AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Guru Purnima 2021: গুরু পূর্ণিমা নিয়ে রয়েছে কিছু পৌরাণিক কাহিনি, যা অনেকেরই অজানা

আমাদের দেশে হিন্দুসমাজে গুরু-শিষ্য পরম্পরা বহু প্রাচীন প্রথা। সদগুরুর আশ্রয়ে থেকে, তাদের। নির্দেশিত পথে থেকে ও কাজ করে অগণিত শিষ্য দেশ ও সমাজে বহু।

Guru Purnima 2021: গুরু পূর্ণিমা নিয়ে রয়েছে কিছু পৌরাণিক কাহিনি, যা অনেকেরই অজানা
বেদব্যাসকে আদিগুরুও বলা হয়।
| Edited By: | Updated on: Jul 24, 2021 | 12:53 PM
Share

শাস্ত্রে গুরুর সংজ্ঞা দিয়ে বলা হয়েছে, ‘’অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য জ্ঞানাঞ্জন শলাকায়া, চক্ষুরুন্মীলিতং যেন তস্মৈ শ্রীগুরবে নমঃ”। অর্থাৎ, অন্ধকার, তিমির সরিয়ে যিনি আমাদের জ্ঞানের দিকে নিয়ে যান। তিনিই ‘গুরু’ বলে অভিহিত হন। গুরু এবং দেবতা একই মর্যাদার অধিকারী। যেমন ভক্তি দেবতাদের জন্য প্রয়োজন, সেই একই ভক্তি গুরুর প্রাপ্য। কারণ সদগুরুর কৃপায় ঈশ্বর দর্শনও হতে পারে; গুরুকৃপা ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়। বিদ্যা অধ্যয়ন ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীত জগতেও গুরুশিষ্য পরম্পরা বিদ্যমান। গুরুপূর্ণিমার দিনে গুরুপূজনের বিশেষ মাহাত্ম্য আছে। এইদিন শিষ্যগণ নিজেদের তন-মন-ধন সমর্পণ করে গুরু আরাধনায় ব্রতী হন।

গুরু পূর্ণিমা ভারতের প্রাচীনকাল থেকে গুরু-শিষ্য পরম্পরার এক দেদীপ্যমান উৎসব। গুরু-শিষ্যের মহান সম্পর্কের উপর আধারিত এই পূর্ণিমা। গুরু নানা ধরনের হতে পারেন— আধ্যাত্মিক, পঠনপাঠন ইত্যাদি ক্ষেত্রে জ্ঞানদান করে শিষ্যকে আধ্যাত্মিক, মানবিক শিক্ষায়। শিক্ষিত করে, জ্ঞানের আলোকে নিয়ে যাওয়ার পরম্পরা প্রাচীনকাল থেকে ভারতবর্ষে চলে আসছে।

আষাঢ় মাসের পূর্ণিমাকে গুরুপূর্ণিমা বলে অহিহিত করা হয়। এইদিন সমস্ত ধরনের গুরুদের পূজার বিধান আছে আমাদের শাস্ত্রে। গুরুপূর্ণিমা বর্ষা ঋতুর শুরুতেই আসে। ভারতীয় ঐতিহ্য অনুসারে এইদিন থেকে শুরু করে চার মাস পরিব্রাজক সাধুসন্তগণ কোনো বিশেষ স্থানে অবস্থান করে তাদের শিষ্যদের জ্ঞান দান করেন। গুরুচরণে বসে সাধক, ছাত্র সবাই এই ঋতুতে জ্ঞান, আধ্যাত্মিক শক্তি, ভক্তি আর যোগ জ্ঞান লাভ করার সামর্থ্য লাভ করেন। আবার এই গুরুপূর্ণিমাকে ব্যাস পূর্ণিমা বলা হয়।

এই দিনেই মহাভারত রচয়িতা মহাত্মা কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন। ব্যাসদেবের জন্মদিন। তিনি পরাশর মুনি এবং কৈবর্ত কন্যা সত্যবতীর পুত্র। তিনি বৈদিক স্তোত্রসমূহ সংগ্রহ করে চার ভাগে বিভক্ত করে চার বেদও রচনা করেন। চারটি বেদ হল ঋক, সাম, যজু ও অথর্ব। তিনি এই বেদজ্ঞান তার চার প্রধান শিষ্য পৈল, বৈশম্পায়ন, জৈমিনি, এবং সুমন্তকে শিক্ষাদান করেন। এই জন্য তিনি বেদব্যাস নামেও পরিচিত। তাঁকে আদিগুরুও বলা হয়। তিনি ব্রহ্মসূত্রও রচনা করেন; তার ব্রহ্মসূত্র লেখাও সমাপ্ত হয় এইদিন।

যোগশাস্ত্র অনুযায়ী, ভগবান শিব হলেন আদিগুরু। আর এই গুরুপূর্ণিমার দিনই ভগবান শিব আদিগুরু হিসেবে আবির্ভূত হন। কথিত আছে যে, প্রায় ১৫,০০০ বছর পূর্বে হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলে এক যোগী আবির্ভূত হন। তাঁর আদি কেউ জানতেন না। তিনি আবির্ভূত হলে বিপুল জনসমাগম হয়। তার কোনো প্রাণের স্পন্দন দেখা গেল না, কিন্তু তার গণ্ডদেশ বেয়ে মাঝে মাঝে আনন্দাশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল। এসব দেখে অন্যরা সেখান থেকে চলে গেলেও সাতজন থেকে যান। সেই যোগী চক্ষু উন্মীলন করলে সেই সাতজন তাকে জিজ্ঞেস করলেন ওই যোগী কী অনুভব করছিলেন সেই সময়। কিন্তু তিনি উত্তর না দিয়ে তাঁদের মানসিক প্রস্তুতির জন্য নির্দেশ দিয়ে আবার চোখ বুঝলেন। এরপরে দিন, মাস, বছর অতিক্রান্ত হল, কিন্তু যোগীর দৃষ্টি তাদের উপর পড়ল না। এইভাবে তাঁদের সাধনার দীর্ঘ ৮৪ বছর অতিক্রান্ত হলে, দক্ষিণায়ন শুরু হলে সেই যোগী আবার তাঁদের দিকে চোখ মেলে তাকালেন। আর ওই সাতজন দীপ্তিময় আধারে পরিণত হলেন। আর ওই যোগীও আর তাঁদের অবহেলা করেননি। প্রতি পূর্ণিমার দিন ওই যোগী দক্ষিণ দিকে ঘুরে বসতেন ওই সাতজনের গুরু হিসেবে। এই যোগীই হলেন শিব, তিনি এইভাবে জগতের আদিগুরু হলেন। তার এই সাতজন শিষ্য হলেন বিখ্যাত সপ্তর্ষি— অত্রি, পুলহ, পুলস্ত, ক্রতু, অঙ্গিরা, বশিষ্ঠ, মারিচী। যোগ পরম্পরায় গুরুপূর্ণিমাকে পবিত্র হিসেবে গণ্য করা হয়।

কথিত আছে, বুদ্ধদেব নিরঞ্জনা নদীর তীরে বোধিবৃক্ষের নিচে ‘বুদ্ধত্ব’ বা জ্ঞান লাভ করার পাঁচ সপ্তাহ পরে বুদ্ধগয়া থেকে সারনাথে চলে যান। সেখানে তিনি তার পাঁচ পুরনো সঙ্গীকে প্রথম তার বাণী প্রদান করেন, কারণ তাঁর মনে হয়েছিল, ওই পাঁচজন তার ধর্মের বাণী সহজে বুঝতে এবং আত্মস্থ করতে পারবেন। ওই শিষ্যগণও বুদ্ধত্বপ্রাপ্ত হলেন। বুদ্ধদেব তাঁর প্রথম এই পাঁচ শিষ্যকে বাণী দান করেছিলেন এক আষাঢ় পূর্ণিমার দিন। বৌদ্ধগণ অষ্টাঙ্গিক মার্গ পালন করেন। এই দিনে তারা ‘বিপাসনা’ পদ্ধতির মাধ্যমে সাধনা করেন গুরু নির্দেশিত পথে। সারনাথে যেতে গৌতম বুদ্ধকে গঙ্গানদী পেরিয়ে যেতে হয়েছিল। রাজা বিম্বিসার যখন একথা শুনলেন, তিনি সন্ন্যাসীদের জন্য নদী পারাপার করার অর্থ নেওয়া বন্ধ করে দিলেন। নেপালে এই দিনটি ‘শিক্ষক দিবস’ হিসেবেও পালিত হয়। ছাত্ররা তাদের শিক্ষকদের শ্রদ্ধা জানান এই দিনে। শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে সুসম্পর্ক। স্থাপনের দিন হিসেবেও দিনটিকে গণ্য করা হয়। জৈন ধর্মেও এই দিনটি ত্রিনক গুহ পূর্ণিমা হিসেবে পালন করা হয়।

আমাদের দেশে হিন্দুসমাজে গুরু-শিষ্য পরম্পরা বহু প্রাচীন প্রথা। সদগুরুর আশ্রয়ে থেকে, তাদের। নির্দেশিত পথে থেকে ও কাজ করে অগণিত শিষ্য দেশ ও সমাজে বহু। অসাধ্যসাধন করেছেন। গুরু তাঁদের উপদেশের মাধ্যমে শিষ্যদের উদ্বুদ্ধ করে সমাজ ও রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রে অসাধ্যসাধনে। অনুপ্রাণিত করেছেন গুরু-শিষ্য। পরম্পরাতেই আমরা দেখতে পাই শঙ্করাচার্য-গোবিন্দপাদ, শ্রীকৃষ্ণ-সন্দীপনী মুনি, চন্দ্রগুপ্ত-চাণক্য, শিবাজী-রামদাস স্বামী, রামচন্দ্র-বশিষ্ঠ, বিবেকানন্দরামকৃষ্ণ— এই ধরনের অসংখ্য গুরু-শিষ্য জুটিকে। বিভিন্ন সময়ে এই ধরনের জুটি আমাদের দেশে বিশাল। সাম্রাজ্য স্থাপন করেছেন, ধর্ম ও সমাজ সংস্কার আন্দোলন করেছেন।

আরও পড়ুন: একজন নারী কি গুরুর পদে থেকে দীক্ষা দান করতে পারেন? আদর্শ গুরুর সংজ্ঞা কী?