Saraswati Puja 2022: সরস্বতীর স্বামী ও পিতা হলেন একজনই! তিনি কে, জানা আছে?
পুরাণে কথিত হয়েছে, ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তখনই নিজের কাজের সুবিধার জন্য এক সুন্দরী নারীকে তৈরি করেন তিনি। শতরূপা, গায়ত্রী, সরস্বতী, সাবিত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিতা সেই নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন ব্রহ্মা।
আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপরেই শুরু হবে বাঙালির ভ্য়ালেন্টাইন ডে থুরি সরস্বতী পুজো। আর সেই নিয়ে এখন থেকেই শুরু হয়েছে পুজোর প্ল্যানিং নিয়ে। মাঘ মাসের পঞ্চমী তিথিতে সরস্বতী পুজো হয় বলে এই দিনটি বসন্ত পঞ্চমী নামেও পরিচিত। হিন্দু ধর্ম অনুসারে সরস্বতী বিদ্য়া, শিল্পকলা ও সঙ্গীতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী।
সরস্বতীর জন্মবৃত্তান্ত এবং বিবাহ নিয়ে অনেক কিংবদন্তী আছে। কেউ বলেন পরমাত্মার মুখ থেকে নির্গত হয়ে তিনি পাঁচ ভাগে বিভক্ত হন: রাধা, পদ্মা, সাবিত্রী, দুর্গা ও সরস্বতী। আবার কারও মতে পিতা ব্রহ্মার মানসকন্যা তিনি। যদিও ব্রহ্মার মানসকন্যা সরস্বতী, তবুও পিতা ব্রহ্মা তাঁর এই সুন্দরী কন্যাটিকে কামনা করে বসলেন। পিতার এই চাহনি কন্যার পছন্দ হল না । কন্যা এড়িয়ে চলতে লাগল পিতাকে। পালিয়ে বেড়াতে লাগে। ব্রহ্মা অসন্তুষ্ট হলেন। কামদেব মদনকে অভিশম্পাত করলেন যে কেন এই সুন্দরী কন্যার প্রতি তাঁর সম্ভোগ লালসা রূপায়িত হচ্ছে না, এই বলে। অচিরেই শিবের দ্বারা মদন ভস্মীভূত হল সেই ক্ষমতার অপব্যবহার!
অন্যদিকে আবার অনেকে যুক্তি দেন, ব্রহ্মা যেমন জ্ঞানের প্রতীকী। কিন্তু জ্ঞান একটি আধার, তার থেকে নদীর মতন বাক্যের মাধ্যমে যে নির্যাস বেরিয়ে আসে তাই হল বিদ্যা। তাই জন্যেই সরস্বতী দেবী বিদ্যার দেবী, নদী স্বরূপিনী, বাগদেবী। যেহেতু বিদ্যা জন্ম নিয়েছে জ্ঞানের ক্রোরে, তাই বলা হয় সরস্বতী দেবী ব্রহ্মাজাত। অনেকে বলেন সরস্বতী ব্রহ্মার মানস কন্যা। আবার স্ত্রীও বটে। এমন তথ্য কতটা যুক্তিযুক্ত!
ব্রহ্ম হল আদি অনন্ত অবিনশ্বর অজ্ঞাত। কিন্তু তার এই অজ্ঞাত রূপ কে দুটি ভাগ করা যায় – পুং এবং স্ত্রী। যাই স্থির, অবিচল তাই পুং। যেমন হিমালয়। যা বয়ে যায় সেই স্ত্রী। যেমন গঙ্গা। হিন্দু ধর্মের সর্বোচ্চ আসনে থাকা তিন দেবতার অন্যতম হলেন ব্রহ্মা। ব্রহ্মা, বিষ্ণু ও মহেশ্বরকে নিয়েই ত্রিমূর্তি। এই পুং কে তিনটি ভাবে প্রকাশিত হতে দেখা যায় – ব্রহ্মা ( যার থেকে সবার উৎপত্তি), বিষ্ণু (যে অস্তিত্বের পালক) এবং মহেশ্বর (যে ধ্বংসের মধ্যে দিয়ে সৃষ্টির চক্রবূহ কে আবার চালিত করে)। কিন্তু যাই পুং থাকবে তারই স্ত্রী রূপ চাই। কারণ পুং এবং স্ত্রী এই দুটি রূপের সামঞ্জস্য না থাকলে। ব্রহ্মার স্ত্রী রূপ সরস্বতী, বিষ্ণুর স্ত্রী রূপ লক্ষী (ধন/খাদ্যশস্য), এবং মহেশ্বরের স্ত্রী চণ্ডী (যার দুটি রূপ কালি এবং দুর্গা – অসংযত ও সংযত ধ্বংস)।
ব্রহ্মা কেন পূজিত হন না, তার কিছু শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যাও রয়েছে। পুরাণে কথিত হয়েছে, ব্রহ্মা যখন সৃষ্টি প্রক্রিয়া চালাচ্ছেন তখনই নিজের কাজের সুবিধার জন্য এক সুন্দরী নারীকে তৈরি করেন তিনি। শতরূপা, গায়ত্রী, সরস্বতী, সাবিত্রী বা ব্রহ্মাণী নামে পরিচিতা সেই নারীর প্রতি কামাসক্ত হয়ে পড়েন ব্রহ্মা। শতরূপা ব্রহ্মার চোখের আড়াল হওয়ার চেষ্টা করতে থাকেন। তাঁর উপর নজর রাখতে নিজের ঘাড়ের উপর পাঁচদিকে পাঁচটি মাথা তৈরি হয়ে যায় ব্রহ্মার। শতরূপা তখন ব্রহ্মার কামাবেগ থেকে নিজেকে বাঁচাতে নানা পশুর ছদ্মবেশ ধরে পালাতে থাকেন। ব্রহ্মাও একে একে সেইসব পশুর পুরুষ রূপ ধারণ করে শতরূপার পিছু নেন। বলা হয়, এইভাবেই তৈরি হয় জীবকূল। শতরূপা বাঁচতে একটি গুহার ভিতর আশ্রয় নেন। ব্রহ্মা সেই গুহাতেই মিলিত হন শতরূপার সঙ্গে। শতরূপা ছিলেন ব্রহ্মার কন্যা। কিন্তু তাঁর সঙ্গেই মিলিত হন ব্রহ্মা। এই অবৈধ যৌনাচারের অপরাধে শিব ব্রহ্মার পঞ্চম মাথাটি কেটে দেন, এবং অভিশাপ দেন যে, ধরাধামে কেউ ব্রহ্মার পূজা করবে না।
আরও পড়ুন: Saraswati Puja 2022: বাগদেবীর আরাধনার শুভতিথি কখন? বাড়িতে পুজো করলে কী মন্ত্র পড়বেন, জানুন