বাগানের ভরা কোটালে কৃষ্ণার সঙ্গী প্রীতম

সবুজ-মেরুন জার্সিতে অনেক সেরা ম্যাচ উপহার দিয়েছেন প্রীতম কোটাল। সেই সেরা ম্যাচগুলোর তালিকায় ঢুকে পড়েছে আজকের বড় ম্যাচও।

বাগানের ভরা কোটালে কৃষ্ণার সঙ্গী প্রীতম
Follow Us:
| Updated on: Feb 19, 2021 | 10:55 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

শুক্রবারের মেগা ডার্বির ক্যাচলাইন ছিল ‘ব্রাইট বনাম কৃষ্ণা’। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ব্রাইটকে সামলাবেন কে? তিরি, না সন্দেশ? এই প্রশ্ন ঘোরাফেরা করছিল সবুজ-মেরুনের অন্দরে। নাইজেরিয়ান ব্রাইটকে নিষ্প্রভ করে দিলেন উত্তরপাড়ার বঙ্গতনয় প্রীতম কোটাল। অল্প সময়ে লাল-হলুদ জার্সিতে ঝলমলিয়ে ওঠা ব্রাইটকে বোতলবন্দি করার কাজটা সামলালেন দক্ষতার সঙ্গে। বড় ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়েই বাজিমাত প্রীতমের। অতীতে সবুজ-মেরুন জার্সিতে অনেক বড় ম্যাচ খেলেছেন। এ বার আইএসএলের ডার্বিতেও এটিকে মোহনবাগানের রক্ষণের ত্রাতা হয়ে উঠলেন প্রীতম কোটাল। লাল-হলুদের আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুই ছিলেন ব্রাইট। এসসি ইস্টবেঙ্গলের ফুটবলাররা বল ধরলেই ব্রাইটকে উদ্দেশ্য করে পাস বাড়াচ্ছিলেন। আর সেখানেই ব্রাইটের খেলাটা বন্ধ করে দিলেন প্রীতম কোটাল। পাল্লা দিয়ে লড়লেন। যে ব্রাইট এফসি গোয়া ম্যাচে একের পর এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোল করেছিলেন, সেই ব্রাইটই আটকে গেলেন বঙ্গতনয় প্রীতমের কাছে। গতিতে যখন এটিকে মোহনবাগানের অন্যান্য ডিফেন্ডারদের টেক্কা দিচ্ছেন ব্রাইট, তখন নাছোড়বান্দা প্রীতম কোটালের কাছে বোতলবন্দি হয়ে গেলেন নাইজেরিয়ান তারকা।

খেলা শেষে প্রীতম কোটাল টিভি নাইনকে বলেন, ‘ব্রাইট আর এখানে ভালো ডিফেন্ডারদের বিরুদ্ধে খেলল কোথায়। আমি আমার কাজ করেছি। ওকে আটকানোর দায়িত্ব ছিল, সেটা পালন করেছি। ব্রাইটকে আটকানোর জন্য ওর খেলার ফুটেজ দেখিয়েছিল হাবাস। ওর যা যা প্লাস পয়েন্ট আর মাইনাস পয়েন্ট ছিল, সেটা ভিডিও ক্লাসে দেখেছি। ব্রাইট কোন দিকে মুভ করে, কিভাবে বল ধরে পুরো জিনিসটাই ভিডিও ক্লাসে লক্ষ্য করেছিলাম। সেই মতোই আমার খেলাটাকে মাঠে কার্যকর করার চেষ্টা করেছি। পরীক্ষার আগে যেমন সবাই পড়াশোনা করে, তেমনই মন দিয়ে ভিডিও ক্লাসে ব্রাইটের খেলা ফলো করেছিলাম।’

এরই সঙ্গে প্রীতম কোটাল যোগ করেন, ‘এই ডার্বিটা আমার কাছে অন্যতম সেরা। প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত আমরা প্রাধান্য নিয়ে খেললাম। ওরা একটা ওপেন চান্স পায়নি। শিলিগুড়ি ডার্বির পর আবার কোনও ডার্বিতে এ ভাবে প্রাধান্য নিয়ে খেললাম। সে বার সোনি নর্ডি আর আজহারের গোলে জিতেছিলাম। আমাদের এখন লক্ষ্য এক নম্বরে শেষ করা। তারপর আইএসএলের সেমিফাইনাল আর ফাইনাল নিয়ে ভাবব।’

উত্তরপাড়ার প্রীতমের উত্থান নেতাজি ব্রিগেড থেকে। তাঁর ছোটবেলার কোচ অনুপ নাগের কাছে ফুটবলে হাতেখড়ি প্রীতম কোটালের। ম্যাচের পর বেশ উচ্ছ্বসিতই শোনাল অনুপ নাগের গলা। টিভি নাইনকে বললেন, ‘অসাধারণ পারফরম্যান্স। আমি খুব খুশি প্রীতমের খেলায়। কোচ হাবাস ওকে একটা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব দিয়েছিল। ব্রাইটকে আটকানোর কাজে ও সফল। রোজই আমার সঙ্গে ওর কথা হয়। গতকালও ম্যাচের আগে কথা হয়েছিল। একটাই কথা শুধু ওকে বলেছিলাম। এটিকে মোহনবাগানের যা টিম তাতে কেউ সহজে রুখতে পারবে না। শুধু একটাই জিনিস, খেলায় মনঃসংযোগে যেন কোনও ব্যাঘাত না ঘটে। আজ এটিকে মোহনবাগানের খেলায় একফোঁটাও মনঃসংযোগে ঘাটতি দেখা যায়নি। নতুন করে আমি প্রীতমকে কোনও পরামর্শ দিইনি। ও যে ফুটবলটা খেলে সেটাই খেলতে বলেছিলাম।’

আরও পড়ুন:সিসিপাসকে হারিয়ে ফাইনালে জোকারের মুখে মেদভেদেভ

এর সঙ্গে অনুপ নাগ আরও বলেন, ‘২০১৪ সাল থেকে এই সার্কিটে ফুটবল খেলছে ও। সময়ের সঙ্গে অনেক পরিণত হয়েছে। জাতীয় দলের হয়েও সাফল্যের সঙ্গে পারফর্ম করছে। ফুটবলের প্রতি ওর দায়বদ্ধতাই আজ ওকে এখানে পৌঁছে দিয়েছে। প্রত্যেক ম্যাচের আগে ও হোমওয়ার্ক করে নেয়। আগের ম্যাচে কি পারফর্ম করেছে সেটা দেখেই পরের ম্যাচে খেলতে নামে। একজন সফল ফুটবলার হতে গেলে যে যে গুণ দরকার, তা সব কিছুই প্রীতমের মধ্যে রয়েছে। আমি চাই, ওরা শীর্ষে থেকে লিগ শেষ করুক। তাতে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন্স লিগ খেলতে পারবে এটিকে মোহনবাগান।’

সবুজ-মেরুন জার্সিতে অনেক সেরা ম্যাচ উপহার দিয়েছেন প্রীতম কোটাল। সেই সেরা ম্যাচগুলোর তালিকায় ঢুকে পড়েছে আজকের বড় ম্যাচও। ডার্বিতে ম্যাচের সেরা হলেন রয় কৃষ্ণা। তবে ব্রাইটকে রুখে দিয়ে উত্তরপাড়ার বঙ্গতনয় প্রীতম কোটালই ডার্বির অকথিত নায়ক।