Kamakhya Shaktipeeth: কোচবিহারের সঙ্গে কামাখ্য়া মন্দিরের নিবিড় যোগ রয়েছে! এর পিছনে রয়েছে জোরালো ইতিহাস

অভিশাপপ্রাপ্ত হয়ে মহারাজা নরনারায়ণ অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা করে বলেন যে, তার অপরাধে তার বংশধরদের মূর্তি দর্শন ও পূজা দেওয়া হবে না। এতে মা সদয় হয়ে বলেন তিনি বানেশ্বর শিব মন্দির এর কাছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেবী বিগ্রহ এবং পাশে কামরাঙ্গা বৃক্ষে দেবীরূপে সর্বদা অবস্থান করবেন।

Kamakhya Shaktipeeth: কোচবিহারের সঙ্গে কামাখ্য়া মন্দিরের নিবিড় যোগ রয়েছে! এর পিছনে রয়েছে জোরালো ইতিহাস
কামাখ্য়া মন্দির
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 27, 2021 | 6:32 AM

কামাখ্যা মন্দির হচ্ছে ভারতের অসম রাজ্যের গুয়াহাটি শহরের পশ্চিমাংশে নীলাচল পর্বতে অবস্থিত। হিন্দু দেবী কামাখ্যার মন্দিরটি ৫১ সতীপীঠের অন্যতম। ৫১টি শক্তি পীঠের মধ্যে একটিতে এবং ৪টি আদি শক্তি পিঠগুলির মধ্যে, কামাখ্য মন্দিরটি বিশেষ কারণ দেবী সতীর গর্ভ এবং যোনি এখানে পড়েছিল এবং এইভাবে দেবী কামাখ্যাকে উর্বরতার দেবী বা “রক্তক্ষরণকারী দেবী” বলা হয়। এই মন্দির চত্বরে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। এই মন্দিরগুলিতে দশমহাবিদ্যা অর্থাৎ ভুবনেশ্বরী, বগলামুখী, ছিন্নমস্তা, ত্রিপুরাসুন্দরী, তারা, কালী, ভৈরবী, ধূমাবতী, মাতঙ্গী এবং কমলা এই দশ দেবীর মন্দির রয়েছে। তার মধ্যে ত্রিপুরাসুন্দরী, মাতঙ্গী এবং কমলা প্রধান মন্দিরে পূজিত হন। অন্যান্য দেবীদের জন্য পৃথক মন্দির আছে। হিন্দুদের বিশেষত তন্ত্রসাধকদের কাছে এই মন্দির একটি পবিত্র তীর্থ।

কামাখ্যা মন্দিরে চারটি কক্ষ আছে, গর্ভগৃহ ও তিনটি মণ্ডপ যেগুলোর স্থানীয় নাম চলন্ত, পঞ্চরত্ন এবং নাটমন্দির। গর্ভগৃহটি পঞ্চরথ স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। অন্যগুলির স্থাপত্য তেজপুরের সূর্যমন্দিরের সমতুল্য। সেগুলিতে খাজুরাহো বা অন্যান্য মধ্যভারতীয় মন্দিরের আদলে নির্মিত খোদাইচিত্র দেখা যায়। মন্দিরের চূড়াগুলি মৌচাকের মতো দেখতে। অসমের বিশেষ করে গুয়াহাটির বহু মন্দিরে এই ধরনের চূড়া দেখা যায়। গর্ভগৃহটি আসলে ভূগর্ভস্থ একটি গুহা। সেখানে কোনও মূর্তি নেই। শুধু একটি পাথরের সরু গর্ত দেখা যায়। গর্ভগৃহটি ছোটো ও অন্ধকারাচ্ছন্ন। সরু খাড়াই সিঁড়ি পেরিয়ে ওখানে পৌঁছাতে হয়। ভিতরে ঢালু পাথরের একটি খণ্ড আছে যেটি যোনির আকৃতিবিশিষ্ট। সেটিতে প্রায় দশ ইঞ্চি গভীর একটি গর্ত দেখা যায়। একটি ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনের জল বেরিয়ে এই গর্তটি সবসময় ভর্তি রাখে। সেই গর্তটিই দেবী কামাখ্যা নামে পূজিত এবং দেবীর পীঠ হিসেবে প্রসিদ্ধ।

কামাখ্যা মন্দির চত্বরের অন্যান্য মন্দিরগুলিতেই একই রকম আকৃতিবিশিষ্ট পাথর দেখা যায়, যা ভূগর্ভস্থ জল দ্বারা পূর্ণ থাকে। বর্তমান মন্দির ভবনটি অহোম রাজাদের রাজত্বকালে নির্মিত। তার মধ্যে প্রাচীন কোচ স্থাপত্যটি সযত্নে রক্ষিত হয়েছে। খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় সহস্রাব্দের মাঝামাঝি সময় মন্দিরটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হলে ১৫৬৫ সাল নাগাদ কোচ রাজা চিলরায় মধ্যযুগীয় মন্দিরের স্থাপত্যশৈলী অনুসারে মন্দিরটি পুনরায় নির্মাণ করে দেন। এখন যে মৌচাক আকারের চূড়াটি দেখা যায় তা নিম্ন অসমের মন্দির স্থাপত্যের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। মন্দিরের বাইরে গণেশ এবং অন্যান্য হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তি খোদিত আছে। মন্দিরের তিনটি প্রধান কক্ষ। পশ্চিমের কক্ষটি বৃহৎ এবং আয়তাকার। সাধারণ তীর্থযাত্রীরা এটি পূজার জন্য ব্যবহার করেন না। মাঝের কক্ষটি বর্গাকার। এখানে দেবীর একটি ছোটো মূর্তি আছে। সেই মূর্তিটি পরবর্তীকালে এখানে স্থাপিত হয়। সেই কক্ষের দেয়ালে নরনারায়ণ, অন্যান্য দেবদেবী এবং তৎসম্পর্কিত শিলালেখ খোদিত আছে। মাঝের কক্ষটিই মূল গর্ভগৃহে নিয়ে যায়। সেটি গুহার আকৃতিবিশিষ্ট। সেখানে কোনো মূর্তি নেই। শুধু যোনি আকৃতিবিশিষ্ট পাথর এবং ভূগর্ভস্থ প্রস্রবনটি আছে। প্রতিবছর গ্রীষ্মকালে অম্বুবাচী মেলার সময় কামাখ্যা দেবীর ঋতুমতী হওয়ার ঘটনাকে উদযাপন করা হয়। সে সময় মূল গর্ভগৃহের প্রস্রবনের জল আয়রন অক্সাইডের প্রভাবে লাল হয়ে থাকে। ফলে সেটিকে ঋতুস্রাবের মতো দেখতে হয়।

কোচবিহারের মহারাজা নরনারায়ণ এবং তার ভ্রাতা চিলারায় মা কামাখ্যার বিশেষ ভক্ত ছিলেন। কথিত আছে, সন্ধ্যা আরতির সময় বাজনা শুরু হলে কামাক্ষা দেবী স্বয়ং নগ্নমূর্তিতে আবির্ভূত হতেন এবং বাজনার তালে তালে নৃত্য করতেন। একদিন মহারাজ কেন্দুকলাই নামক পূজারী ব্রাহ্মণ এর সাহায্যে আড়াল থেকে নৃত্যরতা দেবীকে দর্শন করেন। এর জন্য মা কামাখ্যা দেবী অসন্তুষ্ট হয়ে অভিশাপ দেন যে, “রাজ পরিবারের কেউ কামাখ্যা মন্দির দর্শন করতে পারবেন না । রাজবংশের যিনি কামাক্ষা মন্দির দর্শন করবেন তিনি বা তার পরিবার মৃত্যুমুখে পতিত হবেন।” রাজার মৃত্যু দর্শনের মুহূর্তেই পূজারী ব্রাহ্মণ কেন্দু কলাই এর মৃত্যু হয়। অভিশাপপ্রাপ্ত হয়ে মহারাজা নরনারায়ণ অত্যন্ত মর্মাহত হয়ে মায়ের কাছে আকুল প্রার্থনা করে বলেন যে, তার অপরাধে তার বংশধরদের মূর্তি দর্শন ও পূজা দেওয়া হবে না। এতে মা সদয় হয়ে বলেন তিনি বানেশ্বর শিব মন্দির এর কাছে সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের দেবী বিগ্রহ এবং পাশে কামরাঙ্গা বৃক্ষে দেবীরূপে সর্বদা অবস্থান করবেন। মহারাজগন এবং তার বংশধরেরা সেখানে পূজা দিলে ও দর্শন করলে মা কামাখ্যার পুজা ও দর্শন হবে।

আরও পড়ুন: Pitri Paksha 2021: শুরু হয়ে গিয়েছে পিতৃপক্ষ! এই সময় কী করবেন এবং কী কী করবেন না, জানুন