IPL 2021: মর্গ্যানের কেকেআর মনে করাচ্ছে ২০০৯ আইপিএলকে

জঘন্য পারফরম্যান্সেও পাল্টাচ্ছে না নাইটদের মনোভাব। গত বছর দীনেশ কার্তিককে সরিয়ে মর্গ্যানের হাতে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট। ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের ব্যাটে রান নেই। ক্যাপ্টেন্সিতেও নেই চমক।

IPL 2021: মর্গ্যানের কেকেআর মনে করাচ্ছে ২০০৯ আইপিএলকে
সৌজন্যে-আইপিএল ওয়েবসাইট
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Apr 30, 2021 | 9:15 AM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

কলকাতা নাইট রাইডার্স- ১৫৪/৬ (২০ ওভার) দিল্লি ক্যাপিটালস- ১৫৬/৩ (১৬.৩ ওভার)

জঘন্য। অতীব জঘন্য। কলকাতা নাইট রাইডার্সের (KKR) ম্যাচ শেষে এই শব্দগুলোই বারবার ঘুরে ফিরে আসে। পঞ্জাবকে হারিয়ে হারের ধাক্কা কাটিয়েছিলেন মর্গ্যানরা। ৩ দিন পর আবারও সেই এক রোগ, এক ফল। ম্যাচ শেষে একরাশ হতাশা। প্রাপ্তির ভাঁড়ারে শুধুই লজ্জা। ব্যাটিং, বোলিং উভয় বিভাগেই ডাহা ফেল। কেকেআর এখন শুধুই কেকেহার। পৃথ্বী শ দেখিয়ে দিল টি-টোয়েন্টিতে কি ভাবে ব্যাটিং করতে হয়। গিল, মর্গ্যানরা কী আদৌ শিখলেন! নাইটদের ব্যাটিং দেখে মনে হয় উইকেটে জুজু আছে। আর যখন নাইটরা বোলিং করতে আসে, তখন দেখে মনে হয় উইকেট যেন ব্যাটসম্যানদের জন্য আদর্শ। আরসিবির কাছে ১ রানে হারের পর ঘুরে দাঁড়াল দিল্লি ক্যাপিটালস। ৭ উইকেটে উড়িয়ে দিল কলকাতাকে।

টসে জিতে প্রথমে ফিল্ডিং নেন ঋষভ পন্থ। কেকেআর প্রথমে ব্যাট করতে এসে সেই এক চিত্র। এ যেন রিপিট টেলিকাস্ট। নাইট রাইডার্সের টপ অর্ডারের ব্যর্থতার রোগ কিছুতেই সারছে না। ৭টা ম্যাচ খেলে ফেললেন রানা-মর্গ্যানরা। তবুও কোনও ম্যাচেই জমাট বাঁধল না নাইটদের টপ অর্ডার। এ দিনও ব্যর্থ রানা, মর্গ্যান, ত্রিপাঠীরা। নীতীশ রানা আউট হলেন ১৫ রনে। রাহুল ত্রিপাঠী করলেন ১৯। শূন্য রানে ফিরে যান ইয়ন মর্গ্যান। সুনীল নারিনও কোনও রান না করে আউট হন। অনামী ললিত যাদবের একই ওভারে আউট মর্গ্যান, নারিন। ৩৮ বল খেলে ৪৩ করেন ওপেনার শুভমন গিল। নিজে রানে ফিরতে গিয়ে অর্ধেক বলই নষ্ট করলেন। ১৪ রান করেন দীনেশ কার্তিক। এ সব দেখেও নির্বিকার নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট। ব্রেন্ডন ম্যাকালাম ঠিকই করে ফেলেছেন, তাঁর দলের ব্যাটিং অর্ডার তিনি পাল্টাবেন না। ২৭ বলে ৪৫ রানে অপরাজিত থাকেন আন্দ্রে রাসেল। জন্মদিনে ব্যাট হাতে ঝড় তুললেন দ্রে রাস। ইনিংসে সাজানো ৪টে ছয় আর ২টো চার। স্লগ ওভারে ওরকম সাহসী ব্যাটিং না করলে স্কোরবোর্ডে রান ১৫০ পার করত না। এই কেকেআরে যেন একজনই বিগ হিটার। আর তিনি আন্দ্রে রাসেল। আর তাঁকেই প্রতি ম্যাচে ৬ নম্বরে নামাচ্ছে টিম ম্যানেজমেন্ট। মর্গ্যানদের টানা ব্যর্থতা দেখেও শিক্ষা নিচ্ছে না নাইট থিঙ্ক ট্যাঙ্ক।

রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারেই ২৫ রান দিলেন শিবম মাভি। ব্যাটসম্যান পৃথ্বী শ কোনও বলেই রেহাই দিলেন না মাভিকে। একটা ওয়াইড, বাকি ৬ বলে ৬টা চার মারলেন পৃথ্বী। অজিঙ্কা রাহানের পর আইপিএলে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে ৬ বলে ৬টা চার মারার নজির গড়লেন তিনি। বোলিং অপশনে সব তাস খেলে ফেললেন মর্গ্যান। বরুণ চক্রবর্তী, প্রসিধ কৃষ্ণা, সুনীল নারিন, প্যাট কামিন্স প্রত্যেকের ডেলিভারিকে মাঠের বাইরে পাঠালেন পৃথ্বী শ। ১৮ বলে হাফসেঞ্চুরি করলেন এই ডান হাতি ওপেনার। চলতি আইপিএলে এখনও পর্যন্ত দ্রুততম অর্ধশতরান। এ বছর ২০ বলে হাফসেঞ্চুরি করেছেন দীপক হুডা। পৃথ্বী শ থামলেন ৮২ রানে। ৪১ বলে করলেন ৮২। ইনিংসে সাজানো ৩টে ছয় আর ১১টা চার। শিখর ধাওয়ান করলেন ৪৬। ওপেনিং জুটিতে উঠল ১৩২ রান। এরপর আর খেলা বাকি থাকে না। পন্থ আউট হন ১৬ রানে। ১৬.৩ ওভারেই প্রয়োজনীয় রান তুলে নেয় দিল্লি ক্যাপিটালস। জঘন্য পারফরম্যান্সেও পাল্টাচ্ছে না নাইটদের মনোভাব। গত বছর দীনেশ কার্তিককে সরিয়ে মর্গ্যানের হাতে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব তুলে দিয়েছিল নাইট টিম ম্যানেজমেন্ট। ক্যাপ্টেন মর্গ্যানের ব্যাটে রান নেই। ক্যাপ্টেন্সিতেও নেই চমক। ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক নাইটদের জার্সিতে ক্রমশ ফিকে হচ্ছেন, দেখাচ্ছে দিশেহারা। অফ ফর্মে থাকলেও ক্যাপ্টেনকে বসানোর সাহস দেখাতে পারছে না টিম ম্যানেজমেন্ট। এ যেন মনে করাচ্ছে ২০০৯ আইপিএলকে। সে বার অধিনায়ক ছিলেন ব্রেন্ডন ম্যাকালাম। আজ তিনি কোচের পদে। সে বছর একের পর এক হারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল কেকেআর। ব্যাটেও রান ছিল না ম্যাকালামের। দলের খারাপ দশা দেখে পরের বছরই ম্যাকালামকে সরিয়ে ফের সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে অধিনায়ক করা হয়। কর্ণধার শাহরুখ খানের ‘হার কে জীতনে ওয়ালো কো বাজিগর ক্যাহতা হ্যায়’ ডায়লগটা অনেক পুরনো। বিপর্যস্ত এই নাইটদের দেখে মনে হচ্ছে, জেতার ইচ্ছেটাই তাঁদের চলে গিয়েছে। কিং খানের কপালে ক্রমশই চিন্তার ভাঁজ বাড়ছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: কলকাতা নাইট রাইডার্স ১৫৪/৬(রাসেল ৪৫ অপরাজিত, গিল ৪৩, ললিত যাদব ২/১৩, অক্ষর ২/৩২), দিল্লি ক্যাপিটালস ১৫৬/৩ (পৃথ্বী শ ৮২, ধাওয়ান ৪৬, কামিন্স ৩/২৪)। ৭ উইকেটে জয়ী দিল্লি ক্যাপিটালস। ম্যাচের সেরা পৃথ্বী শ।