AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

T20 World Cup 2021: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ‘আরও তেরো’র গল্প সাজাচ্ছে বিরাটের ভারত

পাঁচ বছর পর আবার কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি নামবে ভারত-পাকিস্তান। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেনের ম্যাচের পর। দুবাইয়ের মাঠে রান থাকবে প্রচুর। ১৫০-র ধারেকাছে রান উঠবে। বোলারদের উপর নির্যাতন বাড়বে। আর ওই মাঠ যদি 'হোম' হয় পাকিস্তানের, ভারতেরও কিছু কম নয়। এই দুবাইয়ে আবার রান তাড়া করে জেতার সম্ভাবনা বেশি।

T20 World Cup 2021: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'আরও তেরো'র গল্প সাজাচ্ছে বিরাটের ভারত
T20 World Cup 2021: পাকিস্তানের বিরুদ্ধে 'আরও তেরো'র গল্প সাজাচ্ছে বিরাটের ভারত (ছবি-টুইটার)
| Edited By: | Updated on: Oct 24, 2021 | 9:07 AM
Share

অভিষেক সেনগুপ্ত

যদি প্রত্যাবর্তন চাও, সব কিছু ভেঙেচুরে দাও!

কামব্যাক স্টোরির পিছনে হয়তো এমনই কিছু শব্দবন্ধনী থাকে। ফিরে আসার রাস্তা খোঁজেন যাঁরা, তাঁরাই বলতে পারবেন। হার দেখতে দেখতে, মাথা নীচু করে মাঠ ছাড়তে ছাড়তে অনেক সময় কেউ নিজেকেই হয়তো বলে ওঠেন, ‘আর কবে…!’

শুক্রবারের টিম মিটিংয়ে নিশ্চয় অসংখ্যবার প্রতিধ্বনিত্ব হয়ে ওই দুটো শব্দই, আর কবে! কখনও ক্ষতবিক্ষত ইমরান খান। কখনও বিপর্যস্ত রামিজ রাজা। সমালোচিত শোয়েব মালিক। মহম্মদ হাফিজ। কিংবা, এই প্রজন্মের বাবর আজম। সেই আঠাশ বছর আগে যে বিপর্যয়ের শুরু। সিডনির মাঠ থেকে যে স্বপ্নের পিছনে হাহুতাশ দৌড়— ‘আর কবে’!

সংখ্যা সবসময় কাঠখোট্টা হয় না। কিছু সংখ্যা অনেক সময় যন্ত্রণা দেয়। কষ্ট বয়ে আনে। একডজন গপ্পো হলে তো কথাই নেই। বর্তমান থেকে প্রাক্তন হলে আক্ষেপ। প্রাক্তন আবার বর্তমানের কাছে প্রত্যাশী। ১২বারের বিশ্বকাপ হার ভুলে ‘তেরোয় ফেরো’র স্লোগান তুলেছে পাকিস্তান!

সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু ছবি ভাইরাল হয়ে যায়। আর্তির জন্য। আবেদনের মিশ্র প্রতিক্রিয়ায়। মহেন্দ্র সিং ধোনির সঙ্গে পাক সমর্থক কিংবা পাক বোলারের ছবি। টিম ইন্ডিয়া ক্যাপ্টেন বিরাট কোহলির প্র্যাক্টিসে হানা দেওয়া ভারতীয় তরুণীদের সেলফি। এই সব টুকরো টুকরো ছবি আসলে একটা ম্যাচের প্রাচুর্য তুলে ধরে। ম্যাচ ঘিরে গণবিস্ফোরণের খোঁজ দেয়। দুবাই যখন কেন্দ্রে, তখন ভারত-পাক আলাদা করে বাছা মুশকিল। সবই মিলে মিশে একাকার হয়ে যায়। রবিবার সন্ধেয় গ্যালারি যাই বলুক না কেন, বাইশ গজ অন্য কথা শোনাবে। একটা টিমের আঠাশ বছরের প্রাধান্য। গ্রিন আর্মিকে চিরকালীন দুরমুশ করার কাহিনি। বিরাট কোহলি অ্যান্ড কোং আরও একটা বিশ্বযুদ্ধের অপেক্ষায়।

রোহিত, রাহুল, বিরাট, সূর্য, পন্থ… আগ্রাসনের লম্বা লাইন! যে কেউ যে কোনও সময় ম্যাচের রং, গতিমুখ পাল্টে দিতে পারেন। হার্দিক কিংবা জাডেজা থাকবেন। প্রশ্ন হল, বিরাটের এই ভারত কি কাপ জিততে পারে? যে কোনও টুর্নামেন্টের প্রথম ম্য়াচটা সব সময় গুরুত্বপূর্ণ হয়। যে কোনও পরীক্ষার প্রথম পেপারটার মতো। ওটা ভালো হলেই আত্মবিশ্বাস এসে যায়। ভারতও তাই পাকিস্তানকে হারানোর জন্য মরিয়া। ২০১১ সালে ওয়ান ডে বিশ্বকাপ জয়। ২০০৭ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জয়। সবই মহেন্দ্র সিং ধোনির জমানায়। তারপর ভাঁড়ার শূন্য। বিরাট নিজে যত বড় ক্রিকেটারই হোন না কেন, নেতা হিসেবে কিছুই দিতে পারেননি দেশকে। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগেই যে কারণে অধিনায়কত্ব ছাড়ার কথা ঘোষণা করে দিয়েছেন। বিরাটের কাছে এটাই সোনার সুযোগ। কাপ জিতিয়ে চিরকালীন স্মৃতিতে ঢুকে পড়ার।

মাঠের বাইরের বিতর্কে ইদানীং ভারত বড্ড বেশি জেরবার। কোচ রবি শাস্ত্রীও সরে যাবেন আমিরশাহি বিশ্বকাপের পর। সাপোর্ট স্টাফরাও থাকবেন না আর। মাঠের ভারত কি খুব স্বস্তিতে? তাও তো নয়। আইপিএল যতই দেখার চোখ ও শোনার কান পাল্টে দিক, ভারত এখনও ব্যক্তিগত নৈপুন্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি। এই বিশ্বকাপে রোহিত, রাহুল, বিরাট নির্ভরতা কিন্তু চাপে ফেলে দিতে পারে শাস্ত্রীর টিমকে। সোজা কথায় বললে, রোহিত, রাহুল, বিরাটকে বাদ দিলে কিন্তু টিমকে টানার মতো প্লেয়ার নেই। সূর্য যতই গনগনে হোন, পন্থ যতই আগ্রাসী হোন, পরিণত বোধ এখনও জন্ম নেয়নি। সম্প্রতি সুনীল গাভাসকর আশঙ্কাজনক একটা ফাঁক দেখিয়েছেন ভারতের। ৭ থেকে ১২ ওভারের মধ্যে বিরাটরা খুব বেশি রান তুলতে পারেন না। ওই পর্বে উইকেটও হারান তাঁরা। যে কারণে বড় রানের হাতছানি থাকা সত্ত্বেও তা আসে না। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যদি এমন হয়?

বাবর আজমের এই পাকিস্তান কিন্তু তারুণ্যের চমক দেখাতে পারে। পাক টিমে কারা ছড়াতে পারেন আতঙ্ক? ক্যাপ্টেন বাবর নিজেই দারুণ ছন্দে। এতটাই যে বিরাট কোহলির সঙ্গে তুলনা হয় তাঁর। মহম্মদ রিজওয়ান থাকবেন তালিকায়। ধারাবাহিকতার কারণে। ফখর জামানও টানার ক্ষমতা রাখেন টিমকে। উঠতি তারকা হায়দার আলিতেও মুগ্ধতা রাখছেন অনেকে। বুড়ো হাড়ে ভেল্কি দেখাতে পারেন মহম্মদ হাফিজ, শোয়েব মালিক। ব্যাটিং গভীরতা যখন আস্থা বাড়াচ্ছে, পাক টিমের বোলিং নিয়ে তখন প্রশ্ন থাকছে। শাহিন আফ্রিদি ছাড়া আর কেউই সে ভাবে ছাপ রাখতে পারেননি। হাসান আলি কিংবা হ্যারিস রউফের প্রতিভার বিচ্ছুরণ নেই। স্পিন বিভাগেও শূন্যতা বেশি। ইমাদ ওয়াসিম ছাড়া বিপক্ষকে চাপে রাখতে পারেন, এমন স্পিনার নেই বাবরের হাতে। তবু এই পাকিস্তানকে দেখে অন্যরকম লাগছে। সাহসী হওয়ার চেষ্টা করছেন বাবররা। না হলে ম্যাচের চব্বিশ ঘণ্টা আগে ১২ জনের টিম কবে ঘোণষা করে দিয়েছে পাকিস্তান?

হিসেব নিকেষ দিয়ে কি এই ম্যাচ হয়? না! এমন ম্যাচ বরাবর নার্ভের খেলা। এমন ম্যাচ চাপ সামলাতে সামলাতে নিজেকে উজাড় করে দেওয়ার ম্যাচ। যে কাজটা গত আঠাশ বছর ধরে বারবার করে এসেছে ভারতীয় টিম। এই ম্যাচেও ভারতই ফেভারিট। শুধু একটা চাপ থাকছে ভারতের। আধাফিট হার্দিক পান্ডিয়া। বোলার হার্দিক এখনও পুরোপুরি ফিট নন। যে কারণে তাঁকে ২ ওভারের বেশি বল করানো যাবে না। তা হলে কি তাঁকে খেলানো হবে? নাকি, তাঁর বদলি হিসেবে টিমে আসবেন শার্দূল ঠাকুর? বিরাট কিন্তু বলে দিয়েছেন, ছ’নম্বরে ব্যাটসম্যান হিসেবে হার্দিকের গুরুত্ব টিম ম্যানেজমেন্ট ভালোই বোঝে।

পাঁচ বছর পর আবার কোনও টি-টোয়েন্টি ম্যাচে মুখোমুখি নামবে ভারত-পাকিস্তান। ২০১৬ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ইডেনের ম্যাচের পর। দুবাইয়ের মাঠে রান থাকবে প্রচুর। ১৫০-র ধারেকাছে রান উঠবে। বোলারদের উপর নির্যাতন বাড়বে। আর ওই মাঠ যদি ‘হোম’ হয় পাকিস্তানের, ভারতেরও কিছু কম নয়। এই দুবাইয়ে আবার রান তাড়া করে জেতার সম্ভাবনা বেশি।

কুড়ি-বিশের ম্যাচ আসলে লহমায় পাল্টে যায়। মুঠো আলগা করলেই গল্প শেষ। এমন ম্যাচ পাকিস্তানি আস্ফালন উড়িয়ে দিয়ে বিরাটরা আরও একবার জিততে চাইবেন, তাতে আর সন্দেহ কী!