ডাস্টবিনে স্তূপীকৃত অনলাইন শপিংয়ের প্যাকিং-বাক্স দেখে মহেশতলার শম্পা-মির্জানগর পুজো কমিটির মাথায় একটা ভাবনা আসে। কেমন হয় এই আবর্জনাকে শিল্পে রূপান্তরিত করলে? ভাবেন ওঁরা। সেই মতো আবাসনের ছোট-বড়রা মিলে ফেলে দেওয়া প্যাকিং বাক্স দিয়ে তৈরি করছেন একটা ঝাড়বাতি যা আলো দেবে পুজো মণ্ডপে।
বর্জ্য প্যাকিং বাক্সের ওপর মেদিনীপুরের পটচিত্র এঁকে এই আবাসনের আবাসিকদের বিকেল আর দুপুর কাটছে। অতিমারীতে আমাদের চারপাশে ঘিরে ছিল বিভিন্ন চতুষ্কোণ। তাই শিল্পী প্রিয়াঙ্কা জানা আকর্ষিত হন থিম হিসেবে বাক্স ব্যবহার করতে। এই কাজ শুরুর আগে আবাসনের আবাসিকদের নিয়ে ৪ দিনের কর্মশালাও করেন প্রিয়াঙ্কা। তারপর আবাসনের সবাই মিলে একসঙ্গে রঙ তুলি নিয়ে শুরু হয় দুর্গোৎসবের প্রস্তুতি।
প্রতিদিন নিয়ম করে ছবি আঁকছে ওরা। লকডাউনের অবসাদ কাটিয়ে রঙে-রেখায় উজ্জ্বল হচ্ছে ওদের শরতের দুপুর আর বিকেলগুলো। ওরা নিজেদের কল্পনায় দেবী ও তাঁর পুত্র-কন্যাদের বাহন আঁকছেন ফেলে দেওয়া বাক্সের উপর।
শুভাঙ্গি , সুহৃদ , শ্রেয়স আর সুচেতারা একটা মুক্তির বাতাবরণ পেয়েছে এই বাক্স গুলো নিজেদের মত করে আঁকার সুযোগ পেয়ে। ওদের আঁকা মেদিনীপুর পটচিত্র থেকে একটু সরে এসে তৈরি করেছে স্বতন্ত্র একটা ধারা।
মণ্ডপ সজ্জ্বায় এই বাক্সগুলো ছাড়াও ব্যবহৃত হবে গামছা এবং শাড়ি। মণ্ডপের কেন্দ্রস্থলে আলো ছড়াবে এই বাক্স গুলো দিয়ে তৈরি একটা বিশাল ঝাড়বাতি।
ট্র্যাশ টু আর্ট এই সময়ের খুব জনপ্রিয় পরিবেশ বান্ধব একটা বিষয়। বর্জ্য বা ট্র্যাশ যে কেবলই ত্রাস নয় তা আবার দেখিয়ে দিল মহেশতলার এই পুজো মণ্ডপ। একই সঙ্গে পুজো কমিটির এই উদ্যোগের ফলে আবাসনের বাসিন্দারা একে অপরের কাছাকাছি এসে উৎসবের আগাম উদযাপনও যেন শুরু করে দিলেন।
চারদিনের দুর্গোৎসব ওদের জন্য শুরু হয়ে গেছে এখন থেকেই। রঙে রেখায় আড্ডায়, হাসি গল্পে উৎসবের উদযাপনে মুখর ওরা। ওদের সবার অংশগ্রহণে দুর্গোৎসব এখানে সত্যিই সর্বজনীন হয়ে উঠছে।