Yudhajit Guha: বাংলা থেকে উত্থান ‘বাঙালি সামি’র, আগ্রাসী বোলিংয়ে ৭ উইকেট যুধাজিতের
বাংলা ক্রিকেটে এখন ভিন রাজ্যের ভিড়। উত্তরপ্রদেশের মহম্মদ সামির জন্ম হয়েছিল এই বাংলা থেকেই। হরিয়ানার শাহবাজ আহমেদ, বিহারের মুকেশ কুমার, আকাশদীপদের উত্থানও বাংলার মঞ্চ থেকে। ইদানীং বাংলার রঞ্জি ক্রিকেট টিমে বন্দ্যোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, ভট্টাচার্য, হাজরা, দাসদের সংখ্যা কমছে ক্রমশ। বাঙালি ক্রিকেটার কি নেই? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজের যাঁরা, তাঁদের জন্য তৈরি হচ্ছেন যুধাজিৎ।
অভিষেক সেনগুপ্ত
মফঃস্বল থেকে কলকাতায় পা রাখেন অনেকেই। ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে। খাস কলকাতার কোনও ছেলে নৈহাটি কিংবা ইছাপুরের কোচিং সেন্টারে কখনও গিয়েছেন ক্রিকেটার হওয়ার জন্য? এমন বিরল তালিকাতে নাম লেখান কেউ কেউ। উল্টো নিয়মে হেঁটে যখন সাফল্য পান, অবাক হয়ে তাঁকে দেখে ক্রিকেটমহল। তেমনই এক বিরল প্রতিভার জন্ম দেখছে বাংলা ক্রিকেট। নিখুঁত লাইন-লেন্থ, সামান্য দেরি বল রিলিজ করা, লেট সুইং— এ সব অস্ত্র তাঁর। আর নিজেকে মেলে ধরার শিক্ষা? নৈহাটি স্টেশনের ৬০ টাকা ভাড়ার যাত্রী নিবাসে রাতের পর রাত কাটানোই হয়তো মানসিক ভাবে গড়ে দিয়েছে তাঁকে। না হলে মাত্র ১৮ বছর বয়সেই এমন ধারাবাহিক হতেন না। বাংলা ক্রিকেটে এই নতুন প্রতিভার নাম কী? যুধাজিৎ গুহ (Yudhajit Guha)।
বাংলা ক্রিকেটে এখন ভিন রাজ্যের ভিড়। উত্তরপ্রদেশের মহম্মদ সামির জন্ম হয়েছিল এই বাংলা থেকেই। হরিয়ানার শাহবাজ আহমেদ, বিহারের মুকেশ কুমার, আকাশদীপদের উত্থানও বাংলার মঞ্চ থেকে। ইদানীং বাংলার রঞ্জি ক্রিকেট টিমে বন্দ্যোপাধ্যায়, গঙ্গোপাধ্যায়, ভট্টাচার্য, হাজরা, দাসদের সংখ্যা কমছে ক্রমশ। বাঙালি ক্রিকেটার কি নেই? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজের যাঁরা, তাঁদের জন্য তৈরি হচ্ছেন যুধাজিৎ। তরুণ ডানহাতি পেস বোলার ক্রমশ স্বপ্ন দেখাচ্ছেন বয়সভিত্তিক টুর্নামেন্টগুলোতে। কুচবিহার ট্রফিতে ঝাড়খণ্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ইনিংসে একাই নিয়েছেন ৭ উইকেট। ১৮ ওভারে মাত্র ২৩ রান খরচ করে। প্রথম ইনিংসে যুধাজিৎ নিয়েছিলেন ৩ উইকেট। ম্যাচে সব মিলিয়ে ১০ উইকেট।
যুধাজিতের বাবা কৌশিক গুহ বলছিলেন, ‘যে কোনও প্লেয়ার বেড়ে ওঠার দিনগুলোতেই তৈরি হয়। যুধাজিতের ক্ষেত্রেও সেটা বলা যেতে পারে। রোজ সকাল ৭-১৮র লোকাল ধরে একটা সময় নৈহাটি, ইছাপুর কোচিং সেন্টারে যেত। যাত্রী নিবাসে রাত কাটাতেও হত ম্যাচ থাকলে। শৃঙ্খলা আর লড়াই করতে করতে বড় হওয়াটাই বোধহয় ওকে বোলার তৈরি করেছে।’ যুধাজিতের কোচ আসলে তাঁর বাবাই। কৌশিকই ছেলেকে ঘেষেছেন, মেজেছেন নেটে। অনূর্ধ ১৬ বাংলা টিমে খেলার সময় কোচ হিসেবে পেয়েছেন প্রণব রায়, অনূর্ধ্ব-১৯ এর সময় পেয়েছেন দেবাং গান্ধীকে। এখন কোচ প্রাক্তন ক্রিকেটার সঞ্জীব সান্যাল।
৯ বছর বয়সে ক্রিকেটে হাতেখড়ি। পার্সি ক্লাবের হয়ে সেকেন্ড ডিভিশন খেলার সময় চোখে পড়ে যান যুধাজিৎ। ১৯ উইকেট নিয়েছিলেন। অনূর্ধ ১৬ বিজয় মার্চেন্ট ট্রফিতে সুযোগ পেয়ে যান। বাংলা টিমের হয়ে ১৬টা উইকেট নিয়েছিলেন। যুধাজিৎ যে ভবিষ্যৎ হতে পারেন বাংলা ক্রিকেটের, মেনে নিয়েছিলেন দেবাং। যুধাজিৎও নিরাশ করেননি। এ বছর নিজেকে আরও মেলে ধরেছেন। ভিনু মানকড় ওয়ান ডে টুর্নামেন্টে নিয়েছেন ৮টা উইকেট। বাংলা থেকে একমাত্র ক্রিকেটার হিসেবে সুযোগ পান অনূর্ধ্ব ১৯ চ্যালেঞ্জার্সে। ইন্ডিয়া বি-র হয়ে খেলেন। রান খরচ না করলেও উইকেট মেলেনি। কুচবিহার ট্রফিতে কিন্তু যুধাজিৎ সব আক্ষেপ মিটিয়ে নিচ্ছেন। এখনও পর্যন্ত মোট ১৫টা উইকেট নিয়েছেন ক্যালকাটা পুলিশে খেলা পেস বোলার।
যুধাজিতের উত্থানের পিছনে সিএবির জুনিয়র কমিটির চেয়ারম্যান সঞ্জয় দাসও রয়েছেন। সায়ন দে, চন্দ্রাস দাশ, রোহিত প্রধানদের মতো তরুণরা যেমন উঠে এসেছেন, তেমনই উত্তরণ হয়েছে যুধাজিতেরও। এই তরুণ পেসারের মধ্যে অনেকেই সামির ছায়া দেখতে পাচ্ছেন। সিমের চমৎকার ব্যবহার, সুইং, গতির মিশেল ক্রমশ ধারালো করে তুলছে চেতলার যুধাজিৎকে। আঠারোতে যিনি ত্রাস হয়ে উঠছেন, সিনিয়র টিমে তাঁর জায়গা পাওয়া স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়, ঋদ্ধিমান সাহার পর আর এক আদ্যোপান্ত বাঙালির জাতীয় টিমে উড়ান দেখতে চাইছে বাংলা। যুধাজিৎ গুহ কি সেই স্বপ্নপূরণ করতে পারবেন?