Yashasvi Jaiswal: আলো-শৌচাগার নেই, মালিদের মারধর সয়ে তিনবছর তাঁবুতে বাস! অনুপ্রেরণার আরও এক নাম যশস্বী
শীত, গ্রীষ্ণ, বর্ষা- ১২ মাস ওই তাঁবুতে বাস। শৌচাগার ছিল না। আলো-পাখা কিছুই নেই। কোনও কোনও দিন তাঁবু ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে এসে শুয়ে পড়তেন রোগাসোগা, শ্যামবর্ণের যশস্বী।
কলকাতা: মুম্বইকে বলা হয় স্বপ্ন নগরী। প্রতিদিন ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ তাঁদের স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি দেন আরব সাগরের পাড়ের শহরটিতে। কিছু করে দেখানোর তাগিদে। স্বপ্ন চুরমার করে ফিরতে হয় অনেককেই। কিন্তু স্বপ্ন নগরী সকলকে কি ফেরায়? নিষ্ঠা, পরিশ্রম আর নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে এই শহরে এসেই পৃথিবী জয় করেছেন এমন উদারহণ রয়েছে। বান্দ্রার ব্যান্ডস্ট্যান্ডের ওই প্রসাদোপম বাড়ির মালিক তাঁর অন্যতম উদাহরণ। ১০ বছর বয়সে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে উত্তরপ্রদেশ থেকে মুম্বইয়ে পাড়ি দেওয়া ছেলেটিকেও ফেরায়নি এ শহর। সেল্ফ মেড ম্যান বলতে যা বোঝায়, ভারতীয় ক্রিকেটের আগামীর তারকা যশস্বী জসোওয়াল (Yashasvi Jaiswal) হলেন তেমনই একজন। পরিবার-পরিজন ছেড়ে, লোকের হাতে মার খেয়ে, তাঁবুতে ঘুমিয়ে যে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন লালন করেছিলেন, তা সত্যি হয়েছে। আইপিএলের (IPL 2023) মঞ্চে যশস্বীর জয়জয়কার। এক তরুণের জেদ ও ইচ্ছে শক্তির জয়। মাত্র ২১ বছর বয়সেই বহু নিম্নবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের অনুপ্রেরণার নাম যশস্বী জসোওয়াল। বিস্তারিত TV9 Bangla Sports-এর এই প্রতিবেদনে।
শীত, গ্রীষ্ণ, বর্ষা- ১২ মাস ওই তাঁবুতে বাস। শৌচাগার ছিল না। আলো-পাখা কিছুই নেই। কোনও কোনও দিন তাঁবু ছেড়ে খোলা আকাশের নিচে এসে শুয়ে পড়তেন রোগাসোগা, শ্যামবর্ণের যশস্বী। দূর সম্পর্কের এক আত্মীয়র বাড়ি মুম্বইয়ে। একরাশ স্বপ্ন নিয়ে স্বপ্ন নগরীতে এসে প্রতি পদে পদে হোঁচট খেয়েছিলেন। প্রথম প্রথম একটি ডেয়ারি প্রোডাক্টের দোকানে কাজ নেওয়া। সেখান থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় কিছুদিনের মধ্যেই। তারপর ওই আত্মীয়র বাড়ি। অনাকাঙ্খিতের মতো একপাশে পড়ে থাকা। একদিন হঠাৎ করে মাথার ছাদটুকুও কেড়ে নেওয়া হল। আত্মীয়র বাড়ি থেকে বিতাড়িত হয়ে যশস্বীর ঠাঁই হয় মুম্বইয়ের আজাদ ময়দানের বাইরের তাঁবুতে। সেখানেও নিস্তার নেই। ময়দানের মালিদের মারধর, গালি খেয়ে দিন কাটত। বুক ফাটে তবু মুখ ফোটে না। শান্ত স্বভাবের যশস্বী সেসব সয়ে নিতেন মুখ বুজে।
যশস্বীর কথায়, “ওই আত্মীয় একদিন হঠাৎই আমাকে বাড়ি থেকে বের দিয়েছিল। মুম্বই কাউকে চিনতাম না। খুব অসহায় লাগছিল। তখন একটা কাজ করলাম, নিজের জিনিসপত্র নিয়ে আজাদ ময়দানে চলে গেলাম। ইমরান স্য়ার নামে পরিচিত একজনের ক্লাব ছিল মুসলিম ইউনাইটেড। তিনি আমাকে বলেন, আগে একটা ম্যাচ খেলে দেখা। ভালো পারফর্ম করতে পারলে তাঁবুতে থাকতে পারবি।”
সংগ্রামের দিনগুলির কথা বলতে গিয়ে গলা ধরে আসে ছেলেটির। বললেন, “রাতে শোয়ার ভীষণ সমস্যা হত। আলো, পাখা ছিল না। এমনকী শৌচাগারও ছিল না। নিজের জামাকাপড় নিজেই কাচতে হত। দিন ওভাবেই কেটে যাচ্ছিল, কিন্তু ভীষণ কষ্টের ছিল দিনগুলি। নিজের কষ্টের কথাগুলো কাউকে বলতে পারতাম না। কারণ মালিরা আমার সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করত। কখনও কখনও মারধরও করত। পেটের দায়ে একটা সময় ফুচকা বিক্রি করতে শুরু করি। ধীরে ধীরে ওই জীবনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম। কিন্তু ভগবানের কাছে সবসময় প্রার্থনা করতাম যাতে এত কষ্টের জীবন থেকে বেরিয়ে আসতে পারি।”