IS: ‘গুরু’ কুরেশির মগজধোলাইয়ে ‘চ্যালা’ সাদ্দাম খুঁজত শুধুমাত্র বাংলার শিক্ষিত তরুণদের!

IS: অনেকদিন ধরেই সম্পর্ক তা জোরাল করেছে। সাদ্দামের বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে বায়াত পাওয়া গেছে। আইএসের শপথ বাক্য।

IS: ‘গুরু’ কুরেশির মগজধোলাইয়ে ‘চ্যালা’ সাদ্দাম খুঁজত শুধুমাত্র বাংলার শিক্ষিত তরুণদের!
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Jan 10, 2023 | 2:49 PM

কলকাতা: গত সপ্তাহেই হাওড়া থেকে আইএস জঙ্গি সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত সন্দেহে মহম্মদ সাদ্দাম ও সইদ আহমেদ নামে দুই যুবককে গ্রেফতার করে কলকাতা পুলিশের এসটিএফ (STF)। এবার মধ্য প্রদেশ থেকে গ্রেফতার করা হল বাংলার আইএস মডিউলের মাথা আব্দুল রকিব কুরেশিকে। কলকাতা এসটিএফ তাঁকে গ্রেফতার করেছে। কলকাতায় ট্রানজিট রিমান্ডে এনে বুধবার ব্যাঙ্কশাল আদালতে তাঁকে তোলা হবে। সাদ্দাম-সইদদের পুলিশি হেফাজতে নিয়ে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য সামনে আসছে। বিশেষ করে আইএস-এ সাদ্দামের ভূমিকা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে গোয়েন্দারা। তদন্তে এসটিএফ জানতে পেরেছে, বাংলায় আইএস-এর সংগঠন বিস্তারে আব্দুল রকিব কুরেশির প্রধান ভরসা ছিলেন এই সাদ্দাম। সাদ্দামের উপর শিক্ষিত যুবাদের ‘মগজধোলাই’-এর ভার দিয়ে বেশ নিশ্চিন্তই ছিলেন ‘গুরু’ কুরেশি। এমনও সূত্রের খবর, সাদ্দামের মগজ ধোলাইয়ের শিকার সইদ আহমেদও। যিনি মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া।

কে এই কুরেশি

গোয়েন্দা তদন্তে জানতে পেরেছে, দীর্ঘদিন ধরে কট্টরবাদী ইসলামিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত এই আব্দুল রকিব কুরেশি। নিষিদ্ধ ইসলামিক সংগঠন সিমির প্রাক্তন সদস্য তিনি। তিনি দীর্ঘদিন ধরে ইসলামিক স্টেটের (IS) সঙ্গে যুক্ত ছিলেন, এমন তথ্য প্রমাণও গোয়েন্দারা পেয়েছে বলে সূত্রের খবর। এমনও জানা যাচ্ছে, সাদ্দামদের বাংলা আইএস মডিউলের মাথা ও হ্যান্ডলার কুরেশি। গোয়েন্দারা মনে করছেন, এই কুরেশির অঙ্গুলিহেলনেই পা ফেলতেন সাদ্দাম। সাদ্দামের দেশ ছাড়ার পরিকল্পনা ছিল বলেও তদন্তে উঠে এসেছে তথ্য। তার আগে ছিল হামলার ছকও। এই ছক সফল হলে মডিউলটি প্রচারে সুবিধা হতো তাঁদের।

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, দেশ ছাড়ার আগে অস্ত্র কেনার ছক, কীভাবে হামলা হবে সে সংক্রান্ত পরামর্শ কুরেশির কাছ থেকেই সাদ্দাম পেয়েছিলেন। কুরেশি কার্যত বাংলার মডিউলকে গাইড করছিলেন। গোয়েন্দাদের সন্দেহ, শুধু বাংলা নয়, আরও একাধিক রাজ্যে এই ধরনের মডিউল রয়েছে যার মাথায় কুরেশি হ্যান্ডলার হিসাবে কাজ করেন। সাদ্দাম গ্রেফতার হওয়ার পর তাঁর বাড়িতে অভিযান চালিয়ে মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ উদ্ধার করেন গোয়েন্দারা। সেখান থেকে কুরেশির ‘ক্লু’ পান তাঁরা। তারপরই খোঁজ শুরু হয় কুরেশির। এসটিএফের একাধিক টিম বিভিন্ন রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে। মধ্য প্রদেশে যে টিম গিয়েছিল, তাঁদের জালেই ধরা পড়েন তিনি।

সাদ্দামের ভূমিকা কী

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কুরেশিই সাদ্দামকে সমস্ত নির্দেশ দিতেন। কাদের সংগঠনে নিয়োগ করতে হবে, কীভাবে নিয়োগ করতে হবে, কোথায় প্রশিক্ষণ হবে, সব নখদর্পণে ছিল তাঁর। গোয়েন্দা সূত্রে খবর, কুরেশিই ভরসা দিয়েছিলেন, সাদ্দামের নিয়োগ করা যুবকরা প্রশিক্ষণ নিতে যাবেন বিদেশে। সিরিয়ায় পাঠানো হবে। টেকস্যাভি সাদ্দাম সোশাল মিডিয়ায়ও প্রচার চালাতেন বলে গোয়েন্দা সূত্রে খবর। সাদ্দাম ২০টির বেশি টেলিগ্রাম চ্যানেলের যুক্ত। এর মাধ্যমে বিদেশে যোগাযোগ করত তারা। জেহাদি কার্যকলাপ চলত। সিরিয়া সৌদি আরব থেকে অপারেট হতো। ২০টির বেশি টেলিগ্রাম প্রোফাইলে যুক্ত ছিলেন সাদ্দাম। কুরেশিই তাঁকে ঢুকিয়েছিল প্রোফাইলগুলিতে।

৩ জনের মগজ ধোলাই

গোয়েন্দা সূত্রে খবর, সাদ্দাম জেরায় জানিয়েছেন, ২০১৯ সালে ৮ মাসের জন্য নয়ডায় গিয়েছিলেন। ৩ জনের মগজ ধোলাই করেন তিনি। সাদ্দামকে গ্রেফতার করে তাঁদের বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে ১৮টির মতো ইলেকট্রনিক্স গেজেট পাওয়া গিয়েছে। বেশ কিছু নথি পাওয়া গিয়েছে। আইএসের সঙ্গে তার যোগাযোগ অনেকদিনের বলেই মনে করছেন গোয়েন্দারা।

অনেকদিন ধরেই সম্পর্ক তা জোরাল করেছে। সাদ্দামের বাড়ি থেকে পাওয়া গেছে বায়াত পাওয়া গেছে। আইএসের শপথ বাক্য। আইএসে গুরুক্বপূর্ণ পজিশনে যায়, গুরুত্বপূর্ণ জায়িত্ব দেওয়া হয় তাদের এই বায়াত পাঠ করানো হয়। সাদ্দাম সে পর্যায়ে পৌঁছেছিল। আর সেটা যে একদিনে সম্ভব নয়। সাদ্দামের ঘর থেকে যে ডায়েরি গোয়েন্দারা পেয়েছেন, তাতে আইএসআইএস-এর ‘শপথবাক্য’ (বায়াত) লেখা রয়েছে। সাদ্দাম হাতে লিখেছেন তা। এই বায়াত তাঁরাই পাঠ করেন, যাঁরা আইএসের গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন। এখনও অবধি তথ্য অনেক উঠে এসেছে। তবে সবই তদন্ত করে দেখছেন গোয়েন্দারা।