বিশ্লেষণ : টাকার অভাবে বন্ধ NCC ক্যাম্প, কী সুবিধা পাওয়া যায় এই প্রশিক্ষণ নিলে? কোন পাঠ দেওয়া হয়?

TV9 Explain: সেনাবাহিনীর মতোই ট্রেনিং দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। ছোট অস্ত্রের ব্যবহারও শেখানে হয়। ট্রেনিং ক্যাম্পে শেখানো হয়, বিভিন্ন আবহাওয়ায় কীভাবে লড়াই করতে হয়।

বিশ্লেষণ : টাকার অভাবে বন্ধ NCC ক্যাম্প, কী সুবিধা পাওয়া যায় এই প্রশিক্ষণ নিলে? কোন পাঠ দেওয়া হয়?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 26, 2022 | 10:25 PM

প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সংঘাতের পরিস্থিতি নতুন নয়। স্বাধীনতার পর তিনবার যুদ্ধের সম্মুখীনও হতে হয়েছে ভারতে। তাই প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে বরাবরই গুরুত্ব দিয়েছে ভারত। কম বয়স থেকেই যাতে দেশাত্মবোধ তৈরি হয়, সেই কারণেই NCC বা ন্যাশনাল ক্যাডেট কর্পস তৈরি করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। সেই এনসিসি-ই এবার ধাক্কা খেল পশ্চিমবঙ্গে। রাজ্য সরকারের অনুদানের অভাবে শিবির করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। আদতে কী এই NCC? এই কোর্স করলে কী লাভ হয়?

সিলেবাস তৈরি করেছিলেন খোদ নেহরু

১৯৫০ সালে তৈরি হয় এনসিসি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর তত্ত্বাবধানে তৈরি হয়েছিল সিলেবাস। সেখানে সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যুক্ত করা হয় নৌসেনা ও বায়ুসেনার প্রশিক্ষণও। পাশাপাশি সামাজিক কাজকর্মের শিক্ষাও দেওয়া হয় ক্যাডেটদের।

এই কোর্স ঐচ্ছিক

স্কুল বা কলেজের পড়ুয়ারা ইচ্ছা হলে এই প্রশিক্ষণ নিতে পারেন। এই কোর্স বাধ্যতামূলক নয়। তবে ১৯৬২-তে ভারত-চিন যুদ্ধের পর এই প্রশিক্ষণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ১৯৬৩ থেকে ১৯৬৮ পর্যন্ত বাধ্যতামূলকভাবে এই প্রশিক্ষণ নিতে হত। পরে তা আবার ঐচ্ছিক করে দেওয়া হয়।

কীভাবে এই প্রশিক্ষণ নেওয়া যায়?

সাধারণত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে এই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে সংশ্লিষ্ট পড়ুয়ার স্কুল বা কলেজে যদি সেই সুযোগ নাও থাকে, তাহলেও তারা প্রশিক্ষণ নিতে পারবে। স্কুলে সুযোগ থাকলে প্রধান শিক্ষক বা প্রধান শিক্ষিকার কাছে আবেদন জানাতে হবে।

স্কুলে সুযোগ না থাকলে কাছাকাছি কোনও এনসিসি ইউনিটের কমান্ডিং অফিসারের কাছে আবেদন জানাতে হবে। স্কুল শেষ হওয়ার পর কলেজেও এই কোর্স করা যায়। সে ক্ষেত্রে ‘বি’ ও ‘সি’ সার্টিফিকেট পেতে পারেন পড়ুয়ারা।

‘বি’ ও ‘সি’ সার্টিফিকেট পেতে গেলে কী লাগে?

বাংলায় শিবির বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মূলত ‘বি’ ও ‘সি’ সার্টিফিকেট পেতে অসুবিধা হবে ক্য়াডেটদের।

‘বি’ সার্টিফিকেট পেতে গেলে ট্রেনিং-এ ৭৫ শতাংশ হাজিরা থাকতে হবে। ১৮ মাস প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর এই সার্টিফিকেটের জন্য পরীক্ষা দেওয়া যাবে। ট্রেনিং ক্যাম্প বা প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। আগে ‘এ’ সার্টিফিকেট থেকে থাকলে ১০ নম্বর বোনাস পাওয়া যাবে।

‘সি’ প্রশিক্ষণ পেতে গেলে অবশ্যই ‘বি’ সার্টিফিকেট থাকতে হবে। তিন বছরের প্রশিক্ষণে অন্তত ৭৫ শতাংশ উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। তিন বছরে অন্তত একবার প্রশিক্ষণ শিবিরে উপস্থিত থাকতে হবে।

কী ধরনের ট্রেনিং দেওয়া হয়?

সেনাবাহিনীর মতোই ট্রেনিং দেওয়া হয় পড়ুয়াদের। ছোট অস্ত্রের ব্যবহারও শেখানে হয়। ট্রেনিং ক্যাম্পে শেখানো হয়, বিভিন্ন আবহাওয়ায় কীভাবে লড়াই করতে হয়। যুদ্ধ বা শৃঙ্খলার পাঠ দেওয়ার পাশাপাশি যে সব বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় সেগুলি হল ট্রেকিং, প্যারাসেলিং, স্কুবা ডাইভিং, ক্যামেল সাফারি। পাহাড়ে চড়ার প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়।

স্কলারশিপের সুযোগ থাকে

পড়ুয়াদের জন্য স্কলারশিপ দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে ৬৫ শতাংশ নম্বর থাকলে স্কলারশিপ দেওয়া হয়। দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে কলা বিভাগে ৫৫ শতাংশ, বিজ্ঞান বিভাগে ৬৫ শতাংশ ও বাণিজ্য বিভাগে ৬০ শতাংশ নম্বর পেলে স্কলারশিপ দেওয়া হয়।

কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পান ক্যাডেটরা?

দেরাদুনে ইন্ডিয়ান মিলিটারি অ্যাকাডেমিতে ৬৪ টি আসন, চেন্নাইয়ের অফিসার্স ট্রেনিং অ্যাকাডেমিতে ১০০ টি আসন সংরক্ষিত থাকে এনসিসি ক্যাডেটদের জন্য।

ইন্ডিয়ান নাভাল অ্যাকাডেমিতে প্রতি কোর্সে ৬ টি করে আসন ও এয়ার ফোর্স অ্যাকাডেমিতে প্রতি কোর্সে ১০ শতাংশ আসন সংরক্ষিত থাকে এনসিসি ক্যাডেটদের জন্য।

বিভিন্ন সরকারি চাকরিতে এনসিসি সার্টিফিকেট থাকলে অতিরিক্ত নম্বর পাওয়া যায়। দেশের অনেক বড় সংস্থা সেই সব প্রার্থীদের চাকরি দেয় যাঁরা এনসিসি-র সি সার্টিফিকেটের অধিকারী। পুলিশ বা প্যারামিলিটারি ফোর্সে চাকরির ক্ষেত্রেও প্রার্থীরা বোনাস নম্বর পেতে পারেন।

ক্যাম্প না করতে পারলে কী ক্ষতি হবে?

এনসিসি, পশ্চিমবঙ্গ এবং সিকিম ডিরেক্টরেটের জনসংযোগ আধিকারিক ব্রিজ ভূষণ সিং জানাচ্ছেন, ঠিক যেমন বোর্ডের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার ক্ষেত্রে প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা দেওয়া বাধ্যতামূলক, তেমনই বি ও সি সার্টিফিকেট দেওয়ার ক্ষেত্রে ক্যাম্প করাটাও জরুরি। প্র্যাকটিক্যাল পরীক্ষা ছাড়া যেমন লিখিত পরীক্ষা মূল্যহীন হয়ে যায়, সেভাবেই ক্যাম্প না করতে পারলে ২ বা ৩ বছরের পরিশ্রম বিফলে যাবে।

‘ঐক্য এবং শৃঙ্খলার পাঠ দেয় এনসিসি’

এনসিসি-র এক প্রাক্তন ক্যাডেট সুপ্রিয় ঘোষ বলেন, ‘এনসিসি আমাদের কর্তব্য, ঐক্য এবং শৃঙ্খলার শিক্ষা দেয়। এখানে যারা ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেয়, তাদের দেশের সেনাবাহিনীর জীবনযাত্রা, দৈনিক কাজকর্ম সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয়। আমরা যারা ছোট থেকে সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে চাইতাম, তাদের জন্য এনসিসি হচ্ছে সেদিকে এগিয়ে যাওয়ার প্রথম ধাপ। এনসিসির ৩টে উইং হয়। আর্মি, নেভি ও এয়ারফোর্স। ৩টে পরীক্ষা হয়। এ, বি, সি সার্টিফিকেটের। এ পরীক্ষা না দিয়েও বি সার্টিফিকেটের পরীক্ষা দেওয়া যায়। আর এনসিসির সার্টিফিকেট থাকলে অনেক সরকারি চাকরির পরীক্ষায় বেশ কিছু সুযোগসুবিধাও পাওয়া যায়।’