বিরক্ত শ্রী সিমেন্ট শোনাচ্ছে লিমিটেড টাইম অফারের কথা

কোন জটিল আবর্তে দাঁড়িয়ে ইনভেস্টর? শ্রী সিমেন্টের এক কর্তার কথা যদি ধরি, তিনটে প্রশ্ন বেশ চাপে রেখেছে তাঁদের।

বিরক্ত শ্রী সিমেন্ট শোনাচ্ছে লিমিটেড টাইম অফারের কথা
এসসি ইস্টবেঙ্গল (সৌজন্যে-টুইটার)
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 04, 2021 | 9:59 PM

কৌস্তভ গঙ্গোপাধ্যায়

আইসিইউতে থাকা ইস্টবেঙ্গলকে (East Bengal) কতক্ষণ সময় দেবে শ্রী সিমেন্ট (Shree Cement)? চুক্তি জটে এটাই আপাতত বড় প্রশ্ন।

ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিটে কেন ইস্টবেঙ্গল? যদি আইএসএলে লাল-হলুদ রংয়ের উপস্থিতি রাখতে হয়, দুটো কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। এক, ৩১ আগস্ট ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষ দিন। তার মধ্যে টিম গোছাতে হবে। দুই, টিম গোছানোর আগে সই করতে হবে চুক্তিপত্রে। ঘটনা হল, প্রথম কাজ নিয়ে কেউই খুব বেশি মাথা ঘামানোর জায়গাতেই পৌঁছতে পারছেন না। কারণ, দ্বিতীয় কাজটাই যে আসল। মান-অভিমান, দড়ি টানাটানির পর চুক্তিতে সইসবুদ না হলে ইস্টবেঙ্গল এ বার আইএসএলে নেই।

যাঁরা অনলাইন সেল জিনিসপত্র কেনেন, তাঁরা খুব ভালো করে জানেন, ‘অফার’ মেলে সীমিত সময়ের জন্য। লাল-হলুদ কর্তাদের আচরণ এবং তাঁদের নানা বিষয় নিয়ে এখনও দড়ি টানাটানির প্রবণতা শ্রী সিমেন্ট কর্তাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে ফেলছে। যে একগুচ্ছ প্রস্তাব তাঁরা নতুন চুক্তিতে সংযোজন করেছেন, তা কিন্তু ‘লিমিটেড টাইম অফার’ হয়ে যেতে পারে। ধীরে চলো নীতি আরও বেশি চাপে ফেলছে ইস্টবেঙ্গলকে। কে বলতে পারে, বিরক্তি শ্রী সিমেন্ট শেষ পর্যন্ত হয়তো প্রস্তাব প্রত্যাহার করে নেবে না!

মুখ্যমন্ত্রীর চরম বার্তা, ‘খেলা হবে দিবস’ মঞ্চ থেকে সরাসরি নির্দেশ, ইনভেস্টর নিজেদের অবস্থান থেকে সরে এসে অনেক নমনীয় হওয়া সত্ত্বেও ইস্টবেঙ্গল এখনও বৈঠকি টেবলে বসে চুক্তি সই করেনি। এমন কি, খোঁজ নিয়ে জানা যাচ্ছে কর্তারা এখনও নানা শর্তাবলী নিয়ে দড়ি টানাটানি চালাচ্ছেন। যা ইনভেস্টরদের বিরক্তি ক্রমশ বাড়াচ্ছে। প্রাক্তন সচিব পার্থ সেনগুপ্তকে আসরে নামিয়ে জটিলতা কাটানোর যে ছক ছিল, তা অনেকটাই কার্যকর হলেও কেন শেষ কাজটুকু করতে এত গড়িমসি, তা নিয়েই আলোচনা ময়দানে। বলা হচ্ছিল, এই সপ্তাহেই নাকি চুক্তিতে সই করে টিম গঠনের জন্য ইনভেস্টরদের সবুজ সংকেত দিয়ে দেবেন লাল-হলুদ কর্তারা। পরিস্থিতি যে দিকে গড়াচ্ছে, তাতে এই সপ্তাহে চুক্তি বিতর্ক মেটার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

কোন জটিল আবর্তে দাঁড়িয়ে ইনভেস্টর? শ্রী সিমেন্টের এক কর্তার কথা যদি ধরি, তিনটে প্রশ্ন বেশ চাপে রেখেছে তাঁদের। প্রশ্ন এক, ৩১ আগস্টের মধ্যে কী আদৌ টিম তৈরি করা যাবে? উত্তর: চুক্তিতে সই না হলে কোনও অবস্থাতেই নয়। প্রশ্ন দুই, টালবাহানার পর যদি চলতি মাসের শেষ দিকে চুক্তি জটিলতা মেটে তা হলে কী হবে? উত্তর: ভালো টিম করা কোনও অবস্থাতেই সম্ভব নয়। মূলত তাকিয়ে থাকতে হবে ফ্রি ফুটবলারদের দিকে। কারণ, ভারতীয় ফুটবলের তারকারা যে যাঁর মতো নিজেদের মতো ঠিকানা খুঁজে নিয়েছেন। প্রশ্ন তিন, বিদেশি ফুটবলারের ক্ষেত্রে কী হবে? উত্তর: বিদেশি ফুটবলারদের সঙ্গে কথাবার্তা অনেকটাই সেরে ফেললেও চূড়ান্ত করতে পারছেন না কর্তারা। ফলে, ঠিকঠাক টিম গত মরসুমে যেমন বানাতে পারেননি, এ বারও সেই আশঙ্কায় ডুবে রয়েছেন ইনভেস্টররা। প্রশ্ন চার, এ বারও কী আইএসএলে ঘুরে ফিরে সেই ‘ডার্বি জিতি’ মনোভাবে চলে যেতে হবে? এক কর্তার উত্তর, ‘যে জায়গায় দাঁড়িয়ে রয়েছি আমরা, তাতে ভালো টিম কোনও অবস্থাতেই তৈরি করা সম্ভব নয়। অনেক আগে নেমেও অন্যান্য টিমগুলো টার্গেটে থাকা ফুটবলারদের তুলতে পারে না।’

ইস্টবেঙ্গল কর্তাদের অনুরোধে আসরে নামলেও পার্থ নিজেও কম বিরক্ত নন। মুখ্যমন্ত্রীর ‘৫ বছরের চুক্তি’ যুক্তিতে সায় দিয়ে কর্তারা পার্থকে বলেছেন, ইনভেস্টরদের সঙ্গে এ নিয়ে আবার কথা বলতে। যে প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে পার্থ বলেছেন, তিনি আর এই দড়ি টানাটানিতে নেই। পার্থর সোজা জবাব, ‘ওরা এই প্রস্তাব দিয়েছিল। শোনা মাত্র খারিজ করে দিয়েছি।’

সেই কবে ‘বেঙ্গল’-এর মানুষ শুনেছিল, ‘যত পথ তত মত’। বহুদিন পর ইস্টবেঙ্গল শোনাল, চুক্তি একটাই, যুক্তি অনেক!