SLST: বাচ্চা রেখে আসতে পারে না মেয়ে, চাকরির দাবিতে বৃদ্ধ বাবা এসে বসেন ধর্মতলায়

Kolkata: যে দু'দিন কলকাতা আসেন, ভোর ৪টের সময় ঘুম থেকে ওঠেন গিরিধারী পাল। ৫টায় বেরিয়ে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে হাওড়া। সেখান থেকে ১১টার মধ্যে ধর্মতলা।

SLST: বাচ্চা রেখে আসতে পারে না মেয়ে, চাকরির দাবিতে বৃদ্ধ বাবা এসে বসেন ধর্মতলায়
গিরিধারী পাল।
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 05, 2023 | 7:32 PM

সুমন মহাপাত্র

ঘরে ছোট্ট বাচ্চা। দেড় দু’বছর বয়স। নিয়মিত ধর্মতলার ধরনাতলায় (SSC SLST) এসে বসতে পারেন না চাকরিপ্রার্থী রূপা পাল। তাঁর বদলে সপ্তাহে দু’দিন ধর্মতলায় আসেন বাবা গিরিধারী পাল। ৬১ বছর বয়স তাঁর। এই শীতে বীরভূমের সাঁইথিয়া থেকে কলকাতার ধর্মতলায় আসা মোটেই সহজ নয় তাঁর জন্য। কিন্তু মেয়ের লড়াইয়ে কাঁধে কাঁধ মেলাবেন বলেই চলে আসেন নিয়ম করে। সাঁইথিয়ায় ঘড়ির দোকান গিরিধারীবাবুর। নিয়ম করে দোকান খুললে মাসে হাজার পাঁচেক টাকা রোজগার হয়। আপাতত সপ্তাহ দু’দিন দোকান বন্ধ, মাসে আটদিন। তাই রোজগারও কিছুটা কমেছে। তবে মেয়ের জন্য এ ত্যাগে বাবার কোনও আক্ষেপ নেই। গিরিধারী পাল বলেন, “মেয়ের বাচ্চাটার দেড় দু’বছর বয়স। মেয়ে তো আসতে পারে না। তাই আমি এখানে এসে বসি। অনেক আশা নিয়ে বসে আছি। চাকরি হবে কি না জানি না। কিন্তু মেয়ের স্বার্থে আসি।”

যে দু’দিন কলকাতা আসেন, ভোর ৪টের সময় ঘুম থেকে ওঠেন গিরিধারী পাল। ৫টায় বেরিয়ে বিশ্বভারতী ফাস্ট প্যাসেঞ্জার ধরে হাওড়া। সেখান থেকে ১১টার মধ্যে ধর্মতলা। আবার পৌঁনে ৪টেয় উঠে যান। বিশ্বভারতী ধরেন ৪টে ৩৫-এর। বাড়ি ঢুকতে ৯টা সাড়ে ৯টা। গিরিধারীবাবু জানান, রূপার বিয়ে হয়েছে। কোলের সন্তানকে ছেড়ে এখন ধরনায় আসা খুব কষ্টসাধ্য। তাই মেয়ের হয়ে ফুটপাতের ধুলোয় বুক ভরান ষাটোর্ধ্ব বাবা। সাঁইথিয়া বাজারে দোকান তাঁর। ৪৩ বছর ধরে ঘড়ি সারাচ্ছেন। মেয়েকে পড়ানোর সামর্থ্য ছিল না। রূপা টিউশন করে এমএ, বিএড পাশ করে চাকরির পরীক্ষায় বসেছিলেন। ভাল নম্বর পান বলে জানান বাবা। কিন্তু জোটেনি চাকরি।

গিরিধারী পালের কথায়, ” আমার মেয়ে যা রেজাল্ট করেছে, সরকার রেজাল্টের ভিত্তিতে চাকরি দিলে মেয়ে চাকরি পেতই। ওদেরও ৬৬২ দিন ধরে এখানে বসে থাকতে হতো না। মেয়ে নিজের যোগ্যতায় পড়াশোনা করেছে। আমি পড়াতে পারিনি। টিউশন করে খরচ চালিয়েছে। মেয়ে চাকরি পেলে আমিও খুশি হব, মেয়েও খুশি হবে বাবার জন্য।”

চাকরিপ্রার্থী করবী নস্কর রোজ আসছেন ধর্মতলায়। তিনি জানান, শুধু গিরিধরবাবুই নন, এমন অনেকেই আসেন, যিনি হয়ত নিজে চাকরিপ্রার্থী নন। তবে তাঁর বাড়ির কারও জন্য এভাবে ধর্মতলায় এসে বসেন। করবীর কথায়, “অনেকেই এখানে এসে ধরনায় বসেন। অনেক দিদিরাও আসেন। তাঁদের বর হয়ত চাকরি প্রার্থী, আসতে পারেন না। তাই দিদি আসেন। অনেক দাদাও আসেন স্ত্রীর বদলে। এই যে ৬১ বছরের একজন বাবা এসে বসেছেন মেয়ের জন্য। এগুলো দেখে কি কারও খারাপ লাগে না? আমাদের তো যোগ্যতা রয়েছে। তারপরও চাকরি পাই না। আমরা যাঁরা পারি, তাঁরা এসে বসি। আবার অনেকের দাদা, বাবা, কাকা, স্বামীরাও এসে বসেন। আমাদের চাকরি চুরি করে অন্যকে দেওয়া হয়েছে। সরকার তো সবই বুঝতে পারছে। একমাত্র সরকারই পারে আমাদের চাকরিটা দিতে।”