IND vs AUS ICC WC Final Match Preview: বিশ্বকাপে ‘তৃতীয়া’র অপেক্ষায় অপরাজিত ভারত
India vs Australia ICC world Cup Final 2023: টানা দশ ম্যাচ জয়ের আনন্দ ধরে রাখা তখনই সম্ভব, হাতে ট্রফি উঠলে। না হলে সবটাই বৃথা মনে হবে। গত দুটি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলেছে ভারত। যেটা মনে রাখা হয়েছে, 'ভারত সেমিফাইনালেই বিদায় নিয়েছিল'। রোহিত শর্মার দলের কেউই চান না, তাঁদের ক্ষেত্রেও 'টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল' এটুকু মনে রাখা হোক। বরং, এক যুগ পর ভারত তৃতীয় বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তৃপ্তির। তার জন্য পেরোতে হবে অনেক বড় বাধা।
অভিষেক সেনগুপ্ত
আমেদাবাদ: বসন্ত এসে গেছে কি? এখনও নয়। আবহাওয়ায় হোক কিংবা বিশ্বকাপে। ৪৫ দিন, ৪৭ ম্যাচ শেষে সেরা খুঁজে নেওয়ার লড়াই। বিশ্বকাপ ফাইনালে আজ মুখোমুখি তেইশের সেরা দল ও টুর্নামেন্টের ইতিহাসে সফলতম দল। তেইশের বিশ্বকাপে বৃত্ত সম্পূর্ণ করার আশায় ভারত। রোহিত শর্মার নেতৃত্বে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু হয়েছিল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধেই। ফাইনালেও সামনে সেই অস্ট্রেলিয়া। অপেক্ষায় শুরুর সেই পুনরাবৃত্তি। পরিস্থিতি যদিও তেমন নয়।
আমেদাবাদে নজর আসমুদ্র হিমাচলের। কোটি কোটি ভারতবাসীর স্বপ্ন কয়েকজনের কাঁধে। ক্রিকেটই তো একতা আনে এ দেশে। সব ভুলে একটা দিন ক্রিকেটে মেতে গোটা দেশ। এক যুগের অপেক্ষার অবসান হওয়ার প্রত্যাশা। ২০১১ সালে শেষ বার বিশ্বকাপ জিতেছিল ভারত। ঘরের মাঠেই ২৮ বছরের অপেক্ষার অবসান হয়েছিল। এ বারের অপেক্ষা ১২ বছরের। খুব কাছে গিয়েও ফিরে আসা যেন আরও হতাশার। ‘দিল হ্যায় ছোটা সা, ছোটি সি আশা’, গানের নিরিখে সত্যিই খুব ভালো। কিন্তু দেশ বড়, আশাও যে ‘বিরাট’।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেক ক্ষেত্রেই নড়বড়ে দেখিয়েছে ভারতীয় দলকে। আশা দেখা যায়নি রোহিত শর্মার নেতৃত্ব নিয়েও। একই কথা প্রযোজ্য কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের ক্ষেত্রেও। সাফল্য যেন লুকোনো ছিল কোথাও। টুর্নামেন্ট শুরু হতেই একে একে প্রকাশ্যে আসছিল। চেন্নাইতে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জয় দিয়ে যাত্রা শুরু। যা এখনও থামেনি। লিগ পর্বে নয়ে নয়, সেমিফাইনালেও দুরন্ত জয়। অপরাজিত ভারত বলাটা পুরোপুরি সঠিক নয়। তার চেয়ে টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে ভারত, নিখুঁত। অপরাজিত মানে তো শুধুমাত্র না হারাও হতে পারে!
টানা দশ ম্যাচ জয়ের আনন্দ ধরে রাখা সম্ভব, হাতে ট্রফি উঠলে। না হলে সবটাই বৃথা মনে হবে। গত দুটি বিশ্বকাপেও দুর্দান্ত খেলেছে ভারত। যেটা মনে রাখা হয়েছে, ‘ভারত সেমিফাইনালেই বিদায় নিয়েছিল’। রোহিত শর্মার দলের কেউই চান না, তাঁদের ক্ষেত্রেও ‘টানা দশ ম্যাচ জিতে ফাইনালে উঠেছিল’ এটুকু মনে রাখা হোক। বরং, এক যুগ পর ভারত তৃতীয় বার বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তৃপ্তির। তার জন্য পেরোতে হবে অনেক বড় বাধা।
জোড়া হার দিয়ে বিশ্বকাপ অভিযান শুরু করলেও দারুণ ভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে অস্ট্রেলিয়া। গত আট ম্যাচেই জয়। তাই চেন্নাইয়ের অস্ট্রেলিয়া আর আমেদাবাদের, এক নয়। মাঝের সময়ে অনেক কিছুই বদলে গিয়েছে দু-দলে, টুর্নামেন্টেও। পিচ, টাইমড আউট বিতর্ক, বিরাট কোহলির সেঞ্চুরির হাফসেঞ্চুরিতে পৌঁছনো, বিশ্বকাপে ম্যাক্সওয়েলের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড কিংবা ‘এক পায়ে’ ডাবল সেঞ্চুরি! ভারতীয় শিবির চতুর্থ ম্যাচেই হার্দিকের চোটে যে আশঙ্কায় পড়েছিল, মহম্মদ সামির দুরন্ত বোলিংয়ে ঢাকা পড়ে গিয়েছে সেই দুর্ঘটনা।
ঘরের মাঠ, সাম্প্রতিক পারফরম্যান্স, টিমের ব্যালান্স, সুপারস্টার, সব মিলিয়ে ফেভারিট ভারত। বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিও থাকবে ভারতের দখলেই। ফাইনালে কার্যত আন্ডারডগ তকমা নিয়েই নামছে অস্ট্রেলিয়া। বাকিদের কাছে তাই হলেও ভারতীয় দলের অন্দরে নয়। অধিনায়ক রোহিত শর্মা সেটা বলেই দিয়েছেন। গত দশ ম্যাচে যা হয়েছে সেটা দিয়ে ফাইনাল বিচার করা যাবে না। এই ম্যাচটা ভালো খেলতে হবে। না হলে, সব বৃথা।
অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা যেমনই হোক, তাদের সমীহ না করে উপায় নেই। সব মিলিয়ে অষ্টম বার ফাইনালে। ষষ্ঠ ট্রফির খোঁজে। সেমিফাইনালে কোনও দিন হারেনি! এর আগে মাত্র দু-বার রানার্স হয়েছে তারা। ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অর্জুন রণতুঙ্গার শ্রীলঙ্কার কাছে। রোহিত শর্মার ভারত তেমনই কিছু চাইছে। ভারতীয় দলের হেড কোচ রাহুল দ্রাবিড়ের কাছেও এই ম্যাচটি অন্য মাত্রার। কুড়ি বছর আগে শেষ বার বিশ্বকাপ ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ভারত-অস্ট্রেলিয়া। রানার্স ভারতীয় দলের সদস্য দ্রাবিড়। কোচ হিসেবে তাঁরও যেন বদলার ম্যাচ। আর রোহিতের কাছে ভারতীয় ক্রিকেটে এক যুগের অপেক্ষা, হতাশা বদলের চ্যালেঞ্জ।