কৃষ্ণলীলায় ডার্বি দখল হাবাসের

TV9 বাংলা ডিজিটাল: এটিকে মোহনবাগান-২ : এসসি ইস্টবেঙ্গল-০ (কৃষ্ণা ৪৯, মনবীর ৮৫ যুবভারতী আর ময়দান বোধহয় দুটো আলাদা দেশ ছিল এত দিন!প্রথমটা তিনি চিনতেন। সল্টলেক স্টেডিয়ামে ম্যাচ থাকলে উৎসাহী দর্শকের ছোট ছোট ভিড়গুলো উপভোগ করত তাঁর পারফরম্যান্স। গোলের মরিয়া তাগিদ। বিপক্ষের বক্সে হামলে পড়া। তখন তাঁর গায়ে থাকত লাল-সাদা জার্সি।আর দ্বিতীয়টা, এই প্রথম আবিষ্কার করলেন […]

কৃষ্ণলীলায় ডার্বি দখল হাবাসের
ডার্বিতে গোলের পর রয় কৃষ্ণার উচ্ছ্বাস। ছবি-আইএসএল
Follow Us:
| Updated on: Nov 28, 2020 | 8:30 AM

TV9 বাংলা ডিজিটাল:

এটিকে মোহনবাগান-২ : এসসি ইস্টবেঙ্গল-০ (কৃষ্ণা ৪৯, মনবীর ৮৫

যুবভারতী আর ময়দান বোধহয় দুটো আলাদা দেশ ছিল এত দিন!প্রথমটা তিনি চিনতেন। সল্টলেক স্টেডিয়ামে ম্যাচ থাকলে উৎসাহী দর্শকের ছোট ছোট ভিড়গুলো উপভোগ করত তাঁর পারফরম্যান্স। গোলের মরিয়া তাগিদ। বিপক্ষের বক্সে হামলে পড়া। তখন তাঁর গায়ে থাকত লাল-সাদা জার্সি।আর দ্বিতীয়টা, এই প্রথম আবিষ্কার করলেন বোধহয়! জার্সি পাল্টেছে। পাল্টেছে তাঁর ক্লাবের নামও। এটিকে থেকে এটিকে-মোহনবাগানে পা রেখে রয় কৃষ্ণা বুঝতে পারছেন, আইএসএল গত মরসুমে তাঁকে যা দেয়নি, এমনকি ফিজি বা অস্ট্রেলিয়ার ‘এ’ লিগে খেলার সময়ও যা পাননি, তাই তাঁকে দিচ্ছে সবুজ-মেরুন রং। একটা ডার্বি, একটা বড় ম্যাচে গোল রাতারাতি পরিচিত মুখ থেকে মহানায়ক হয়ে গিয়েছেন কৃষ্ণা। বাগানের গণ-আদরে কৃষ্ণা এখন নাম কী? কেষ্ট। কৃষ্ণ। বাগানের রয়। সব ছাপিয়ে গিয়ে একটাই কাথা ঘুরছে তাঁকে ঘিরে- রাখে হরি মারে কে!

আক্ষরিক অর্থে তাই। কৃষ্ণার জন্য আইএসএলের প্রথম ম্যাচেই কেরালার বিরুদ্ধে জয় পেয়েছিল আন্তনিও হাবাসের টিম। পরের ডার্বি ম্যাচেও ২-০ জয়। কৃষ্ণা আর তাঁর দলবলের দাপটে ইস্টবেঙ্গল কার্যত ভুলের পাহাড় তৈরি করল। সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে রবি ফাউলারের লাল-হলুদকে। হাবাস ৩-৫-২ ছকে নেমেছিলেন। বরাবরের পছন্দের স্ট্র্যাটেজি। প্রয়োজনে বিপক্ষের বক্সে লোক বাড়ানো, দরকারে নিজের ডিফেন্সে পায়ের জঙ্গল তৈরি করা। হাবাসের ফুটবল ভাবনায় বরাবরই আগ্রাসী গন্ধ থাকে। গোয়ার তিলক ময়দানে হলেও বাঙালির এই প্রথম আইএসএল বড় ম্যাচও তার ব্যতিক্রম নয়। আসলে হাবাস চেয়েছিলেন, শুরু থেকেই ফাউলারকে চাপে রাখতে। আইএসএলের প্রথম ম্যাচ তাঁর টিম খেলে ফেলেছে। কিন্তু ফাউলার এই প্রথম নামলেন তাঁর টিম নিয়ে। সেই সুযোগটা নিতে চেয়েছিলেন হাবাস। নব্বই মিনিটের শেষে বলতে হচ্ছে, হাবাসের স্ট্র্যাটেজি হিট। রয় কৃষ্ণা আর ডেভিড উইলিয়ামসকে সামনে রেখে একটু পিছন থেকে কার্ল ম্যাকহিউজকে খেলালেন হাবাস। এই ত্রিভূজটা প্রথমার্ধে বেশ চাপেই রেখেছিল ড্যানি ফক্স-রানা ঘরামিদের। প্রথমার্ধটা গোলশূন্য ছিল। দুটো টিমই খুব বেশি ঝুঁকি যেমন নিতে চায়নি। বরং একে অপরকে বুঝে নিতে চেয়েছিল। তার মধ্যেও অবশ্য কয়েকবার গোলের কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলেন মোহনবাগান ফরোয়ার্ডরা। বিরতির পর গোলের জন্য ঝাঁপিয়েছিল মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলকে ঘর সামলানোর সুযোগই দেননি কৃষ্ণারা। ৪৯ মিনিটে বাঁ দিক থেকে থ্রু পাঠান জয়েস রানে। জাভি হার্নান্ডেজ ইস্টবেঙ্গলের এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে পাস বাড়ান কৃষ্ণাকে। বক্সের ডান দিক থেকে বাঁ পায়ের জোরাল শটে ১-০ কৃষ্ণার। ওই গোলটাই আগুন জ্বালিয়ে দিল। আরও তেতে ওঠে মোহনবাগান। ইস্টবেঙ্গলেও এ বার তারকার ছড়াছড়ি। স্কট নেভিল, ড্যানি ফক্স, জ্যাকস মাঘোমা, মাতি স্টেইনম্যানদের মতো তারকার আছেন। প্রথমার্ধে মাতিরা বল ধরার সুযোগ দিচ্ছিলেন না জাভিকে। উইলিয়ামসও খুব একটা কার্যকর ছিলেন না। ফাউলারের টিম পায়ে বল রেখে খেলার চেষ্টা করছিল। কিন্তু বিরতির পর মোহনবাগান ঝাঁঝে লাল-হলুদ যেন অনেকটাই নিষ্প্রভ হয়ে গিয়েছিল। হাবাসের গুণ হল, বিপক্ষকে কখনওই স্বস্তিতে থাকতে দেন না। গোল হলে তো কথাই নেই, না হলেও ঘনঘন স্ট্র্যাটেজি বদলান। ডার্বিতেও হাবাস ১-০ হওয়ার পরেই আরও আক্রমণাত্মক হলেন। ৬৩ মিনিটে জোড়া বদল নিলেন তিনি। জয়েস রানেকে তুলে নামালেন প্রণয় হালদারকে। যাতে মাঝমাঠেই পাল্টা প্রতিরোধ তৈরি করতে পারে বাগান। আর উইলিয়ামসের বদলি হিসেবে নামালেন মনবীর সিংকে। কেরালার ম্যাচেও মনবীর নামার পর খেলার রং পাল্টে গিয়েছিল। এই ম্যাচেই তা-ই হল। ছটফটে মনবীরের চকিৎ দৌড়, ঘনঘন জায়গা বদল, কৃষ্ণা, জাভির সঙ্গে চমৎকার বোঝাপড়া লাল-হলুদ ডিফেন্ডারদের আরও চাপে ফেলে দিয়েছিল। ৮৫ মিনিটে মনবীরই ২-০ করে গেলেন। ডান প্রান্ত থেকে বলটা যখন পান মনবীর, তাঁর আশেপাশে লাল-হলুদের কোনও ডিফেন্ডারই নেই। এই রকম ম্যাচে এ সব ভুলের কোনও ক্ষমা হয় না। মনবীর সহজেই গোল করে যান। এটিকে যে একেবারে এক তরফা খেলেছে, তা বললে ভুল হবে। ইস্টবেঙ্গলও বেশ কিছু সুযোগ পেয়েছিল। বলবন্ত সিং একবার গোলের জায়গায় পৌঁছে গিয়েছিলেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ভাবে ওই গোল মিস করেন। ওই গোলটা হলে কিন্তু পরিস্থিতি অন্য রকম হতে পারত। হয়তো ওখান থেকেই খেলাটা ঘুরিয়ে দেওয়ার রদস পেয়ে যেত ফাউলারের ইস্টবেঙ্গল। ডার্বির মজা হল, যে টিম জেতে, তাদের ঘিরে ঘনিয়ে ওঠে উৎসব। ইস্টবেঙ্গলের ভুল, দোষত্রুটি নিয়ে আলোচনার সুযোগ কোথায়? ময়দান নামক ‘নতুন দেশে’ হরি সংকীর্তন চলছে যে!

মোহনবাগান: অরিন্দম, প্রীতম, তিরি, সন্দেশ, শুভাশিস, প্রবীর (সুমিত ৯০), জাভি, কার্ল, জয়েস (প্রণয় ৬৩), কৃষ্ণা (ইনম্য়ান ৯০), উইলিয়ামস (মনবীর ৬৩)। ইস্টবেঙ্গল: দেবজিৎ, স্কট, রানা (অভিষেক ৫৮), ফক্স, নারায়ণ, মাতি, লোকেন (আনঘৌ ৭৯), সুচন্দ্রা, পিলকিংটন, মাঘোমা, বলবন্ত (রফিক ৬৫)।