EURO 2020 : গোল করেও ভিলেন মোরাতা, ফাইনালে ইতালি
একটা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যাবে স্পেন কোনপর্যায়ে দাপট দেখাচ্ছিল ম্যাচে। ম্যাচে স্পেনের বল পজেশন ছিল ৭০%। সেখানে ইতালির মাত্র ২৯%।
ইতালি- ১ (চিয়েসা ৬০’)
স্পেন- ১ (মোরাতা ৮০’)
টাইব্রেকার-
ইতালি ৪ : স্পেন ২
লন্ডনঃ ম্যাচে প্রথম থেকে দাপট। প্রতিপক্ষকে বোতলবন্দি করে দেওয়া। বল পজেশন বেশি রাখা। সবকিছু করার পরেও ম্যাচ জিততে নাও পারে সেই দল। যদি না ফুটবলদেবতা সহায় না হন। মঙ্গলবার যা ঘটল স্পেনের (SPAIN)সঙ্গে। ইতালির(ITALY) বিরুদ্ধে ইউরো কাপের (EURO 2021)প্রথম সেমিফাইনালে দাপট ছিল স্পেনেরই। অথচ, ম্যাচ টাইব্রেকারে(TIE BREAKER) গড়াতেই বিদায় হল স্পেনের। নির্ধারিত ৯০ মিনিটে ম্যাচের ফল ১-১ থাকার পর ম্যাচ গড়ায় ইনজুরি টাইমে। সেখানেও ফয়সালা না হওয়ায় টাইব্রেকারে পৌঁছায় ম্যাচ। ৪-২ গোলে টাইব্রেকারে সেমিফাইনাল জিতে শেষ ল্যাপে(FINAL) মানচিনির ইতালি(ITALY)।
চলতি ইউরোতে মানচিনির ইতালি আর এনরিকের স্পেনের মধ্যে পার্থক্য ছিল বিস্তর। ২০১৮ বিশ্বকাপে যোগ্যতা অর্জন করতে না পারা ইতালি আর এই ইতালি যেন আকাশ পাতাল তফাত। প্রায় খোলনলচে বদলে গিয়েছে অনেকটাই। ডিফেন্সের খোলস ছাড়িয়ে নতুন ইতালি আক্রমণাত্মক।আর টুর্নামেন্টের শুরু থেকে সাড়া জাগাচ্ছে। অন্যদিকে স্পেন হোঁচট খেতে খেতে পৌঁছায় নকআউটে। আর নকআউট পর্ব থেকেই দেখা মেলে অন্য মেজাজের স্পেনকে। এদিনের ম্যাচেও স্প্যানিশ আর্মাডার সেই ঝলক ছিল বর্তমান।
চলতি ইউরোতে মানচিনির স্ট্র্যাটেজি, ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণে ঝড় তোলো। প্রথম আধঘন্টায় যদি ১ বা দুটি গোল হয়ে যায়, তবে জবাব নেই। প্রতিপক্ষকে বাকি ম্যাচে চাপে রেখে মাঝেমধ্যে কাউন্টার অ্যাটাকে গোলের ব্যবধান বাড়ানো।আর স্পেনের শক্তি সেই তিকিতাকা ফুটবল। আর সেই ছকেই মানচিনির চেনা ছককে বোতলবন্দি করলেন লুইস এনরিকে। ইতালির আক্রমণের সাপ্লাই লাইনটাই স্পেন কেটে দিল মাঝমাঠ থেকে। নিজেদের মধ্যে অজস্র পাস খেলে ইতালির গতিকে ক্রমশ ধীর করে দিতে থাকেন বুসখেটসরা। তাতেই চাপরে পড়ে যান ইমমোবিলেরা।ইতালি বল ধরার কার্যত সুযোগই পায়নি প্রথমার্ধে। ম্যাচের রাশ নিজেদের হাতে শক্ত করে রাখলেও গোলের মুখ দেখেনি স্পেন। একটা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যাবে স্পেন কোনপর্যায়ে দাপট দেখাচ্ছিল ম্যাচে। ম্যাচে স্পেনের বল পজেশন ছিল ৭০%। সেখানে ইতালির মাত্র ২৯%।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে ম্যাচে কিছুটা কামব্যাক করল ইতালি। স্পেনের পাসিং ফুটবল ভাঙতে মানচিনির স্ট্র্যাটেজি লং বল আর নিজেদের মধ্যে ব্যাকপাস-স্কোয়ার পাস খেলে একটা ফলো থ্রু। যা আচমকা ভেঙে দিতে পারে প্রতিপক্ষের ডিফেন্সকে। যার ফল পেলেন ম্যাচের ৬০ মিনিটে। ইম মোবিলের পাশ থেকে জোরালো শটে গোল করে ইতালিকে এগিয়ে দেন চিয়েসা। এদিন ইমমোবিলের পাস থেকে গোল এলেও, গোটা ম্যাচেই ইতালীয় এই স্ট্রাইকার ছিলেন বড্ড নিষ্প্রভ। তাকে তুলে নিয়ে বেরার্ডিকে নামাতে বাধ্য হন মানচিনি।
ইতালির অবশ্য় সুখের সময় বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না। ফের শক্তিশালী তিকিতাকা দিয়েই ম্য়াচে ফেরার চেষ্টা শুরু স্পেনের। আর গোলমুখ খুলতে ফেরান টরেসকে বসিয়ে নামানো হয় মোরাতাকে। এনরিকের স্ট্র্যাটেজি কাজে লাগল ম্যাচের ৮০ মিনিটে। লাপোর্তের থেকে পাস পেয়ে ওলমোর সঙ্গে একবার ওয়ান-টু-ওয়ান খেলেই ইতালির জালে বল জড়ালেন পরিবর্ত হিসেবে নামা মোরাতা। ফের ঘুরতে শুরু করল ম্যাচের চাকা। নির্ধারিত সময়ের বাকি ১০ মিনিট খুঁজে পাওয়া যায়নি ইতালির মাঝমাঠ থেকে আক্রমণ। বোনুচ্চি-চিয়েল্লিনিরা কোনওমতে সামলেছেন স্প্যানিশ আর্মাডার অ্যাটাক। নির্ধারিত সময়ে খেলার ফল হয় ১-১। ইনজুরি টাইমেও সুযোগ তৈরি হলেও গোল এলনা । ম্যাচের ভবিষ্যত এবার টাইব্রেকারের হাতে। আর সেখানেই গোটা ম্যাচে নজরকাড়া ফুটবল খেলা স্পেনের ভাগ্যে জুটলনা ফুটবল দেবতার আশীর্বাদ।
টাইব্রেকারে প্রথম শটে দু দলই গোল পায়নি। তারপর সব স্বপ্ন শেষ হয়ে গেল মোরাতার পেনাল্টিতে। ইতালি গোলকিপার ডোনারাম্মা মোরাতার শট সেভ করেতই আশার আলো দেখতে শুরু করে আজুরিবাহিনী। পঞ্চম শটটা জালে ঢোকালেই ফের ২০১২ সালের পর ফাইনালে যাবে ইতালি।জর্জিনহোর পেনাল্টি ডাল ছুঁতেই ওয়েম্বলি মুহুর্তে যেন নীল রংয়ে মুড়ে গেল। এই নিয়ে তৃতীয়বার ইউরো কাপের ফাইনালে উঠল ইতালি। আর গোট ম্যাচে সেরা লড়াই করেও ইউরোকে বিদায় জানাতে হল স্পেনকে।