AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

স্বপ্ন এ বার মুঠোয় ধরতে চান সুতীর্থা

কী ভাবে অলিম্পিকের (Olympics) টিকিট পেলেন সুতীর্থা (Sutirtha Mukherjee)? প্রাক্তন প্লেয়ার ও জাতীয় কোচ সৌম্যদীপ রায় এবং তাঁর স্ত্রী পৌলমী ঘটকই কঠিন রাস্তাটা সহজ করে দিয়েছিলেন বাঙালি টেবিল টেনিস (Table Tennis) প্লেয়ারের জন্য।

স্বপ্ন এ বার মুঠোয় ধরতে চান সুতীর্থা
স্বপ্ন এ বার মুঠোয় ধরতে চান সুতীর্থা
| Updated on: Mar 19, 2021 | 3:14 PM
Share

অভিষেক সেনগুপ্ত

নিখুঁত পরিকল্পনা। ফিটনেস। আর, ইউরোপে ট্রেনিং। আগামী তিন মাস এই হতে চলেছে সুতীর্থা মুখোপাধ্যায়ের নির্ঘণ্ট। কেন? বাঙালি টেবিল টেনিস প্লেয়ার দোহা থেকে ফোনে TV9 বাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাত্‍কারে বলে দিলেন, ‘এমন কিছু করতে চাই, যেন চিরকাল মনে রাখতে পারি ওই সময়টাকে। সেই কারণেই এই তিনটে মাস আমার কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।’

গত রাতেও জানতেন না, শুক্রবার সকাল থেকে আগামী তিন মাসের ভাবনায় বসতে হবে সুতীর্থাকে। এশিয়ান কোয়ালিফিকেশনে মণিকা বাত্রাকে হারানোর পরই টোকিও অলিম্পিকের টিকিট পেয়ে গিয়েছেন সুতীর্থা। এত দিন বাংলা থেকে টোকিওর কনফার্ম টিকিট পেয়েছিলেন শুধু আর্চার অতনু দাস। এ বার তাঁর সঙ্গে জুড়ে গেল সুতীর্থার নামও। তবে, বাংলাই তাঁর ঘরবাড়ি, পরিচয় হলেও আদতে সুতীর্থা হরিয়ানার প্লেয়ার।

Sutirtha Mukherjee qualify for Tokyo Olympics

স্বপ্ন এ বার মুঠোয় ধরতে চান সুতীর্থা

শুক্রবার দুপুরে ফোনে সুতীর্থা বলছিলেন, ‘অনেক ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে এই জায়গায় এসে পৌঁছেছি। ছেলেবেলা থেকে আর সবার মতো আমিও স্বপ্ন দেখতাম, একদিন অলিম্পিকে নামব। সেটা পূরণ হয়েছে। কিন্তু এখানেই থেমে যেতে চাই না। এমন কিছু করতে হবে, যাতে লোকে মনে রাখে আমাকে।’

যে সুতীর্থার গলা থেকে ঝরে পড়ছিল আত্মবিশ্বাস, সেই তিনিই কয়েক বছর আগে বয়স বিতর্কে সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছিলেন। সেখান থেকে কী ভাবে অলিম্পিকের টিকিট পেলেন সুতীর্থা? প্রাক্তন প্লেয়ার ও জাতীয় কোচ সৌম্যদীপ রায় এবং তাঁর স্ত্রী পৌলমী ঘটকই কঠিন রাস্তাটা সহজ করে দিয়েছিলেন বাঙালি টেবিল টেনিস প্লেয়ারের জন্য। সুতীর্থা অতীতে ফিরে গিয়ে বললেন, ‘ভীষণ যন্ত্রণার ছিল দিনগুলো। কিন্তু ফোকাসটা হারায়নি। আর সেটা হয়েছিল সৌম্যদীপদা আর পৌলমীদির জন্য। ওরা সব সময় পাশে থেকেছে। আমাকে সাহজ জুগিয়েছে। সৌম্যদীপদা তখন একটা পরিকল্পনা তৈরি করেছিল। আমি তখন আন্তর্জাতিক ক্রমপর্যায়ে ৩০০-র পিছনে ছিলাম। সৌম্যদীপদা-পৌলমীদির জন্য ধীরে ধীরে ২০০ থেকে ১০০-র মধ্যে ঢুকে পড়েছি। এ বারও সামনে এগোতে হবে।’

আরও পড়ুন: মাঠে ফেরার অপেক্ষায় স্টিমাচের ছেলেরা

২০১৭ সালে বাংলার হয়ে সিনিয়র জাতীয় চ্যাম্পিয় হয়েছিলেন সুতীর্থা। গতবছর হরিয়ানার হয়ে ফের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন। দেশে মণিকা এক নম্বর প্লেয়ার হলে দুইয়ে আছেন সুতীর্থা। বিশ্ব টিটিতে বাঙালি মেয়ে পরিচিত তাঁর দুরন্ত ব্যাকহ্যান্ডের জন্য। নৈহাটির মাদ্রালের মেয়ের নৈহাটি ইস্ট অ্যাসোসিয়েশনে টিটিতে হাতেখড়ি, সেই ২০০৩ সালে। প্রথম দিন থেকে সুতীর্থকে দেখছেন কোচ চন্দন ভট্টাচার্য। তিনিও বলছিলেন, ‘ম্যাচের আগে সুতীর্থা ফোন করেছিল, বলছিল চাপ লাগছে। আমি জানতাম, ও যদি নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারে, তা হলে মণিকাকে হারাতে পারবে। বলেছিলেন, নিজের সাবলীল খেলাটা খেলিস। সেটাই খেলেছে।’

সুতীর্থার এখন আন্তর্জাতিক র‍্যাঙ্কিং ৯৫। ২৪ বছরের মেয়ে দোহা থেকে ফোনে বললেন, ‘ছ’বছর আগেও যখন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টগুলোতে খেলতাম, কোনও টার্গেট ছিল না। কিন্তু এখন জানি, কী ভাবে এগোতে হবে, কী করতে হবে? প্লেয়ার হিসেবে এই উত্তরণটা হয়েছে সৌম্যদীপদা-পৌলমীদির জন্য। ওদের মতো আমার বাবা-মাও প্রচুর আত্মত্যাগ করেছে আমার জন্য। অলিম্পিকে যোগ্যতা অর্জন করার কৃতিত্বটা ওদেরই উপহার দিয়েছি। ওরা না থাকলে কিছুই করতে পারতাম না।’

আরও পড়ুন: নতুন জার্সিতে আইপিএলে পন্থ-ধাওয়ানের দিল্লি

ভারতীয় টিমে মণিকার সঙ্গে দীর্ঘদিন খেলছেন সুতীর্থা। দু’জন খুব ভালো বন্ধুও। সেই মণিকার বিরুদ্ধে গতকাল ৭-১১, ১১-৭, ১১-৪, ৪-১১, ১১-৫ জিতে অলিম্পিকের টিকিট পেয়েছেন বাঙালি মেয়ে। আর বিশ্ব র‍্যাঙ্কিংয়ে ভালো জায়গায় থাকার জন্য টোকিও গেমসে যোগ্যতা অর্জন করেছেন মণিকাও। সুতীর্থা বলছেন, ‘কোয়ালিফাইং ম্যাচ ছিল বলে কিছুটা চাপ তো ছিলই। তবে নিজের উপর ভরসা রেখেছিলাম। তাতেই স্বপ্নপূরণ হয়েছে।’

ছেলেবেলার স্বপ্ন ছুঁয়ে দেখেছেন, এ বার সেই স্বপ্ন আরও মেলে ধরতে চান অ-বাঙালি সুতীর্থা।