Jhulan Goswami: ব্যাটসম্যান থেকে বোলার হলেন কী ভাবে? ঝুলনকে নিয়ে অজানা গল্প তুলে ধরলেন কোচ!

Swapan Sadhu: কিছুটা দম নিয়ে ফোনের ওপার থেকে স্বপন বললেন, 'আমার ছাত্রী বলে বাড়িয়ে বলছি না, ঝুলনের একটা পজিটিভ দিক হল, বড় প্লেয়ার হয়েও কোনও অহংকার নেই। আমার ভাগ্য ভালো যে, ও আমার কাছে এসেছিল।'

Jhulan Goswami: ব্যাটসম্যান থেকে বোলার হলেন কী ভাবে? ঝুলনকে নিয়ে অজানা গল্প তুলে ধরলেন কোচ!
Image Credit source: FACEBOOK
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 24, 2022 | 3:28 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

‘স্যর, আমি টিভি নাইন বাংলা থেকে বলছি।’ পাল্টা প্র্রশ্ন এল, কী ব্যাপারে? ঝুলন গোস্বামীকে নিয়ে কথা বলতে চাই, প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, ‘আমার তো ক্ষমতাও নেই, কথা বলার মতো পরিস্থিতিও নেই। অনেক দিন ধরেই অসুস্থ আমি। মাঠও ছেড়ে দিয়েছি। হাঁটতে পারি না, লাঠি নিয়ে হাঁটতে হয়। ৭৫ বছর বয়স হল।’ এর পর আর নিজে থেকে কিছু বলার সাহস হয়নি। নাহ, কোনও অনুরোধ করতে হয়নি। ঝুলন গোস্বামীর ছেলেবেলার কোচ স্বপন সাধুর এর পরের মন্তব্য, ‘কতদিন হয়ে গেল ওর সঙ্গে দেখা হয়নি…। অবশ্য খেলা এখনও দেখি।’ তারপর নিজে থেকেই খুললেন স্মৃতির ঝাঁপি। বয়সের ভারে অনেক স্মৃতি হারিয়ে গিয়েছে। যতটুকু মনে পড়ল, ভাগ করে নিলেন TV9Bangla-র সঙ্গে। কথা বলতে কষ্ট হচ্ছিল, তবুও ফোন রাখতে চাননি। সময় দিলেন অনেকখানি। প্রিয় ছাত্রীকে নিয়ে কথা বলতে গিয়ে যতটা না কষ্ট হচ্ছিল, তার চেয়ে ঢের বেশি গর্ব। ক্রিকেটের পরিপ্রেক্ষিতে বাঙালিরা বলতে পারেন, আমাদের একজন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় যেমন আছেন, তেমনই আছেন আরও এক কিংবদন্তি ঝুলন গোস্বামী।

শুরুর দিকে কেমন ছিলেন ঝুলন? কোচের মুখে সেই প্রসঙ্গ এল নিজে থেকেই। বললেন, ‘আমার ছাত্রী পৃথিবীর অন্যতম সেরা খেলোয়াড়। আমার কাছে এটা কতটা গর্বের, আনন্দের ভাবুন তো…! কোথা থেকে বলা আরম্ভ করব, সেটাই ভাবছি। অনেক কিছু মনেও নেই। আবার কিছু বিষয় তো ভুলতেও পারব না।’ একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে আবারও বলতে শুরু করলেন, ‘ শুরুটা, বললে হয়তো এখন খারাপ দেখাবে। আমার কাছে এসেছিল ব্যাটসম্যান (ব্যাটার) হতে। আমি শুনেছিলাম, ও ছেলেদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলে। বোলিং করে। ওকে যখন আনতে গিয়েছিলাম, ওর মা বলেছিল- দেখুন না, বাড়ির পাঁচিল টপকে বেরিয়ে যায়, ছেলেদের সঙ্গে খেলাধুলা করে। আমি তো পারি না, আপনি চেষ্টা করে দেখুন, আটকাতে পারেন কিনা! ওকে নিয়ে এলাম ট্রেনিংয়ে। ও যখন বোলিং শুরু করল, থ হয়ে গেলাম। আমি নিজেকে ধরে রাখতে পারিনি। কেন পারিনি, সেটাও বলছি। ওর মতো হাই আর্ম অ্যাকশন জীবনে দেখিনি। ওকে বললাম- ব্যাটিং তো তুই করবই, সন্দেহ নেই। তার আগে তোকে বোলিং করতে হবে। চারজন ব্যাটসম্যানকে আগে বল করবি, তার পর ব্যাটিং দেব। সেই থেকে শুরু হল ওর বোলিং।’

বয়স বেশি হওয়ায় সাব-জুনিয়রে খেলতে পারেননি ঝুলন। কোচ শোনালেন সেই কথা। ‘এক-দু মাস বেশি বয়সের জন্য সাব জুনিয়রে সুযোগ পায়নি। খুব কেঁদেছিল। বোঝালাম, খেলতে হলে কান্নাকাটি বন্ধ কর। খেলোয়াড়কে লড়তে হয়। কয়েক মাস পর ঠিক জুনিয়র টিমে জায়গা পাবি। তা-ই হল। জুনিয়র ক্রিকেটে এমন বোলিং করল যে, এয়ার ইন্ডিয়া ওকে চাকরির অফার দিল। আমাকে জিজ্ঞেস করায় বললাম, খেলোয়াড় হতে চাইলে চোখ বুঝে সই করে দে। সালটা সম্ভবত ১৯৯৯ হবে, ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের সঙ্গে এয়ার ইন্ডিয়ার একটা ম্যাচ ছিল। দারুণ বোলিং করল ঝুলন। ভারতীয় দলে সুযোগ পেতে দেরি হয়নি।’

কিছুটা দম নিয়ে ফোনের ওপার থেকে স্বপন বললেন, ‘আমার ছাত্রী বলে বাড়িয়ে বলছি না, ঝুলনের একটা পজিটিভ দিক হল, বড় প্লেয়ার হয়েও কোনও অহংকার নেই। আমার ভাগ্য ভালো যে, ও আমার কাছে এসেছিল। এখনও সব ম্যাচ দেখি ওর। ম্যাচের পর কথাও হয়। ওকে দরকার মতো ভুলত্রুটিগুলো দেখিয়ে দিই। ৩৫০ উপর উইকেট একটা মেয়ের, ভাবা যায়! একটা ৪০ বছরের মেয়ে, আগেও যে তাগিদ নিয়ে বল করতো, এখনও তাই করে। ও বিশ্বরেকর্ড করল, কিন্তু এ সব নিয়ে ভাবেই না।’

বৃদ্ধ যেন থামতেই চাইছেন না। অতীতের সব দরজা-জানলা খুলে দিয়েছেন প্রিয় ছাত্রীর জন্য। নিচু গলায় বলে দিলেন, ‘ক্রিকেট সাধক বলা যেতে পারে ওকে। পরবর্তী প্রজন্ম কেন ওকে ভালোবাসে, তার একটা উদাহরণ দিই। এগুলো ঝুলন কোনও দিন কাউকে বলে না। যে মেয়ে সাব-জুনিয়র বা জুনিয়র স্তরে ভালো খেলে, তাকে শ্যামবাজারের ক্রিকেট সরঞ্জামের দোকান নিয়ে গিয়ে কিটস কিনে দেয়। নিজে যেতে না পারলে ফোন করে বলে দেয়। হয়তো নিজের দিনগুলো মনে পড়ে। তাই জুনিয়রদের জন্য ভাবে।’

বৃদ্ধ স্বপন হয়তো রাতটা কোনও রকমে পার করেছেন। প্রিয় ছাত্রীর আর একটা ম্যাচ দেখবেন বলে। যে ছাত্রীকে একসময় নিজে হাতে তৈরি করেছিলেন, সেই ঝুলন শনিবার লর্ডসে খেলবেন কেরিয়ারের শেষ ম্যাচ। ঝুলনের সঙ্গে হয়তো স্বপনও অবসর নিয়ে নেবেন। ছাত্রীহীন ক্রিকেট যে আর টানবে না তাঁকে!