T20 World Cup 2022, INDvsPAK: বিরাটের ব্যাটে বদলার বড় জয় ভারতের

India vs Pakistan: বিরাট কোহলি ৫৩ বলে ৮২ রান। ওয়াইড বলে স্কোর লেভেল। অশ্বিন বাউন্ডারি মেরে ম্যাচ জেতালেন।

T20 World Cup 2022, INDvsPAK: বিরাটের ব্যাটে বদলার বড় জয় ভারতের
Image Credit source: twitter
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Oct 23, 2022 | 5:57 PM

দীপঙ্কর ঘোষাল

পাকিস্তান ১৫৯-৮ (২০ ওভার)

ভারত ১৬০-৬ (২০ ওভার)

মাঠে লক্ষাধিক, বাইরে একশো কোটিরও বেশি। প্রত্যাশার চাপ সামলে ভালো পারফরম্যান্স করা, মুখের কথা নয়। তবে পেশাদার ক্রিকেটাররা এ সবের সঙ্গে অভ্যস্ত। আর তাঁর নাম যদি বিরাট কোহলি (Virat Kohli) হয়, তাঁকে নিয়ে কোনও সন্দেহ থাকে কি? ম্যাচের আগে নানা অনুমান। কে জিতবে, কেন জিতবে। সহজ বাস্তব হল স্নায়ুর চাপ সামলে যে ভালো খেলবে, তারাই জিতবে। গত কয়েকদিন থেকেই আশঙ্কা ছিল বৃষ্টির। বৃষ্টির ভ্রুকুটি কাটিয়ে জিতল ক্রিকেট। একটা রুদ্ধশ্বাস ম্যাচের প্রত্যাশা ছিল মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে। হলও তাই। শেষ ওভারে গড়াল ম্যাচ। রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিল ভারত (Team India)। গত বিশ্বকাপে পাকিস্তানের কাছে প্রথম ম্যাচে হার, এরপর আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি ভারত। বিশ্বকাপের মঞ্চেই ভারতের বিরুদ্ধে সেটিই ছিল পাকিস্তানের প্রথম জয়। মেলবোর্নে আরও একটা বিশ্বকাপ, প্রথম ম্যাচে সেই পাকিস্তানের (India vs Pakistan) বিরুদ্ধে বদলা নিল ভারত। ম্যাচ বিশ্লেষণে TV9Bangla

বড় বাউন্ডারি, পেস, বাউন্স। ভারতীয় ব্যাটিং বনাম পাকিস্তান বোলিং। এমন অনেক প্রসঙ্গ উঠেছে। ভারতের টপ অর্ডার কিন্তু নিজেদের নামের প্রতি সুবিচার করতে পারল না। চাপ পড়ল মিডল অর্ডারে। ১৬০ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম ১০ ওভারে ৪৫-৪। শেষ পাঁচ ওভারে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৬০ রান। কঠিন, তবে অসম্ভব ছিল না। কেন না, ক্রিজে বিরাট-হার্দিক জুটি। শেষ ওভারে ১৬ রানের লক্ষ্য দাঁড়ায়। বাঁ হাতি স্পিনার মহম্মদ নওয়াজকে আক্রমণে আনেন বাবর। প্রথম বলেই হার্দিকের উইকেট। ৭৮ বলে ১১৩ রানের জুটি ভাঙল। ক্রিজে ডিকে। শেষ ওভার যেন কমেডি অফ এরর। ফ্রি-হিটে বোল্ড বিরাট, কিন্তু আউট হবে না। দৌঁড়ে তিন রান নিলেন বিরাট। শেষ ২ বলে ২ রান। পঞ্চম বলে স্টাম্পড দীনেশ কার্তিক।শেষ বলে ২ রান। ক্রিজে অশ্বিন। বিরাট কোহলি ৫৩ বলে ৮২ রান। ওয়াইড বলে স্কোর লেভেল। সার্কেলে ফিল্ডার বাড়িয়ে চাপে ফেলতে চেয়েছিল পাকিস্তান।  অশ্বিন মিড অফের উপর দিয়ে খেলে সিঙ্গল নিয়ে জয় নিশ্চিত করেন। এই মুহূর্তের আগে অবধি ভারতীয় সমর্থকদের যেন হৃদযন্ত্র খুলে বসতে হয়েছিল।

কতটা রান সুরক্ষিত? প্রথমে ব্যাট করলে এই চিন্তা থাকেই। টস জেতায় রোহিতকে তা ভাবতে হয়নি। তবে লক্ষ্য যাতে বড় না হয় সেদিকে নজর রাখতেই হত। পাকিস্তানের শুরু ভালো না হলেও প্রথমে ব্যাট করে ভারতকে ১৬০ রানের লক্ষ্য দেয় পাকিস্তান। হাইভোল্টেজ ম্যাচে যা অনেকটাই বড় লক্ষ্য। ভারতীয় পেসাররা শুরুতে যেমন লেন্থ বল, তেমনই পরের দিকে শর্টপিচ থিয়োরি। সবই কাজে লাগালেন ভারতীয় পেসাররা। স্পিন জুটি প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। একাদশ বাছাই নিয়ে রোহিতও প্রশ্নের মুখে। ব্যাটিং গভীরতা বাড়ালেন। কিন্তু ড্রপ ইন পিচে লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চাহালকে না রাখা প্রশ্ন তুলল। প্রতিপক্ষ শিবিরে বাঁ হাতি ব্যাটার থাকায় অফস্পিনার অশ্বিনকে খেলানোর সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাঁর ফিটনেস প্রশ্নের মুখে ফেলল। শান মাসুদের ক্য়াচ ফেলেন অশ্বিন। খুবই খারাপ ফিল্ডিং। অক্ষর প্যাটেলকে আনা হল ১৪ তম ওভারে। তাঁর উপর যদি ভরসাই না থেকে, খেলানোই বা হল কেন! শুধুমাত্র একজন বাঁ হাতি ব্যাটার লাগবে বলে! তাহলে ঋষভ পন্থকেই খেলানো যেত। অক্ষরকে মাত্র এক ওভার বোলিং করানো হল। তাঁর ওভারে এল ২১ রান।

বিশ্বকাপে স্বপ্নের অভিষেক হল ভারতের তরুণ পেসার অর্শদীপ সিংয়ের। কানায় কানায় পূর্ণ স্টেডিয়াম, পাকিস্তানের মতো প্রতিপক্ষ। প্রথম বলেই তুলে নিলেন পাকিস্তান অধিনায়ক বাবর আজমের উইকেট। সব মিলিয়ে ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৩ উইকেট। বোলিংয়ে নজর কাড়লেন হার্দিক পান্ডিয়াও। ৪ ওভারে ৩০ রান দিয়ে ৩ উইকেট তাঁর নামে। শান মাসুদের ক্যাচ মিসটাই টার্নিং পয়েন্ট হয়ে দাঁড়াল। শান মাসুদ ৪২ বলে ৫২ রানে অপরাজিত থাকলেন। ইনিংস অ্যাঙ্কর করায় উল্টো দিকে গিয়ার বদলাতে পারলেন ইফতিকার আহমেদ। তৃতীয় উইকেটে ৫০ বলে ৭৬ রান যোগ করে শান-ইফতিকার জুটি। শান এবং শাহিন আফ্রিদির ১৬ বলে ৩১ রানের জুটিও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়।

লক্ষ্য ১৬০ এবং স্কোর ৪৫-৪। ড্রিঙ্কস বিরতিতে কোচ রাহুল দ্রাবিড় এবং ক্রিজে থাকা হার্দিক-কোহলির মিনি মিটিং। দ্রাবিড় মূলত শ্রোতার ভূমিকায়। নিজেদের মধ্যে রণনীতি ঠিক করে নেন হার্দিক-কোহলি। এরপরই খেলার মোড় ঘুরতে শুরু করে। ভাল বলকে গ্যাপে ঠেলে খুচরো রান, সুযোগ পেলেই বিগ হিট। হার্দিক পান্ডিয়ার আচরণ অনেকটা ক্যারিবিয়ানদের মতো। ব্যারিটোন ভয়েস, ভয়ডরহীন ক্রিকেট। উল্টোদিকে বিরাট কোহলির মতো ক্লাস ব্যাটসম্যান। প্রয়োজনীয় রান রেট ১০-র উপরে থাকা সত্ত্বেও পাল্টা চাপ ফেলে এই জুটি। বিরাট-হার্দিক ক্রিজে থাকা মানেই অনবদ্য রানিং বিটউইন দ্য উইকেট। পাকিস্তান ফিল্ডাররা দিশেহারা হয়ে পড়লেন। ৪৩ বলে অর্ধশতরান কোহলির। ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস বোলিংয়ের বিরুদ্ধে ফিয়ারলেস ব্যাটিং শুরু করলেন বিরাট। পরবর্তী ১০ বলে ৩৩। ভুললে চলবে না হার্দিকের ইনিংসও। ৩৭ বলে ৪০ রান করলেও বিরাটের সঙ্গে তাঁর পার্টনারশিপটাই ম্যাচের পরিস্থিতি বদলে দেয়। চেজমাস্টার বিরাটের ব্যাটে ভর করে বদলার বড় জয়। এর জনই তাঁর নাম বিরাট কোহলি। বড় ম্যাচে তাঁর জ্বলে ওঠা প্রত্যাশিতই।

সংক্ষিপ্ত স্কোর : পাকিস্তান ১৫৯ ( শান মাসুদ ৫২, হার্দিক পান্ডিয়া ৩-৩০, অর্শদীপ ৩-৩২ )। ভারত ১৬০ (বিরাট কোহলি অপরাজিত ৮২, হার্দিক ৪০)। ভারত ৪ উইকেটে জয়ী।