মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩৫–ঝাড়খণ্ডের লাতেহার আর পালামৌ জেলার ছোটনাগপুর মালভূমির মাঝে বেতলা জাতীয় উদ্যান সফর

Motorcycle Ride: আজকের দিনের শেষ গন্তব্য স্থান হাজারিবাগের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে হাজারিবাগের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। ম্যাপ অনুযায়ী প্রায় চার ঘণ্টা; তাই আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হাজারিবাগের দিকে। প্রথমে মানিকা, তারপর লাতেহার, চান্দ্বা হয়ে নাকটা হিল।

মোটরসাইকেল ডায়েরিজ: পর্ব ৩৫–ঝাড়খণ্ডের লাতেহার আর পালামৌ জেলার ছোটনাগপুর মালভূমির মাঝে বেতলা জাতীয় উদ্যান সফর
Follow Us:
| Updated on: Jan 27, 2024 | 3:29 PM

রাতের দিকে বেশ খানিকটা বৃষ্টি হওয়ার কারণে আবহাওয়া বেশ শীতল। সকালে ঘুম থেকে উঠে জানলা খুলেই দেখি চারপাশে ঘন কুয়াশায় ঢাকা। যতটা দেখা যায় নেতারহাটের অভয়ারণ্য চিরসবুজ। আর একটা কথা না বললেই নয়, এখানে আসার আগে হোটেল বুকিং করে নেওয়া খুবই জরুরি। প্ল্যান অনুযায়ী, আমাদের বেতলা ন্যাশনাল পার্কে থাকার কথা ছিল। তাই যাত্রাপথ থেকে বেশ কিছুটা দূরে থাকার কারণে তাড়াতাড়ি সকালের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম হাজারিবাগ ওয়াইল্ডলাইফ সেঞ্চুরির উদ্দেশ্যে। আজ প্রায় ৩০০ কিলোমিটারের যাত্রা, গুগল ম্যাপ দেখাচ্ছে সাড়ে ছ’ঘণ্টা, যাত্রাপথে অনেক স্পট কভার করতে হবে। তাই মোটামুটি পুরো দিনটাই লেগে যাবে আজ। প্রতিদিনের মতো খাবার অর্ডার দিয়ে বাইকের খুঁটিনাটি একটু ভাল করে দেখে নিলাম। খাওয়া শেষ করে জিনিসপত্র বেঁধে সকাল আটটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়লাম পালামৌ টাইগার রিজার্ভের উদ্দেশ্যে, যার দূরত্ব যদি ৬৪ কিলোমিটার।

এখানে প্রকৃতি একেবারেই শান্ত, চারিপাশে জঙ্গল। পাহাড় এবং কুয়াশার মাঝে বাইক চালানোর মজাই আলাদা। বেশ কিছুটা রাস্তা—পুরোটাই জঙ্গলের মধ্য়ে দিয়ে গিয়েছে। এবং তারপর পাহাড়ের মধ্যে অবস্থিত। তারপর নেতারহাট-ঘাগড়া মোড় থেকে বাঁ দিক নিয়ে চারিপাশের গভীর জঙ্গলের মধ্য দিয়ে প্রায় ৬০ কিলোমিটার বাইক চালিয়ে চলে এলাম কোয়েল নদীর উপরে অবস্থিত ব্রিজে। নদী পেরিয়ে ডান দিক থেকে চলে গিয়েছে পালামৌর টাইগার রিজার্ভের রাস্তা। এখানে জঙ্গল সাফারি সুবিধা আছে। বাইক নিয়ে যতটা দেখা যায় রিজার্ভের ভিতরে ততটা দেখে এখানে থাকা ওয়াচ টাওয়ারে সময় কাটিয়ে বেরিয়ে পড়লাম বেতলা ন্যাশনাল পার্কের উদ্দেশ্যে। দূরত্ব ৩০ কিলোমিটার।

বেতলা জাতীয় উদ্যান হল ঝাড়খণ্ডের লাতেহার এবং পালামৌ জেলার ছোটনাগপুর মালভূমিতে অবস্থিত। এই উদ্যান বিভিন্ন ধরনের বন্যপ্রাণী এবং গাছপালার জন্য বিখ্যাত। ৪০০ বর্গমাইল জুড়ে রয়েছে প্রচুর গাছপালা। তার মধ্যে শাল, বাঁশ এবং অনেকগুলোই ঔষধিগাছ। এই ফরেস্টের উত্তরে রয়েছে কোয়েল নদী। আর এর উপনদী রয়েছে পুরো জঙ্গল জুড়ে। আর প্রাণিজগতের মধ্যে হাতি, নেকড়ে, শিয়াল, হায়না, বানর, হরিণ এবং আরও অনেক পশুপাখি। এর সঙ্গে এখানে জঙ্গলে রাত কাটানোর সুবিধাও রয়েছে। ছোট-ছোট ট্রি-হাউস এবং সিমেন্টের তৈরি কটেজও আছে। এখানে গেলে ভাল করে জঙ্গলকে ঘুরে দেখুন। তার জন্য গাড়ির ব্যবস্থা আছে; আর পালামৌ ফোর্ট দেখতে ভুলবেন না। এই দুর্গের ওপর দিয়ে বেতলা ন্যাশনাল পার্কের ভিউ সব থেকে সুন্দর।

এখানে বেশ কিছুটা সময় কাটিয়ে এবং জঙ্গল সাফারি করতে বেশ খানিকটা সময় কেটে হয়ে গেল। তাই দুপুরের খাবার খেয়ে বেরিয়ে পড়লাম আজকের দিনের শেষ গন্তব্য স্থান হাজারিবাগের উদ্দেশ্যে। এখান থেকে হাজারিবাগের দূরত্ব ১৬০ কিলোমিটার। ম্যাপ অনুযায়ী প্রায় চার ঘণ্টা; তাই আর সময় নষ্ট না করে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে পড়লাম হাজারিবাগের দিকে। প্রথমে মানিকা, তারপর লাতেহার, চান্দ্বা হয়ে নাকটা হিল। চারিপাশে জঙ্গলের মধ্যে থেকে পুরো ৩৬০° ভিউ এক কথায় অসাধারণ। আমরা পৌঁছেছিলাম ঠিক সূর্য অস্ত যাওয়ার সময়। এই সময় প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনার কোনও ভাষা নেই। একটু বেশি দূরত্ব হলেও এই ১০০ কিলোমিটার রাস্তার সৌন্দর্য দেখার মতো। যে কোনও জায়গার সৌন্দর্যের থেকেই সেই জায়গায় পৌঁছনোর অভিজ্ঞতা এবং তার যাত্রাপথের সৌন্দর্য তা ভাষায় প্রকাশ করা যায় না।

সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ার কারণে রাতেই আমাদের কিছুটা বাইক চালানো দরকার হয়ে পড়ল, কারণ এখান থেকে হাজারিবাগের দূরত্ব ৫০ কিলোমিটার। তাই হাজারিবাগ শহরের মধ্যে আমরা রাত কাটিয়ে পরের দিন সকালে বেরিয়ে পড়লাম চামেলি ওয়াটার ফলসের উদ্দেশ্যে। শহর থেকে মাত্র ৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ওয়াটার ফলসটি অনেকটা পুরুলিয়ার মার্বেল লেকের মতো। চারপাশে সিলেট এবং মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি একটি নদী ড্যাম।

এর পরের গন্তব্য স্থান সালফর্নি ঝিল। এখানে কিছুটা সময় কাটিয়ে আমরা চলে এলাম পরের গন্তব্য স্থান, ঠিক ১৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত ক্যানারি হিল-এ। এই পাহাড়ের উপরে অবস্থিত ওয়াচ টাওয়ার দিয়ে পুরো হাজারিবাগ শহরটাকে দেখা যায়। বাইক নিয়ে কিছুটা উঠে তারপর বেশ অনেকগুলো সিঁড়ি পেরিয়ে আপনি পৌঁছে যাবেন এই হিলের টপ-এ।

এর পরের গন্তব্যস্থান ঠিক ৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত গালওয়ান ভ্যালি। চারপাশে ন্যাড়া পাহাড়ের মাঝে একটি ছোট জলাশয়, তাতে পাহাড় এবং আকাশের প্রতিচ্ছবি এতটাই ভাল ফুটে উঠেছে, যা দেখার জন্য হাজারো মানুষ ছুটে আসে এখানে।

এরপরে বাড়ি ফেরার পালা তাই ধানবাদ, আসানসোল, দুর্গাপুর হয়ে অবশেষে কলকাতা। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার রাস্তা, এই রাস্তা ক্রস করতে মোটামুটি ১০ ঘণ্টা সময় লেগে যাবে।