বিদেশের মাঠে ভারতের সর্বকালের সেরা সিরিজ জয়

ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার জন্য বুকের পাটা লাগে। লিয়ঁর একটা বলে পন্থ প্রায় স্টাম্প হয়ে যাচ্ছিল। পরের বলটাতেই কিন্তু মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় মারল। কমেন্ট্রি বক্সে বসে শেন  ওয়ার্নের মতো প্রাক্তন পর্যন্ত ওই শটটা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল।

বিদেশের মাঠে ভারতের সর্বকালের সেরা সিরিজ জয়
Follow Us:
| Updated on: Jan 19, 2021 | 8:13 PM

অস্ট্রেলিয়া- ৩৬৯ ও ২৯৪

ভারত- ৩৩৬ ও ৩২৯/৭

শরদিন্দু মুখোপাধ্যায়

ইতিহাস বোধহয় এ ভাবেই তৈরি হয়। একটা টিম কোণঠাসা থাকতে থাকতে হঠাত্‍ ঘুরে দাঁড়াবে। আর তার সাক্ষী থাকবে সারা পৃথিবী। ব্রিসবেন আক্ষরিক অর্থে তাই দেখাল রাহানের ভারতীয় টিম। বিপক্ষকে উড়িয়ে দিয়ে বিদেশের মাটিতে এমন সিরিজ আর কখনও দেখেছি কিনা, মনে পড়ছে না। আমার তো মনে হয়, ভারতের টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে এটাই সর্বকালের সেরা সিরিজ জয় থাকবে।

আরও পড়ুন: সিনিয়রদের নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে বাংলা শিবিরে

দায়বদ্ধতা, খিদে, প্রত্যাবর্তন— এই তিনটে নতুন শব্দ ভারতীয় ক্রিকেটে জন্ম নিয়েছে, অনেকেই বলছে। একটা শব্দ অনেকেই ভুলে যাচ্ছে, পজিটিভিটি! অর্থাত্‍, যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করার জন্য তৈরি থাকা। এই অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে ভারতের প্রাপ্তি অনেক। সেগুলোই তুলে ধরার চেষ্টা করলাম।

গিল: প্রথম দিন থেকে বলে আসছি, এই ছেলেটা লম্বা রেসের ঘোড়া। টেস্টে ওপেন করার জন্য যে টেকনিক দরকার, ওর আছে। মেলবোর্ন টেস্ট থেকে ব্রিসবেন পর্যন্ত, শুভমন সেটাই বারবার প্রমাণ করেছে। গাব্বার ৯১ রানের ইনিংসটাই ভারতের জয়ের ভিত তৈরি করে দিয়েছিল।

পূজারা: কিছু ক্রিকেটার থাকে, যাদের উপিস্থিতিটাই টিমের মনোবল বাড়িয়ে দেয়। এটুকু নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিপক্ষের গোলাগুলিগুলো সামলে দেবে ওই। ভারতের পূজারা যেমন। গাব্বায় পঞ্চমদিন দেখলাম, কামিন্স-হ্যাজেলউডদের আনপ্লেয়েবল বলগুলো অবলীলায় গায়ে নিয়ে নিচ্ছে। এটা করার জন্য সাহস আর মনোঃসংযোগ দুই লাগে। শুভমনের সঙ্গে ওর পার্টনারশিপটাই কিন্তু জয়ের দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে দিচ্ছিল।

আরও পড়ুন: ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট টিমে ফিরলেন বিরাট-ইশান্ত-রাহুল

পন্থ: ওর কিপিং নিয়ে যতই প্রশ্ন থাক, ব্যাটসম্যান পন্থ ম্যাচ উইনার। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার জন্য বুকের পাটা লাগে। লিয়ঁর একটা বলে পন্থ প্রায় স্টাম্প হয়ে যাচ্ছিল। পরের বলটাতেই কিন্তু মিড উইকেটের উপর দিয়ে ছয় মারল। কমেন্ট্রি বক্সে বসে শেন  ওয়ার্নের মতো প্রাক্তন পর্যন্ত ওই শটটা দেখে ভাষা হারিয়ে ফেলেছিল।  তার মানে, ছেলেটা বল-বাই-বল ভাবতে শিখেছে। সিডনিতে ৯৭ আর গাব্বায় ৮৯ নট আউট, দুটো ইনিংসই সোনা মোড়া। একটা টেস্ট বাঁচানোর জন্য খেলেছিল। আর একটা টেস্ট জেতানোর জন্য। ইংল্য়ান্ড, অস্ট্রেলিয়ায় এর আগেও সেঞ্চুরি করেছে ও। কিন্তু ৮৯ নট আউট ইনিংসটাকে আমি ডাবল সেঞ্চুরি বলে ধরব।

সিরাজ: ছেলেটা মুগ্ধ করছে। সামির চোটের পর ও টিমে সুযোগ পেয়ে সিরাজ নিরাশ করেনি। বরং দ্রুত নিজেকে পরিণত করেছে। গাব্বায় ভারতকে জয়ের স্বপ্নটা কিন্তু প্রথম দেখিয়েছিল সিরাজরাই। ওর পাঁচ উইকেট নেওয়া, শার্দূলের চমত্‍কার পারফরম্যান্স, নটরাজন, সুন্দরদের দেখে একবারও মনে হয়নি, এই প্রথম টেস্ট খেলতে নামছে। ভারতের পরবর্তী প্রজন্ম তৈরি। এবং বলতে দ্বিধা নেই, এদের হাতে ভারতীয় ক্রিকেট সুরক্ষিত।

রাহানে: ঠান্ডা স্বভাবের ছেলে। কিন্তু ওর মধ্যে ছাই চাপা আগুনের মতো একটা আগ্রাসন রয়েছে। নিজেকে মেলে ধরতে জানে। প্রয়োজনের সময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিতে পারে। বিরাটের না থাকাটাকে রাহানে একা হাতে সামলে দিয়েছে।

ক্যাপ্টেন বিতর্ক: একটাই কথা বলব, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একটা টেস্ট ম্যাচে অরুণ লাল ওপেন করতে নেমে ৯০ রানের একটা ইনিংস খেলেছিলেন। ওই ম্যাচে সুনীল গাভাসকর চোটের জন্য খেলতে পারেনি। পরের ম্যাচে ফিট গাভাসকর টিমে যখন ফেরেন, অরুণ লাল বাদ যান। এটাই স্বাভাবিক। রাহানে অস্ট্রেলিয়ায় ভারতকে টেস্ট জিতিয়ে দিল মানে ওকে ক্যাপ্টেন করে দিতে হবে, এই যুক্তিতে আমি বিশ্বাস করি না। বরং আমার মনে হয়, বিরাটকেই ক্যাপ্টেন রাখা উচিত।

এটুকু বলতে পারি, এই ভারত কিন্তু দেশের মাঠে শুধু নয়, বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে সেরাটা দিতে পারে। এটাই তো সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।