়ং প্রার্থী হওয়ার প্রেক্ষিতে নন্দীগ্রাম আন্দোলনে কার ভূমিকা সবচেয়ে বেশি তা নিয়ে কার্যত তরজায় জড়ান তৃণমূল নেতৃত্ব ও সেখানকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী। এই প্রেক্ষিতে গত জানুয়ারি মাসে নন্দীগ্রামের তেখালির জনসভা থেকে শুভেন্দুকে কটাক্ষ করতে গিয়ে মমতা বলেন আনিসুরের নাম। সেই সময়ই মমতা বলেছিলেন, ‘‘আনিসুরকে অত্যাচার করে জেলে রেখে দিয়েছে।’’ স্পষ্টতই তাঁর নিশানায় ছিলেন দলত্যাগী শুভেন্দু অধিকারী।

অন্যদিকে নিজের দলের নেতা খুনে অভিযুক্ত বিজেপি নেতার নাম নেত্রীর মুখে শুনে অনেকেই বিস্মিত হয়েছিলেন। বিজেপি নেতার প্রশংসা শুনে মৃত কুরবানের পরিবারও সেদিন বিস্ময় প্রকাশ করেছিলেন। তবে রাজনৈতিক মহলের ব্যাখ্যা, আনিসুরকে অত্যাচার এবং তাঁকে জেলে বন্দি রাখার বিষয়ে তৃণমূল নেত্রী নাম না করে আসলে বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীকেই নিশানা করেছেন। কারণ, আনিসুর গোষ্ঠীর সঙ্গে শুভেন্দু গোষ্ঠীর গণ্ডগোল সর্বজনবিদিত। আবার এই সভার অব্যবহিত পরে শুভেন্দুও তীব্র আক্রমণ শানিয়েছিলেন মমতাকে।

আরও পড়ুন: রাজ্যের ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ পদক্ষেপ, আনিসুর মামলায় ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

তাঁর কটাক্ষ ছিল, তিনি রাজ্যের পুলিশমন্ত্রী নন। তাই প্রভাব খাটিয়ে কাউকে জেলে আটকে রাখতে পারেন না। তার মধ্যে ভোটের আগে আনিসুরের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের মামলা প্রত্যাহারকে অনেকেই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করেছিলেন।

ভোটের ফল বেরিয়ে গিয়েছে। বাংলার মসনদে তৃতীয় বার বসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এর মধ্যে বুধবার আনিসুর রহমানের ফেসবুক পোস্ট ঘিরে শুরু হল রাজনৈতিক চাপানউতোর।