IPL 2021: এমবিএ, রজনীকান্ত, ভাজ্জিকে পাশে পেয়ে ভেঙ্কটেশের ওপেনার হওয়ার গল্প
Venkatesh Iyer: আইপিএলের (IPL) নতুন সেনসেশন এখন ইন্দোরের ছেলে। তামিল পরিবারের ছেলে হিসেবে পড়াশোনাতেই গুরুত্ব ছিল বেশি। তাঁর বাবাও চাননি ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে খেলার জগতে ঢুকে পড়ুন। কিন্তু ভেঙ্কটেশের জেদ তাঁকে ক্রিকেট মাঠ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল।
সঙ্ঘমিত্রা চক্রবর্ত্তী
ব্যাট করতেন ছ’নম্বরে। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে মধ্যপ্রদেশের হয়ে ক্রমশ নিজেকে মেলে ধরা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ক্রিকেট জীবন যে মোড় নেবে এ ভাবে, নিজেই বুঝতে পারেননি। গত মরসুমে সৈয়দ মুস্তাক আলি টি-টোয়েন্টির আগে কোচ চন্দ্রকান্ত পণ্ডিত একদিন ডেকে বললেন, মিডল অর্ডার নয়, ওপেনার হিসেবে ব্যাট করুন। কোচের দাবি মানতে গিয়ে যে ভারতীয় ক্রিকেটে হইচই ফেলে দেবেন, সে দিন বুঝতে পারেননি ভেঙ্কটেশ আইয়ার (Venkatesh Iyer)। কেকেআরের (KKR) হয়ে আইপিএলের (IPL) দ্বিতীয় পর্বে প্রথম ম্যাচে ৪১ নট আউট, দ্বিতীয় ম্যাচে হাফসেঞ্চুরি। এতটাই মুগ্ধ করে ফেলেছেন কুড়ি-বিশের দুনিয়া যে, ভেঙ্কটেশের সঙ্গে তুলনা চলছে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের ব্যাটিং স্টাইলের।
চন্দ্রকান্ত বলছেন গত মরসুমের কথা, ‘ও খুব সাবলীল ব্যাট করত। ওর ব্যাটিংয়ে এমন কিছু ছিল, আমার মনে হয়েছিল, দারুণ কিছু করার ক্ষমতা আছে ছেলেটার। সেই কারণে ওকে আমি ওপেন করতে বলি।’
চোখধাঁধানো কভার ড্রাইভ, অফসাইডে রিস্ট শট, ধারালো কাট, অনসাইডে সাবলীল ব্যাটিং। ঝলকে রীতিমতো মোহিত। চাপের মুখে যাঁদেরই অভিষেক হয় আইপিএলে, তাঁদের কেউ কেউ চমকে দেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। ভেঙ্কটেশ সেই তালিকায় নতুন সংযোজন। তিনি যেন কুড়ি-বিশের দুনিয়ায় পা-ই রেখেছেন নিজেকে অন্য ভাবে চেনাবেন বলে। তার থেকেও আশ্চর্যের হল, তারকাখচিত নাইট শিবিরকে যেন একাই আলোর দিশা দেখাচ্ছেন ভেঙ্কটেশ। শুরু থেকেই এত পরিণতবোধ খুব কম মেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে।
মিডল অর্ডার থেকে তুলে এনে হঠাৎ ওপেনার করে দেওয়া চন্দ্রকান্তের নতুন নয়। এর আগে ইউসুফ পাঠানের ক্ষেত্রেও করেছেন এক কাজ। সফলও হয়েছিলেন মধ্যপ্রদেশের কোচ। তবে, ভেঙ্কটেশের মতো এত দ্রুত সাফল্য হয়তো পাননি। চন্দ্রকান্তের কথায়, ‘ইউসুফও ওর মতোই ছিল, আগে কখনও ওপেন করেনি। কিন্তু ইউসুফকে ওপেন করতে পাঠানোর এখটাই কারণ ছিল, মিডল অর্ডারে ওর প্রতিভার প্রতি অবিচার হচ্ছিল। ভেঙ্কটেশের ক্ষেত্রেও তাই।’
আইপিএলের নতুন সেনসেশন এখন ইন্দোরের ছেলে। তামিল পরিবারের ছেলে হিসেবে পড়াশোনাতেই গুরুত্ব ছিল বেশি। তাঁর বাবাও চাননি ছেলে পড়াশোনা ছেড়ে খেলার জগতে ঢুকে পড়ুন। কিন্তু ভেঙ্কটেশের জেদ তাঁকে ক্রিকেট মাঠ পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছিল। মা ঊষা আইয়ার অ্যাপোলো হাসপাতালের নার্স। তিনিই ছেলেকে নিয়ে যান মহারাজা যশবন্ত্র ক্রিকেট ক্লাবে। সেখানকার কোচ দীনেশ শর্মা ছোট্ট ভেঙ্কটেশকে দেখে বুঝতে পেরেছিলেন, এই ছেলেকে ঠিকঠাক ক্রিকেট পাঠ দিতে পারলে অনেক দূর যাবে। ঊষাকে তিনি বুঝিয়েছিলেন, আমাকে দুটো বছর সময় দিন। তার মধ্যে না পারলে ওকে নিয়ে আপনাদের যা ইচ্ছে করবেন।
ক্রিকেটের পাশাপাশি পড়াশোনাতেও তুখোড় অর্থনীতিতে এমবিএ আছে করেছেন। আর রজনীকান্তের বিরাট ভক্ত তিনি। সুপারস্টারের সব সিনেমা দেখেন। এমনকি, রজনীকান্তকে কপিও করেন। সেই ভেঙ্কটেশ সবচেয়ে বেশি পাশে পেয়েছেন হরভজন সিংয়ের। তিনি যাতে কেকেআরের প্রথম একাদশে ঢুকতে পারেন, তার চেষ্টাও করেছেন ভাজ্জি। কোচ ব্রেন্ডন ম্যাকালামকে তা বলেওছিলেন। ম্যাকালামও তাঁর মধ্যে দেখতে পেয়েছিলেন প্রতিভার ছায়া। আরসিবি ম্যাচের আগে ডেকে বলেছিলেন, তুমি খেলছ।
ঊষা আইয়ার, দীনেশ শর্মা, ভাজ্জি, ম্যাকালামরা যে ভুল ছিলেন না, সেটাই ম্যাচের পর ম্যাচ প্রমাণ করে দিচ্ছেন ভেঙ্কটেশ আইয়ার।