Durga Puja 2021: ‘বিপদে কেউ ছিল না’, দুর্গাপুজোয় মাটি দিতে অস্বীকার যৌনকর্মীদের
Alipurduar: সংক্রমণের ভয়ে অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরগুলোতে রাতে আসেনি ‘লক্ষ্মী’, বলা ভাল ‘কাস্টমার’। স্তব্ধ জীবিকা। আলিপুরদুয়ারের যৌনপল্লি এখন শান্ত।
আলিপুরদুয়ার: কথায় বলে, ‘কারোর পৌষমাস তো কারোর সর্বনাশ’। আর ওঁদের জীবনে তো ‘সর্বনাশের’ বারোমাস্যা লেগেই রয়েছে। ওঁদের অর্থাত্ যৌনকর্মীরা। সমাজের সবেচেয়ে ‘ব্রাত্য’ যে অংশ তাঁদের বসতির মাটি না হলে নাকি অসম্পূর্ণ থাকে পুজো। কী অদ্ভুত সেই নিয়ম! যাঁদের এলাকার মাটি ছাড়া মায়ের পুজো হয় না তাঁরা ‘ব্রাত্য’ হন কী করে এই প্রশ্ন আসাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে প্রশ্নে গুরুত্ব দেয় কয়জন?
এ বার এই প্রশ্নটাই ভাবাচ্ছে। কারণ, খোদ যৌনকর্মীরাই অস্বীকার করেছেন মাটি দিতে। তাঁদের সাফ দাবি, তাঁদের বিপদে যখন কেউ পাশে ছিল না, গোটা সমাজ একদিকে আর তাঁরা যেন অন্যপ্রান্তের জীব, তখন কী করে সেই সমাজের পুজোতেই মাটি দেবেন তাঁরা! যৌনকর্মীরা জানিয়েছেন, করোনাকালে প্রায় ২ বছর যাবত্ লকডাউন। বন্ধ হয়ে যেতে বসেছে রোজগার। পুজোর সময়ে যেটুকু উপরি রোজগারের আশা থাকে তাও নেই। সবমিলিয়ে শিরে সংক্রান্তি!
সংক্রমণের ভয়ে অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে ঘরগুলোতে রাতে আসেনি ‘লক্ষ্মী’, বলা ভাল ‘কাস্টমার’। স্তব্ধ জীবিকা। আলিপুরদুয়ারের যৌনপল্লি এখন শান্ত। প্রায় শতাধিক যৌনকর্মীর ভিটে-মাটি এখানেই। কিন্তু দেখা নেই ‘খদ্দেরের’। এক যৌনকর্মী বলেন, “এর আগেও লকডাউন হয়েছিল। তখন সব বন্ধ ছিল। ধীরে ধীরে যা একটু শুরু হল ফের একই অবস্থা। গাড়ি চলছে না। তার উপর করোনার ভয়। কাস্টমার নেই। রোজগার পুরো বন্ধ। থানা থেকে কিছু সাহায্য করেছিল। কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাও এগিয়ে এসেছিল। কিন্তু তাতে পেট চলে কিছুদিন। বাকি দিনগুলোর কী হবে। আমাদের হাতে অন্য কাজের রাস্তাও বন্ধ।”
অন্য আরেক যৌনকর্মী বলেন, ” আমাদের খাওয়াদাওয়াও বন্ধ হয়ে গিয়েছে। আধবেলা খেয়ে থাকছি। জমানো যা টাকা পয়সা, তা শেষের দিকে। বাড়িতে বয়স্ক মা-বাবা রয়েছে। কারোর স্বামী-পরিবার রয়েছে। নিজেরাই খেতে পারছি না। ঘর কী সামলাব! অন্য কাজের চিন্তা করতে হচ্ছে। এই বিপদের দিনে কেউ পাশে এসে দাঁড়ায়নি। দু’মুঠো চাল এগিয়ে দেব। মাটি নেওয়ার বেলায় কেন এখানে ভিড়! কেন দেব আমরা পুজোর মাটি!”
ফলে, একরকম পুজো বন্ধ হয়ে যাওয়ার জোগাড় আলিপুরদুয়ারে। কারণ, যৌনপল্লির মাটি ছাড়া পুজোই হবে না। যৌনকর্মীদের এই তীব্র প্রতিবাদে অবশ্য কিছুটা হলেও ফল মিলেছে। জেলাশাসক ও মহকুমাশাসকের তরফে জানানো হয়েছে, সকল কর্মীদের জন্য খাবার ও রেশনের ব্যবস্থা করা হবে। পাশাপাশি তাঁরা যাতে অর্থাভাব কাটিয়ে উঠতে পারেন সেক্ষেত্রেও বিশেষ পদক্ষেপ করা হবে।
লকডাউনে শুধু, আলিপুরদুয়ারেই নয়, কলকাতার সোনাগাছি থেকে হাড়কাটা গলি কিংবা জলপাইগুড়ির বাজার এলাকার যৌনকর্মীরা, জীবিকায় টান সকলের। অস্তিত্ব রক্ষার লড়াই লড়ছেন তাঁরা। যৌনকর্মীদের সংস্থা দুর্বারের তরফে খবর, করোনাকালে, এই পেশায় হুহু করে বেড়েছিল মেয়ের সংখ্যা। সহজে আয়ের রাস্তা হিসেবে অনেকেই বেছে নেয় এই কাজ। কিন্তু, লাভ হয়নি। সোনাগাছির এক যৌনকর্মীর কথায়, “মেয়ে বেশি হয়ে গিয়েছে, কাস্টমার কম।”ফলে, অন্য পেশাতেই পা বাড়াচ্ছেন অনেকে। আবার, সামাজিক কারণেই সমাজের মূল স্রোতে মিশতে গিয়েও বাধা পেয়ে ফিরে এসেছেন চার ফুট বাই ছয় ফুটের ঘরে, অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে গলিতে।
যৌনকর্মীদের সংস্থা দুর্বারের সদস্য কাজল বোস বলেন, “করোনাকালে অন্য কোনও পেশা চালু নেই। এই পরিস্থিতে, দুর্বারের তরফে আমরা চেষ্টা করছি সর্বত্র পৌঁছে যাওয়ার। সবার আগে মেয়েদের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচানো। সরকারের সঙ্গেও আলোচনা করছি, কীভাবে অর্থসাহায্যের ব্যবস্থা করা যায়। আমরা চেষ্টায় আছি। এর বেশি তো কোনও উপায় নেই।” সোনালী দিন আবার ফিরছে স্বপ্ন দেখছে পঁয়ষট্টি হাজার চোখ।
আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরে কাজ জোটেনি, অবসাদে আত্মঘাতী কেরল ফেরত পরিযায়ী শ্রমিক