AQI
Sign In

By signing in or creating an account, you agree with Associated Broadcasting Company's Terms & Conditions and Privacy Policy.

Cycling In Himalaya: সাইকেল চালিয়ে দিঘা থেকে সোজা এভারেস্ট! বাঙালির মাউন্টেন ম্যানকে চেনেন?

একবার ভাবুন তো, এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, কোথাও এতটাই চড়াই যা দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুষ্কর। কোথাও রাস্তার মাঝে বয়ে গিয়েছে নদী। সেই রাস্তা দিয়ে কখনও সাইকেল চালিয়ে আবার কখনও তা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন আপনি।

Cycling In Himalaya: সাইকেল চালিয়ে দিঘা থেকে সোজা এভারেস্ট! বাঙালির মাউন্টেন ম্যানকে চেনেন?
| Updated on: Apr 02, 2025 | 2:08 PM
Share

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫,৩৬৪ মিটার বা ১৭,৫৯৮ ফুট উচ্চতায় তুষারবৃত বিশ্বের উচ্চতম বেস ক্যাম্প। আরও ভালভাবে বললে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প। এখান থেকেই শুরু হয় ‘এভারেস্ট ক্লাইম্বিং’। সাধারণ মানুষ এই বেস ক্যাম্পে পৌঁছোনোর সাহস দেখান না খুব একটা। যেখানে হেঁটে যেতে গেলেও হাঁপ ছাড়তে হয়। রীতিমত শারীরিক ভাবে ফিট না হলে এই জায়গায় পৌঁছনো যায়না। আর তার থেকেও শক্ত কাজ ওই রাস্তায় সাইকেল চালানো।

একবার ভাবুন তো, এবড়ো খেবড়ো রাস্তা, কোথাও এতটাই চড়াই যা দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুষ্কর। কোথাও রাস্তার মাঝে বয়ে গিয়েছে নদী। সেই রাস্তা দিয়ে কখনও সাইকেল চালিয়ে আবার কখনও তা কাঁধে নিয়ে এগিয়ে চলেছেন আপনি। তার সঙ্গে রয়েছে জামাকাপড় সহ আপনার প্রয়োজনীয় জিনিসের বোঝা। এই অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন বাংলার ছেলে জ্যোতিষ্ক বিশ্বাস।

নদিয়ার ছেলে জ্যোতিষ্কর বড় হয়ে ওঠা পাহাড়ের কোলে। তাই স্নিগ্ধ শীতল পরিবেশ সব সময় টানে তাঁকে। পড়াশোনার জন্য কলকাতায় চলে এলেও পাহাড়কে ভুলতে পারেননি। সুযোগ পেলেই বেড়িয়ে পড়তেন অ্যাডভেঞ্চারে। এখন নেশাকেই পেশা করে এগিয়ে চলেছেন তিনি। সম্প্রতি কেবল সাইকেলে চড়েই শেষ করেছেন তাঁর সমুদ্র থেকে এভারেস্ট বেস ক্যাম্প অবধি যাত্রা।

বঙ্গোপসাগরের তীরে বাঙালির অতি প্রিয় দিঘা থেকে যাত্রা শুরু করেন গত ৯ ফেব্রুয়ারি। কলকাতা মালদহ, শিলিগুড়ি, থেকে নেপাল হয়ে পৌঁছে যান এভারেস্ট বেস ক্যাম্পে। তাও শুধুমাত্র সাইকেল চালিয়ে। কখনও প্রয়োজনে সেই সাইকেল ঘাড়ে তুলে নিয়েও এগিয়ে গিয়েছেন নিজের গন্তব্যে।

সুরকে অবধি চালান সাইকেল। তারপর শেষ ৬০ কিলোমিটারের মধ্যে সাইকেল চালাতে পেরেছিলেন ৪০ কিলোমিটার। চড়াই উতরাই রাস্তায় ২০ কিলোমিটার রাস্তা যেতে হয়েছে পায়ে হেঁটে, নিজের বাহনকে কাঁধে চাপিয়েই।

জ্যোতিষ্ক জানান, হঠাৎ করে সাইকেল নিয়ে বেড়িয়ে পড়া যায় না। এর জন্য প্রয়োজন বহুদিনের প্রস্তুতি। তিনি বলেন, “আমি ৭ বছর ধরে এই অ্যাডভেঞ্চারের প্ল্যান করছিলাম। সাইকেল নিয়ে যাওয়ার জন্য সাইকেল সম্পর্কে জ্ঞান থাকাটাও জরুরি। ইচ্ছা হলেই বেড়িয়ে পড়া যায় না।”

১০ মার্চ নিজের গন্তব্যে পৌঁছোন জ্যোতিষ্ক। মাত্র ২৯ দিনে নিজের এই যাত্রা শেষ করেন তিনি। জ্যোতিষ্ক জানান, এই যাত্রাপথেই প্রায় ৫০০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত লোবুচে। সেখানে গেলে অনেক সময় শরীর সঙ্গ দেয় না বড় বড় শেরপাদেরও। পাহাড়ে একদিনে ৫০০ মিটারের বেশি চড়া উচিত নয়। কিন্ত সেখানে প্রায় ১৪০০ মিটার যাত্রা করে ‘অল্টিটিউড সিকনেস’-এর কবলে পড়েন তিনি। বাধ্য হয়ে রাতে খানিকটা নেমেও আসেন নীচের দিকে। তবে এতেও দমে থাকেননি জ্যোতিষ্ক। ফের পরের দিন নিজের যাত্রা শুরু করেন জ্যোতিষ্ক। প্রত্যয়ের সঙ্গে জ্যোতিষ্ক বলেন, “আমি কোনও কিছুকেই সমস্যা বলে মনে করি না। ওগুলো আমার কাছে এক একটা অভিজ্ঞতা।”

জ্যোতিষ্ক জানান কলকাতায় যেমন কমে এসেছে শীতের স্থায়িত্ত, তেমনই উত্তরে বেড়েছে ঠান্ডার দাপট। হিমবাহের মধ্যে দিয়ে সাইকেল চালানো খুব একটা সহজ কাজ ছিল না। কখনও চালিয়ে, কখনও ঠেলে, কখনও কাধে করে নিয়ে যেতে হয়েছিল। এভারেস্ট বেস্ট ক্যাম্প এলাকায় দিনের বেলা তাপমাত্রা থাকত মাইনাস ৪-৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জ্যোতিষ্ক জানান, যাত্রা পথেই পড়ে গোরখশেপ। লোবুচে থেকে গোরখশেপ হয়ে যেতে হয় এভারেস্ট বেস ক্যাম্প। সেই গোরখশেপ এলাকায় রাতের তাপমাত্রা নেমে যেত প্রায় মাইনাস ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। তার সঙ্গে রয়েছে সূর্যের ইউভি রশ্মির দাপট। যার কারণে ডিহাইড্রেশন হওয়ার সম্ভাবনা আরও বেড়ে যায়।

জ্যোতিষ্ক জানান, অরুণাচল প্রদেশ এবং উত্তরবঙ্গের মাথাভাঙ্গায় বেড়ে উঠেছেন তিনি। তিনি বলেন, “তাই কলকাতায় আসার পর থেকেই মিস করতাম পাহাড়কে।”

তবে কেবল পাহাড় নয়, জ্যোতিষ্কের প্রেম নানা ধরনের অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস। এর মধ্যে আছে ট্রেল রানিং, সাইকেলিং, ম্যারাথন, মাউন্টেনিয়ারিং।”

জ্যোতিষ্কের থলিতে রয়েছে আরও অনেক অভিজ্ঞতা। কর্ণাটকের চিকমাগালুর, এখানকার কফির স্বাদ আর পাহাড়ের সৌন্দর্য্য দুটির কোনও তুলনা হয় না। সেখানেই ৪০০০ মিটার উচ্চতার ১০০ কিলোমিটারের ‘ট্রেল রান’ মাত্র ১৪ ঘন্টা ৩০ মিনিটে শেষ করেছেন তিনি। এর আগে ২০২৩ সালেও রয়েছে মাউন্ট এভারেস্টের বেস ক্যাম্পে পৌঁছোনোর অভিজ্ঞতা। কাজ করেছেন মাউন্টেনিয়ার হিসাবেও। সাইকেল নিয়ে এভারেস্ট যাওয়ার আগে, সাইকেল নিয়ে ৪৮ দিনে ২০২০ সালে সেরে ফেলেছেন কাশ্মীর-কন্যাকুমারী যাত্রাও।

প্রদক্ষিণ করেছেন গোটা হিমালয় পর্বতমালাকেও। ৬ মাস সময়ে পশ্চিম থেকে পূর্বে প্রদক্ষিণ করেন গোটা হিমালয় পর্বতমালাকে। ট্রান্স হিমালয়ের এই যাত্রায় ৭০০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করেন তিনি।

অ্যাডভেঞ্চার ভালবেসে, পৃথিবীকে চিনতে চায় জ্যোতিষ্ক। তাই যখন তাঁকে প্রশ্ন করা হয় কেন এই ভাবনা মাথায় এল? মুচকি হেসে জ্যোতিষ্ক কেবল বলেন “কেন নয়?”

এরপরেই একজন সত্যিকারের পাহাড়প্রেমীর মতোই তিনি বলেন, “পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন ড্রাগ হচ্ছে পাহাড়। একবার কেউ নিতে শুরু করলে তাঁর জীবনে পাহাড় ছাড়া আর কিছু থাকে না।”