TV9 Explained: দুর্নীতি থেকে বাঁচতেই তৈরি হয়েছিল SSC, আজ সেই ‘দুর্নীতির’ পাঁকে, কতটা স্বাধীন কমিশন?

School Service Commission: বিশ্বজিৎ বসু সম্প্রতি একটি মামলার শুনানিতে রাজ্যকে বলেছেন, 'যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, তাহলে কমিশন ভেঙে দিন।'

TV9 Explained: দুর্নীতি থেকে বাঁচতেই তৈরি হয়েছিল SSC, আজ সেই ‘দুর্নীতির’ পাঁকে, কতটা স্বাধীন কমিশন?
স্কুল সার্ভিস কমিশন
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Nov 17, 2022 | 6:33 PM

স্কুলে স্কুলে স্বজনপোষণ, নেতা-মন্ত্রীদের কাছের লোককে চাকরি দেওয়া বা টাকা নিয়ে চাকরি দেওয়ার অভিযোগ এ রাজ্যে নতুন নয়। বর্তমানে নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় হচ্ছে রাজ্য রাজনীতি। কিন্তু বাম আমলেও এমন অভিযোগ উঠেছে ভূরি ভূরি। সেই সময় অভিযোগ থেকে অব্যাহতি পেতেই তৈরি করা হয়েছিল স্কুল সার্ভিস কমিশন। শিক্ষক নিয়োগ যাতে স্বচ্ছভাবে হয়, সেটাই ছিল কমিশন গঠনের লক্ষ্য। আজ এত বছর বাদে সেই নিয়োগ নিয়েই প্রশ্নের মুখে কমিশন। বৃহস্পতিবার বিচারপতি বিশ্বজিৎ বসু সম্প্রতি একটি মামলার শুনানিতে রাজ্যকে বলেছেন, ‘যদি নিয়ন্ত্রণ না করতে পারেন, তাহলে কমিশন ভেঙে দিন।’

কেন তৈরি হয়েছিল কমিশন?

রাজ্য সহ গোটা দেশে আগে স্কুল ভিত্তিক শিক্ষক নিয়োগ হত। আর সে ক্ষেত্রে স্বজন পোষণ সহ বিভিন্ন অভিযোগ আসতে শুরু করেছিল। তাই ১৯৯৬ সালে একটা খসড়া তৈরি হয়। ঠিক হয়, একটি কমিশন তৈরি হবে যাতে সুষ্ঠভাবে নিয়োগ সম্পন্ন হয়। ১৯৯৭ সালের এপ্রিল মাসে বিধানসভায় ভোটাভুটির মাধ্যমে সেই প্রস্তাব পাশ হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে কাজ করতে শুরু করে কমিশন। সেই সময় মন্ত্রী ছিলেন কান্তি বিশ্বাস। বাম আমলে ১২ বছর নিয়োগ হয়েছে এসএসসি-র মাধ্যমে। ওই সময়ের মধ্যে প্রায় ১ লক্ষ ১৫ হাজার নিয়োগ হয়।

শিক্ষা দফতরের নিয়ন্ত্রণ কতটা?

নিয়ম নীতি তৈরি করার ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে। নীতি বা বিধান তৈরি করে শিক্ষা দফতর আর তা প্রয়োগ করে কমিশন। নিয়োগের ক্ষেত্রে যোগ্যতা কী হবে? নম্বর বিভাজন কী ভাবে হবে? সেগুলো ঠিক করে দেয় শিক্ষা দফতর।

পরীক্ষা পদ্ধতি কার হাতে?

পরীক্ষা পদ্ধতি কেমন হবে? ওএমআর শিট কীভাবে দেখা হবে? পরীক্ষার নিয়ামক কারা হবেন? সেগুলো সব ঠিক করে কমিশন। আর তাতে কমিশনের পূর্ণ স্বাধীনতা থাকে।

প্য়ানেল প্রকাশ করেন চেয়ারম্যান

যে প্য়ানেল বা মেধাতালিকা নিয়ে এত অভিযোগ, সেটা তৈরি করেন এসএসসি-র চেয়ারম্যান। তাতে শিক্ষা দফতরের কোনও হাত থাকে না। সুতরাং প্য়ানেলের ক্ষেত্রে কোনও সমস্যা হলে, তার দায় বর্তাবে কমিশনের ওপর।

আর্থিক বিষয়টা দেখে শিক্ষা দফতর

এসএসসির-র যদি কোনও টাকা প্রয়োজন হয়, কোনও খাতে খরচ করতে হয়, তাহলে তার জন্য শিক্ষা দফতরের অনুমোদন নিয়ে হয়। অর্থাৎ অর্থ তছরূপ হলে, তার দায় শিক্ষা দফতরের ওপর বর্তাবে কি না, সেই প্রশ্ন রয়েই যাচ্ছে।

উপদেষ্টা কমিটি তৈরি হয় দুই পক্ষের উদ্যোগে

উপদেষ্টা কমিটিতে কারা থাকবেন, তা শিক্ষা দফতর ও এসএসসি যৌথভাবে বসে ঠিক করে। সাধারণত এসএসসি-র চেয়ারম্যানকে বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেয় এই কমিটি। কমিটির সঙ্গে কথা বলেই সিদ্ধান্ত নেয় এসএসসি। সাম্প্রতিক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁদের অনেকেই উপদেষ্টা কমিটির সদস্য ছিলেন। উল্লেখ্য, বাম আমলে এই উপদেষ্টা কমিটির কোনও অস্তিত্ব ছিল না। তৃণমূল আমলের প্রথম দিকেও উপদেষ্টা কমিটির অস্তিত্ব ছিল না। ২০১৪ সালের আশপাশে এই কমিটি তৈরি হয়, যে সময় শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন পার্থ চট্টোপাধ্য়ায়।

আইনে এসএসসি-কে স্বশাসিত সংস্থা বলেই উল্লেখ করা হয়। তবে বিরোধীরা বলেন, পূর্ণ স্বাধীনতা নিয়ে কাজ করতে পারে না কমিশন। সব ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের হাত থাকে প্রচ্ছন্নভাবে। এসএসসি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান চিত্তরঞ্জন মণ্ডল দাবি করেন, নীতি নিয়মের ক্ষেত্রে শিক্ষা দফতরের ওপর নির্ভর করতে হয়। তিনি জানান, চেয়ারম্যান যেহেতু প্যানেল প্রকাশ করেন, তাই বারবার চেয়ারম্যানের নাম জড়াচ্ছে। সে ক্ষেত্রে দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতেই পারে শিক্ষা দফতর। বাম মনস্ক শিক্ষাবিদ বাম মনস্ক শিক্ষাবিদ  সিদ্ধার্থ দত্ত বলেন, ‘কমিশন ভেঙে দেওয়া হবে কেন! কমিশন থাকবে। দুর্নীতিমুক্ত কাজ যাতে করা সম্ভব হয়, সেদিকে নজর রাখতে হবে।’

উল্লেখ্য, আদালতে রাজ্য দাবি করেছে, নিয়োগের ক্ষেত্রে তাদের কোনও হাত নেই। কমিশন স্বাধীনভাবেই নিয়োগ করে। তবে যে পাহাড়-প্রমাণ দুর্নীতি সামনে এসেছে, তাতে কি শিক্ষা দফতরের ভূমিকা অস্বীকার করা যায়?