Arshad Nadeem: ‘অচেনা’ আর্শাদই এখন পাকিস্তানের নায়ক! অতীত শুধু মনে রেখেছেন সোনার ছেলে
দুই ছেলে-মেয়ের বাবা আর্শাদকে কতটা ছুঁয়ে যাচ্ছে উৎসব? নীরজকে হারিয়ে সোনা জেতার পর দেশ থেকে শুধু আসছে ফোন। খুব বেশি কথা বলতে ভালোবাসেন না। তাই ফোন অনেক সময় বেজে যাচ্ছে। যে ছেলে অবহেলায়, বঞ্চনায় বেড়ে উঠেছে, যে ছেলের লড়াইয়ের গল্পই জানে দেশ, সে ছেলে নীরবতা জ্যাভলিনের মতোই ধারালো!
অভিষেক সেনগুপ্ত
ক’দিন আগেও কি ২৭ বছরের ছেলেটাকে চিনত পৃথিবী? এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার আগে ওয়াঘার ওপারে যাওয়া দরকার নয় কি? যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের খরচ কত? প্রতিবেশি দেশে নজরদারি, অনুপ্রবেশ, জঙ্গিলালনের জন্য? যে দেশের মুদ্রাস্ফীতি ছুঁয়েছে আকাশ, সরকার চলে সেনা-আইএসআই নির্দেশে, ঢল বাড়ছে না-খেতে পাওয়া মানুষের, সে দেশ শিক্ষার জন্য কি ভাবে? না। অনাহারে কাটানো শৈশব, দিগভ্রষ্ট যৌবন আর আক্ষেপে ভরা প্রৌঢ়ত্ব যে দেশের ললাটলিখন, সেই পাকিস্তান আগেই চিনে নেবে নায়ক, হয় নাকি! যে দেশের আকাশে ছেয়ে রয়েছে ষড়যন্ত্রের কালোমেঘ, নজরবন্দিতে কাটে বুদ্ধিজীবীদের, বিনোদন বলতে স্রেফ ক্রিকেট, সে দেশের এক গ্রাম্য যুবক কিনা অলিম্পিকের পোডিয়ামে উঠবে!
অভাবেই জন্ম নেয় প্রতিভা। অপুষ্টিতেই বেড়ে ওঠে তারকা। লাঞ্ছনা আর আক্ষেপ রোজ আঁকড়ে ধরে নায়কের পা। শুধু একমুঠো স্বপ্ন তাকে জাগিয়ে রাখে রাতের পর রাত। শুধু এক এক আলোকোজ্জ্বল মঞ্চের মোহে তার ছুটে চলা। এই দৌড়ের খবর কে রাখে? পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতারা, সরকার, ক্রীড়মন্ত্রক চিনত আর্শাদ নাদিম নামের এক জ্যাভলিন থ্রোয়ারকে, বললেও কি বিশ্বাস করবে পৃথিবী? বিশ্বাস করাতে হবে বলেই না প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ গদগদ টুইট করেছেন। প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারি ‘দেশের নায়ক’ বলেছেন।
৩২ বছর পর অলিম্পিক থেকে পদক পাকিস্তানের। ৩৬ বছর পর অলিম্পিক থেকে ব্যক্তিগত পদক। এ সব নিরস তথ্যে চাপা পড়ে যাচ্ছে প্যারিসের পাকিস্তানি যুবকের সোনার রাত। ৯২.৯৭ মিটারের আশ্চর্য অলিম্পিক রেকর্ড সমেত। পাক-পঞ্জাবের মিয়াঁ চান্নু গ্রামের ছেলে যখন জ্যাভলিন তুলে নিয়েছিল, তিনি ছাড়া আর কেই বা স্বপ্নের খোঁজ করেছিলেন। বাবা মহম্মদ আশরফ কথায়, ‘ওর বেড়ে ওঠার দিনগুলোর খবর কে জানত? অন্য শহরে গিয়ে ট্রেনিং-প্র্যাক্টিসের টাকা কোথা থেকে পেয়েছে, কেউ কি জানার চেষ্টা করেছে? আমাদের আত্মীয়স্বজন, গ্রামের কিছু শুভানুধ্যায়ীরা না থাকলে ও তো জ্যাভলিন থ্রোয়ারই হতে পারত না।’
শুধু কি ছেলেবেলার কথা? ৫ মাস আগেও আর্শাদ জানতেন না, প্যারিস অলিম্পিকে নামতে পারবেন। ট্রেনিংয়ের উপযোগী জ্যাভলিনই ছিল না তাঁর। ২০১৫ সাল থেকে যে জ্যাভলিনটা ব্যবহার করে আসছেন, সেটাই ছিল। তা দিয়ে অলিম্পিকে নামবেন? বন্ধু নীরজ চোপড়াকে জানিয়েছিলেন আর্শাদ। নীরজ এগিয়ে এসেছিলেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় আবেদন করেছিলেন, যেন পাকিস্তান তাঁর পাশে দাঁড়ায়। অনেক টানাপোড়েনের পর অবশেষে জুটেছিল ট্রেনিং করার উপযোগী জ্য়াভলিন। তা দিয়েই তো স্বপ্নপূরণ হল প্যারিসে।
৪০ বছর পর অলিম্পিক থেকে সোনা মিলল পাকিস্তানের। উৎসব তো হওয়ারই কথা। হচ্ছেও। যিনি চেনেন তিনি যেমন, যিনি চেনেন না তিনিও নেমে সেলিব্রেশনে। আর্শাদের মা ভেজা গলায় বলেছেন, ‘পাকিস্তানের যেমন, আমারও তো হিরো আর্শাদ। ওর ফেরার অপেক্ষায় আছি। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরতে চাই। আমার সোনার স্বপ্নপূরণ করেছে।’
দুই ছেলে-মেয়ের বাবা আর্শাদকে কতটা ছুঁয়ে যাচ্ছে উৎসব? নীরজকে হারিয়ে সোনা জেতার পর দেশ থেকে শুধু আসছে ফোন। খুব বেশি কথা বলতে ভালোবাসেন না। তাই ফোন অনেক সময় বেজে যাচ্ছে। যে ছেলে অবহেলায়, বঞ্চনায় বেড়ে উঠেছে, যে ছেলের লড়াইয়ের গল্পই জানে দেশ, সে ছেলে নীরবতা জ্যাভলিনের মতোই ধারালো!