করোনায় ‘যাযাবর’ রোনাল্ডো-এমবাপেরা!
গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে তাঁদের বিমানযাত্রা করতে হবে ২২৩০ মাইল। এই গ্রুপে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রা করতে হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। এমবাপেরা মোট ৩৯৪২ মাইল পথ বিমানে অতিক্রম করবেন ইউরোর গ্রুপ পর্বের খেলার সময়।
জুরিখঃ কতটা পথ পেরোলে তবে পথিক বলা যায়! ইউরো কাপের আগে গানের এই লাইনটা কেমন যে মিলেমিশে যাচ্ছে। কেন? পর্তুগাল(PORTUGAL), ফ্রান্স (FRANCE), পোল্যান্ডের(POLAND) মত হেভিওয়েট দলগুলির অন্দরমহলে কান পাতলে তো এই নিয়ে অসন্তোষ শোনা যাচ্ছে।রোনাল্ডোরা(CRISTIANO RONALDO) মাঠের এ প্রান্ত থেকে দৌড়ে যত না ক্লান্ত হবেন, তার থেকে বেশি ক্লান্ত হবেন একবার এই স্টেডিয়াম,একবার সেই স্টেডিয়াম করে।কেন? তা হলে নজর রাখতে হয় ইউরো(EURO 2021) কাপের গ্রুপগুলিতে।
প্রথমে যদি নজর রাখি গ্রুপ-এ-তে। গ্রুপের ফেভারিট ইতালি খেলবে নিজেদের ঘরের মাঠ রোমে। গ্রুপের ৩টি ম্যাচই ইতালির হোম ম্যাচ। তাই নিজেদের দেশে থেকেই গ্রুপ পর্বের লড়াই সারবেন চিয়েল্লিনিরা। তাই বিমানযাত্রার ধকল সইতে হবে না রবার্তো মানচিনির দলকে। অন্যদিকে এই গ্রুপে আরেক নজরকাড়া দল ওয়েলস। গ্যারেথ বেলের মত মহাতারকা রয়েছে দলে। সেই ওয়েলসকে প্রথম ম্যাচ খেলতে আড়াই হাজারের বেশি মাইল পথ বিমানযাত্রা করে আজেরবাইজানের বাকুতে সুইৎজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথম ম্যাচ খেলতে হবে। সেখানেই দ্বিতীয় ম্যাচ খেলে ফের গ্যারেথ বেলদের প্রায় ২ হাজার মাইল বিমানযাত্রা করে খেলতে যেতে হবে রোমে। ইতালির বিরুদ্ধে। গ্রুপ-এ-তে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রার ধকল সইতে হবে সুইৎজারল্যান্ডকে। গ্রুপ লিগের ৩টি ম্যাচ খেলতে সুইসদের ৬,২২১ মাইল পথ অতিক্রম করতে হবে। কম যাবেনা তুরস্কও। গ্রুপ পর্বে তাঁদের বিমানযাত্রা করতে হবে প্রায় ৫ হাজার মাইল।
এবার নজর রাখা যাক গ্রুপ-বি-তে। গ্রুপের হট ফেভারিট বেলজিয়ামকে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রা করতে হবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলিতে। ইডেন অ্যাজার্ডরা প্রথম ম্যাচ রাশিয়ার বিরুদ্ধে খেলবেন সেন্ট পিটার্সবার্গে। সেখান থেকে দ্বিতীয় ম্যাচে ডেনমার্কের মুখোমুখি হতে তাঁদের যেতে হবে কোপেনহেগেনে। গ্রুপের শেষ পর্বের ম্যাচে ফিনল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলতে ফের কেভিন ডি ব্রুইনরা আসবেন সেই সেন্ট পিটার্সবার্গে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে ৫,৬৯০ মাইল বিমানযাত্রা করতে হবে হট ফেভারিট বেলজিয়ানদের। অথচ এই গ্রুপেই ডেনমার্ককে গ্রুপ পর্বে কোনও বিমানযাত্রাই করতে হবে না। এই গ্রুপে ফিনল্যান্ড বিমানযাত্রা করবে দেড় হাজার মাইলের বেশি। ৭১৩ মাইল বিমানযাত্রা করতে হবে রাশিয়াকে।
গ্রুপ সি-র ফেভারিট নেদারল্যান্ডসের পোয়া বারো। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে নিজেদের ঘরের মাঠেই গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলবেেন তাঁরা। একেবারে ইতালির মত। তাই বেলজিয়ানদের মত বিমানযাত্রার ধকল তাঁদের গ্রুপ পর্বের ম্যাচে সইতে হবে না। কিন্তু এই গ্রুপে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রা করতে হবে অস্ট্রিয়াকে। গ্রুপ পর্বের ম্যাচে ৩২৮৬ মাইল বিমানযাত্রা করতে হবে অস্ট্রিয়ানদের। পিছিয়ে নেই গ্রুপের আরেক দল ইউক্রেন। মোট ২৬৮২ মাইল পথ অতিক্রম করে গ্রুপ পর্বের লডা়ই সারতে হবে শেভচেঙ্কোর দলকে।
গ্রুপ-ডি-তে নজর থাকবে দুই দলের দিকে। ইংল্যান্ড ও ক্রোয়েশিয়া। দুই ফেভারিট। কিন্তু একজন গ্রুপ পর্বের ম্যাচগুলি খেলবেন ঘরের মাঠে। আর আরেকটি দল বিমানযাত্রার ধকল কাটিয়ে খেলতে হবে প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছানোর জন্য। প্রথম দলটি ইংল্যান্ড। যাঁরা গ্রুপের সবকটি ম্যাচ খেলবেন ঘরের মাঠ ওয়েম্বলিতে। আর লুকা মদ্রিচ, পেরিসিচদের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে বিমানযাত্রা করে খেলতে হবে গ্রুপ পর্বের ম্যাচ। কত পথ মদ্রিচদের বিমানযাত্রা করতে হবে জানেন?৩৬৯৪ মাইল।
এবার নজর রাখতে হবে গ্রুপ-ই-র দিকে। যে দুটি দলের দিকে এই গ্রুপে নজর রাখতে হবে, তা হল- স্পেন ও পোল্যান্ড। স্পেনে একঝাঁক তারকা। আর পোল্যান্ডের মহাতারকা রবার্ট লিওনডস্কি। যাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকবে গোটা বিশ্ব। স্পেন যেমন ঘরের মাঠ সেভিয়াতেই খেলবে গ্রুপ পর্বের সবকটি ম্যাচ। বিমানযাত্রার বালাই নেই। ফলে যাতায়াতের ক্লান্তি গিলে খাবেনা স্প্যানিশ আর্মাডাকে। কিন্তু লিওনডস্কির দেশ পোল্যান্ডকে সহ্য করতে হবে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রার ধকল।গ্রুপ পর্বে মোট ৫৮৭৬ মাইল বিমানযাত্রা করতে হবে পোলিশদের। এই গ্রুপে পিছিয়ে নেই সুইডেনও। তাঁদের গ্রুপ পর্বে বিমানযাত্রা করতে হবে ৫৪২৪ মাইল। গ্রুপের অন্য দল স্লোভাকিয়াকে গ্রুপ পর্বে বিমানযাত্রা করতে হবে ৩১৯৫ মাইল।
এবার নজর রাখি গ্রুপ অফ ডেথে। এই গ্রুপে সবচেয়ে ‘সুখে’ আছে জার্মানি। ঘরের মাঠ অ্যালিয়াঞ্জ এরিনাতে গ্রুপ পর্বের সব ম্যাচ খেলবেন টমাস মুলাররা। ঘরের মাঠে অ্যাডভান্টেজ। সঙ্গে বিমানযাত্রার অতিরিক্ত ধকল সামলাতে না হওয়া। ক্লান্তি কিছুতেই কাবু করতে পারবে না জার্মানদের। কিন্তু আরও দুই হট ফেভারিটদের দিকে তাকালে চোখ কপালে উঠতে হয়। গতবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ খেলতে তাঁদের বিমানযাত্রা করতে হবে ২২৩০ মাইল। রোনাল্ডোরা প্রথম ম্যাচ খেলবেন বুদাপেস্টে। সেখান থেকে তাঁদের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলতে আসতে হবে মিউনিখে। আবার তৃতীয় ম্যাচ খেলতে ব্যাগপত্তর গুছিয়ে ফের যেতে হবে সেই বুদাপেস্টে। এই গ্রুপে সবচেয়ে বেশি বিমানযাত্রা করতে হবে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে। এমবাপেরা মোট ৩৯৪২ মাইল পথ বিমানে অতিক্রম করবেন ইউরোর গ্রুপ পর্বের খেলার সময়।
করোনার অতিমারিতে ১১টি দেশের ১১টি স্টেডিয়ামে খেলা হবে ইউরো কাপ। তাতেই এই বিমানযাত্রার ধকল সইতে হচ্ছে বেশ কয়েকটি দলকে। যার মধ্যে রয়েছে টুর্নামেন্টের হট ফেভারিটরাও। আবার অনেক ফেভারিটদেরই গ্রুপ পর্বে সইতে হবে না গ্রুপ পর্বের ধকল। এই সূচি নিয়েই এবার ক্ষোভ জন্মাচ্ছে বিভিন্ন দলে। কারও পৌষ মাস, কারও সত্যিই সর্বনাশ!