IND U 19: একটু আলোর সন্ধান, কঠিন পরিশ্রমের পুরস্কার পেলেন রাহুল
Rahul Prasad: ক্রিকেট মাঠে তাঁর পারফরম্যান্সের চেয়েও প্রেরণা জোগায় ব্যক্তিগত সংগ্রাম। গত বছর মায়ের মৃত্যু হয়েছে। ১৭ বছরের রাহুলের জীবনটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। বাবা ট্যাক্সিচালক। সংসারে সাহায্য করতে হয় তাঁকেও। সাইকেলে ফুড ডেলিভারির কাজও করেন বেশ কয়েক মাস।
কলকাতা : গলি থেকে রাজপথ। এমন অনেক উদাহরণই রয়েছে। সেটা যে কোনও পেশাতেই। ক্রীড়াবিদদের জীবনেও এমন মোড় ঘোরানো মুহূর্ত এসেছে। সুযোগ প্রত্য়েকেরই হয়তো আসে, কেউ সেটা বুঝতে পারেন, কেউ অবহেলায় হারান। এমনই একটা সুযোগ এসেছে রাহুল প্রসাদের জীবনে। রাজপথের সন্ধান না পেলেও গলি থেকে বেরিয়ে একটা বড় রাস্তা অবধি পৌঁছতে পেরেছেন। এই পথে কতটা দূরত্ব পৌঁছতে পারবেন, সেটা সময় বলবে। এই অবধি পৌঁছতে তাঁকে কতটা সংগ্রাম করতে হয়েছে, তা অবশ্য অনেকের কাছেই প্রেরণার। সোদপুরের রাহুল প্রসাদ সুযোগ পেয়েছেন অনূর্ধ্ব ১৯ জাতীয় দলের শিবিরে। বেঙ্গালুরুর জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে এই শিবির। বাংলা ক্রিকেটে অনবদ্য পারফরম্যান্সে যেমন কোচ এবং নির্বাচকদের মুগ্ধ করেছেন, এ বার তার সামনে জাতীয় নির্বাচকরা। শিবিরে ভালো পারফরম্যান্স করতে পারলে কে জানে, হয়তো বিশ্বকাপ খেলারও সুযোগ মিলতে পারে এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের! বিস্তারিত TV9Bangla-য়।
ক্রিকেট মাঠে তাঁর পারফরম্য়ান্সের চেয়েও প্রেরণা জোগায় ব্য়ক্তিগত সংগ্রাম। গত বছর মায়ের মৃত্য়ু হয়েছে। ১৭ বছরের রাহুলের জীবনটা আশ্রয়হীন হয়ে পড়ে। বাবা ট্যাক্সিচালক। সংসারে সাহায্য করতে হয় তাঁকেও। সাইকেলে ফুড ডেলিভারির কাজও করেন বেশ কয়েক মাস। মায়ের মৃত্য়ুর তিন দিনের মধ্যে বাংলা দলের ট্রায়াল ছিল কল্য়াণীতে। এমন পরিস্থিতিতে ট্রায়ালে যাবেন কী ভাবে। ছেলেবেলার কোচ বীরেন্দ্র প্রতাপ সিং কার্যত জোর করেই তাঁকে পাঠান। পারফরম্য়ান্সে শোকের ছায়া পড়তে দেননি। হয়তো তাঁর চোখের সামনে ভাসছিল সচিন তেন্ডুলরকর কিংবা বিরাট কোহলিদের উদাহরণ!
বাংলার বয়স ভিত্তিক দলে জায়গা মেলে। ধীরে ধীরে আরও অনেক সুযোগ। কেরিয়ারের টার্নিং পয়েন্ট হয়তো কোচ আব্দুল মোনায়েমের সঙ্গে দেখা হওয়া। ভবানীপুর ক্লাবের পাশাপাশি আদিত্য স্কুল অব স্পোর্টসেও প্রশিক্ষণ দেন। রাহুলের খেলা ভালো লাগায় তাঁকে ক্লাব ক্রিকেটেও সুযোগ দেন। রাহুলের এই সুযোগে উচ্ছ্বসিত আদিত্য গ্রুপের চেয়ারম্যান অনির্বাণ আদিত্য। বলছেন, ‘রাহুলকে অনেক শুভেচ্ছা। দক্ষতা, পরিশ্রম, দায়বদ্ধতার পুরস্কার পেল ও। রাহুল দেখিয়ে দিয়েছে, চেষ্টা করলে শত বাধা পেরিয়ে সাফল্য পাওয়া যায়। সকলের কাছেই প্রেরণা হয়ে থাকবে রাহুল।’
আগামী বছর অনূর্ধ্ব ছেলেদের বিশ্বকাপ। রাহুল জানালেন, ২৪ এপ্রিল থেকে জাতীয় ক্রিকেট অ্যাকাডেমিতে অনূর্ধ্ব ১৯ দলের শিবির শুরু হবে। এ দিনও ক্লাব ক্রিকেটে ম্য়াচ ছিল তাঁর। গত কয়েকবছর ধরে আব্দুল মোনায়েমের কোচিংয়ে খেলছেন রাহুল। তাঁকে নিয়ে স্বপ্ন দেখাচ্ছেন কোচও। আব্দুল মোনায়েমের কথায়, ‘ক্রিকেট শুধু টেকনিকের বিষয় নয়। অনেকটাই মানসিক। আর এই জায়গায়াতেই ও এগিয়ে। পরিস্থিতি ওকে মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী করেছে। এখনও অনেকটা পথ চলা বাকি। সবে শুরু। আশা করছি, রাহুল ওর দক্ষতা প্রমাণ করবে।’ এপ্রিলের এই শিবির থেকে রাহুলের নতুন যাত্রা শুরু। হতেই পারে, আজ থেকে কয়েকটা বছর পর আরও একটা ‘রাহুল’ পেল ভারতীয় ক্রিকেট!