Bohag Bihu 2022: যৌবন ও আনন্দের বহাগ বিহু! অসমের এই জনপ্রিয় উত্‍সবের গুরুত্ব কী?

Assamese New Year: চৈত্রের দুমাসের দিন গরু বিহুর আরম্ভ হয়ে ক্রমে মানুষ বিহু, হাত বিহু, চেনেহী বিহু, মাইকী বিহু, রঙালী বিহু এবং শেষের দিন চেরা বিহুর বহাগ বিহু সমাপ্ত হয়।

Bohag Bihu 2022: যৌবন ও আনন্দের বহাগ বিহু! অসমের এই জনপ্রিয় উত্‍সবের গুরুত্ব কী?
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 12, 2022 | 8:17 AM

ব’হাগ বিহু (Bohag Bihu) বা রঙালী বিহু ( Rongali Bihu) বসন্তের আগমনে উদ্‌যাপন করা অসমের (Assam)  মূল বিহু উৎসব। বসন্তের আগমনে যখন প্রকৃতি নতুন রূপে জেগে ওঠে, তখন চহা জনতা জীবন উপভোগ করতে এগিয়ে আসে। রঙালী বিহু যৌবনের উৎসব। ডেকা গাভরু রাতি বিহু শুরু করে, বিহুর মধ্যে নিজের জীবন সঙ্গী বেছে নেয়। কৃষি সংস্কৃতির আরম্ভ থেকে এমনধরনের উৎসব চলে আসছে। যৌবনের সঙ্গে চাষ মাটির উর্বরতার সম্বন্ধ আছে বলে মানুষ বিশ্বাস করে। সেজন্য চাষ আরম্ভ করার আগে আগে পালন করা রঙালী বিহুর কৃষির সঙ্গে ওতপ্রোত সম্বন্ধ আছে।

ব’হাগ বা রঙালী বিহু, একসঙ্গে সাতদিন ধরে উদ্‌যাপন করা হয়। চৈত্রের সংক্রান্তির দিনের থেকে আরম্ভ করে বৈশাখের ৬ তারিখ পর্যন্ত সাত দিন ধরে থাকে। প্রত্যেক দিনের বিহুর একধরনের নাম আছে। এটি “সাত বিহু” বলে পরিচিত। চৈত্রের দুমাসের দিন গরু বিহুর আরম্ভ হয়ে ক্রমে মানুষ বিহু, হাত বিহু, চেনেহী বিহু, মাইকী বিহু, রঙালী বিহু এবং শেষের দিন চেরা বিহুর বহাগ বিহু সমাপ্ত হয়। ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পারে তার একটি দিন গোঁসাই বিহু বলেও পালন করা যায়। অবশ্য এই সাত বিহুর পরম্পরা বর্তমান বিলুপ্তপ্রায়।

হিন্দু সৌর ক্যালেন্ডারের প্রথম দিন হিসাবে বিবেচিত হয় এবং ভারতে কৃষক সম্প্রদায় ব্যাপকভাবে উদযাপন করে। অসমে যখন বিহু উদযাপন হবে, অন্যান্য রাজ্যগুলিও তাদের রীতিনীতি এবং আচার অনুসারে বৈশাখী, পয়লা বৈশাখ, বিষু, পুথান্ডু, জুর সিতাল ইত্যাদি উদযাপন করবে। বিহুকে অসমীয়া নববর্ষ হিসেবেও বিবেচনা করা হয়। এই বিহুর প্রথম দিন অর্থাৎ চৈত্র সংক্রান্তির দিন গোরু বিহু নামে পরিচিত। এই দিন গোরুদের পরিষ্কার করিয়ে পুজো করা হয়। পরের দিন মানুহ বিহু পালন করা হয়। এই দিন নতুন বস্ত্র পরিধান করে নতুন বছর উদ্‌যাপন করা হয়। পরের দিন দেবতার মূর্তিকে স্নান করিয়ে প্রার্থনা করা হয়ে থাকে। ব্রহ্মপুত্রের উত্তর পাড়ে ‘গোঁসাই বিহু’ নাম এই উৎসব পালন করা হয়। এই সময় বিহুগীত সহযোগে বিহু নৃত্যের মাধ্যমে যুবক-যুবতীরা উৎসব পালন করে থাকেন।

বিহুর তাৎপর্য: বোহাগ বিহু বসন্ত ঋতুর শুরুতে উদযাপন করে এবং সাধারণত এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়ে।

উত্সব ফসল কাটার সময় নির্দেশ করে। অসমিয়ারা ঐতিহ্যগতভাবে বছরে তিনবার বিহু উদযাপন করে যা বিভিন্ন ঋতুকে বোঝায় – বোহাগ বিহু, ভোগালী বিহু এবং কোঙ্গালি বিহু। বাংলা, মণিপুর, পাঞ্জাব, নেপাল, উড়িষ্যা, কেরালা এবং তামিলনাড়ুতে বিভিন্ন নামে এই উৎসব পালন করা হয়। এই দিনে, কৃষক সম্প্রদায় সারা বছর ভাল ফসলের জন্য সর্বশক্তিমানকে ধন্যবাদ জানায় এবং ভবিষ্যতেও সফল ফসলের আশা করে।

বিহু তারিখ: এই বছর, উত্সব ১৪ এপ্রিল শুরু হবে এবং ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে৷ টানা ২ দিন ধরে চলে এই ঐতিহ্যবাহী উত্‍সব।

বিহু উদযাপন: নতুন বছর শুরু হয় বোহাগ বা রোঙ্গালি বিহু দিয়ে৷ ‘রঙ্গোলি’ শব্দটি এসেছে ‘রং’ শব্দ থেকে যার অর্থ আনন্দ এবং উদযাপন। বিহুর প্রাক্কালে, মহিলারা চিড়া, পিঠা ইত্যাদির মতো বিহু উপাদেয় খাবার তৈরি করেন। রঙ্গালী বা বহাগ বিহু হচ্ছে আনন্দের বিহু । বৈশাখ মাসের প্রথম দিন থেকেই গান-বাজনা ও বিহু নৃত্যের মাধ্যমে রঙ্গালী বিহু অনুষ্ঠান পালন করা হয় । রঙ্গালী বিহু মূঃলত অসমীয়া জাতির সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান কিন্তু এখানে অসমের বিভিন্ন জনজাতি যেমন: বড়ো, তিবা, কছাড়ি ইত্যাদি জনজাতিরা নিজেদের সাংস্কৃতি প্রকাশ করার সুযোগ পায় । অসমীয়া সংস্কৃতির বাদ্যযন্ত্র ঢোল, পেপা, বাশি ব্যবহার করে গাওয়া গান ও বিহু নর্তকদের নাচ বিহু মঞ্চকে সুমধুর করে তোলে । উল্লেখযোগ্য যে এই অনুষ্ঠানটি বিনামুল্যে উপভোগ করার সুবিধা দেওয়া হয় । এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ছোট- বড় সবাই নিজের প্রতিভা প্রকাশ করার সুযোগ পায়। সাধারনতঃ এই অনুষ্ঠান সন্ধ্যাকাল থেকে আরম্ভ হয় ও পরদিন সূর্য উদয় হওয়ার ঠিক পুর্বে সমাপ্ত করা হয়। আসামের বিভিন্ন স্থান থেকে আমন্ত্রিত শিল্পী দ্বারা গানের অনুষ্ঠান করা হয়। আগেকার বিহু অনুষ্ঠানে কেবল বিহু ও অসমীয়া গান গাওয়ার অনুমতি ছিল কিন্তু বর্ত্তমান দিনে স্থানভেদে হিন্দি, বাংলা ও নেপালি গান গাওয়ার প্রচলন হয়েছে।

উৎসবে গান গাওয়া এবং ভোজ দেওয়া হয় এবং ঐতিহ্যবাহী বিহু নৃত্য পুরুষ ও মহিলারা পরিবেশন করে। দিন শুরু হয় কাঁচা হলুদ এবং উরদ ডালের পেস্ট দিয়ে স্নান করে। তারপর নতুন জামাকাপড় পরে এবং তাদের বড়দের কাছ থেকে আশীর্বাদ চায় এবং উপহার বিনিময় করে। এর পর হালকা সকালের নাস্তা করা হয় যেখানে চাল এবং গুড় দিয়ে আঠালো ভাত পরিবেশন করা হয়।

আরও পড়ুন: Vastu Tips: ভোগ নিবেদনের সময় এই ভুলগুলি এড়িয়ে চলুন! নইলে হতে পারে চরম বিপদ