Vegetarian Restaurant: পৃথিবীর প্রথম নিরামিষ রেস্তোরাঁ কোথায়? ১২৫ বছরের পুরনো মেন্য়ু সার্ভ করা হয় সেখানে
Switzerland: প্রায় ১২৫ বছর ধরে হাউস হিল্টলে নিরামিষ খাবার সার্ভ করা হয়। নিরামিষ রেসিপির জন্য হাউস হিল্টলের নাম রয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। হাউস হিল্টলের মেন্যুতে সুইস থেকে শুর করে ভারতীয় খাবারও রয়েছে।
ভারতীয়রা নিরামিষ খাবার খেতে সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন। এমনকী বিশ্বের মধ্যে ভারতেই নিরামিষ খাবারের চল সবচেয়ে বেশি। কিন্তু বিশ্বের প্রাচীনতম নিরামিষ খাবারের রেস্তোরাঁ রয়েছে সুইজারল্যান্ডের জুরিখে। রেস্তোরাঁর নাম হাউস হিল্টল। ১৮৯৮ সালে থেকে এই রেস্তোরাঁ শুধু নিরামিষ খাবারই তৈরি করে। প্রায় ১২৫ বছর আগে হিল্টল পরিবারের সদস্য অ্যামব্রোসিয়াস হিল্টল জুরিখ শহরকে তাঁর পরিবারের ঐতিহ্যবাহী নিরামিষ খাবারের রেসিপির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্য এই রেস্তোরাঁ চালু করে ছিলেন। তারপর থেকে হিল্টল পরিবারের সদস্যরাই এই রেস্তোরাঁ পরিচালনার দায়িত্বে রয়েছেন এবং প্রায় ১২৫ বছর ধরে নিরামিষ খাবার তৈরি করে আসছে। নিরামিষ রেসিপির জন্য হাউস হিল্টলের নাম রয়েছে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডেও। হাউস হিল্টলের মেন্যুতে রয়েছে ভারতীয় খাবারও।
সুইজারল্যান্ডের মানুষ যেখানে মাংস খেতে ভালবাসত, সেখানে অ্যামব্রোসিয়াস হিল্টল কীভাবে নিরামিষ খাবারের রেস্তোরাঁ খুললেন? ১৮৯০ সালে অ্যামব্রোসিয়াস বাতের ব্যথায় ভুগছিলেন। সেই সময় আর্থ্রাইটিসের কোনও ভাল চিকিৎসাপদ্ধতি ছিল না। তখন তাঁকে এক চিকিৎসক মাংস ছেড়ে নিরামিষ খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন। তার পরেই জন্ম হয় হাউস হিল্টলের। তবে ১৮৯৮ সালে এই রেস্তোরাঁর নাম হাউস হিল্টল ছিল না। তখন নাম ছিল Vegetarianerheim and Abstinence-Café (ভেজিটেরিয়ানেরহেইম অ্যান্ড অ্যাব্সটিন্যান্স ক্যাফে)। সেই সময় এই রেস্তোরাঁর মেন্যুতে ছিল আলু এবং শাক-সবজির তৈরি পদ। তারপর থেকে এই রেস্তোরাঁর নাম বহুবার পরিবর্তন করা হয়েছে। আর বদল হয়েছে রেস্তোরাঁর মেন্যুও।
যখন এই রেস্তোরাঁটি জুরিখে চালু হয়েছিল, তখন ইউরোপে নিরামিষ খাবারের চল বেশি ছিল না। তখন মানুষ গরু ও শুয়োরের মাংস খেত। তখন মানুষের মধ্যে তাজা শাক-সবজি খাওয়ার চল কমই ছিল। জুরিখের মানুষেরা সেই সময় ভাবতেন, এটা হিপ্পি ও ভারতীয়দের জায়গা। অনেকের ধারণা হয়ে গিয়েছিল যে, এখানে নেশাগ্রস্তের মতো মানুষ শাক-সবজি খায়। জুরিখের মানুষ রীতিমতো ভয় পেত হাউস হিল্টলে যেতে। একসময় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয় যে, মানুষ রেস্তোরাঁয় আসা বন্ধ করে দেয়। প্রতিদিন রান্না করা খাবার নষ্ট হত হাউস হিল্টলের হেঁশেলে। কিন্তু কোনওদিন হাউস হিল্টলের দরজা বন্ধ হয়নি।
১৯১৫ সাল থেকে এই রেস্তোরাঁর চাহিদা বাড়তে থাকে। তবে গিনেস বুকে জায়গা করে নিতে সময় লেগে যায় প্রায় ১১০ বছরেরও বেশি। ২০১২ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে হাউস হিল্টলের নাম ওঠে বিশ্বের প্রাচীনতম নিরামিষ রেস্টুরেন্ট হিসেবে। আর এখন এখানে সুইস খাবারের পাশাপাশি ভারতীয়, এশীয়, ভূমধ্যসাগরীয় এবং বিশ্বের অন্যান্য জায়গার সব ধরনের নিরামিষ খাবার পাওয়া যায়।
এখন হাউস হিল্টল একটি পাঁচতলা রেস্তোরাঁ। নিরামিষ খাবারের পাশাপাশি এখানে রয়েছে একটা ছোটখাটো লাইব্রেরিও। সেখানে বিশ্বজুড়ে নিরামিষ খাবার সম্পর্কিত সমস্ত বই রয়েছে। রেস্তোরাঁর তরফেও এখানে বই প্রকাশিত করা হয়। সেখানে নিরামিষ খাবারের উপকারিতা এবং রেস্তোরাঁয় যে সব খাবার তৈরি হয়, তার রেসিপি থাকে। হাউস হিল্টল হল এমন একটি জায়গা যেখানে রাজমা চাওয়াল থেকে শুরু করে সুইস ডিশ সব কিছু পাওয়া যায়। জুরিখ বেড়াতে গেলে আপনিও ঢুঁ মারতে পারেন এই নিরামিষ রেস্তোরাঁয়।