আচমকা বুকে ব্যথায় কাবু বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’, পুলিশি হেফাজতেই ভর্তি হাসপাতালে

Shyamaprasad Mukherjee: বুকে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শ্যামবাবু। পূর্বেই তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও মুধমেহ রোগে ভুগছিলেন।

আচমকা বুকে ব্যথায় কাবু বিষ্ণুপুরের 'কত্তাবাবু', পুলিশি হেফাজতেই ভর্তি হাসপাতালে
কোটি টাকার মালিক প্রাক্তম মন্ত্রী! নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 29, 2021 | 12:32 AM

বাঁকুড়া: আচমকা বুকে ব্যথা নিয়ে হাসরপাতালে ভর্তি হলেন বিষ্ণুপুরের ‘কত্তাবাবু’ ওরফে বিষ্ণুপুর টেন্ডার দুর্নীতির প্রধান অভিযুক্ত প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় (Shyamaprasad Mukherjee)। শনিবার, আচমকা তাঁর বুকে ব্যথা হওয়ায় বিষ্ণুপুর সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আনা হয়। সেখানেই মেল মেডিসিন ওয়ার্ডে আপাতত চিকিৎসাধীন তিনি।

হাসপাতাল সূত্রে খবর, প্রৌঢ় প্রাক্তন মন্ত্রী বুকে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। তাঁর হার্টের অবস্থা বিশেষ ভাল নয় বলেই জানিয়েছেন চিকিত্‍সকেরা। এদিন, তাঁর জরুরি ডাক্তারি পরীক্ষা করা হয়। শ্যামাপ্রসাদের (Shyamaprasad Mukherjee) চিকিত্‍সার দায়িত্বে থাকা হাসপাতাল সুপার চিকিত্‍সক মহেন্দ্র নাথ মাণ্ডি বলেন, “বুকে ব্যথার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন শ্যামবাবু। পূর্বেই তিনি উচ্চ রক্তচাপ ও মুধমেহ রোগে ভুগছিলেন। মাত্রাতিরিক্ত মানসিক চাপের জন্যই মূলত অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।” চিকিত্‍সকেরা জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রীর দেখভালে কোনও খামতি নেই। সর্বক্ষণ তাঁকে চিকিত্‍সকদের নজরে রাখা হচ্ছে। যদিও, তদন্তকারীদের একাংশ মনে করছেন, প্রাক্তন মন্ত্রীর এটি কোনও কৌশল হলে তদন্তের গতি রুদ্ধ হতে পারে। তাই পুলিশি হেফাজতেই থেকে চলছে চিকিত্‍সা।

গত ৩৪ বছর ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভায় চেয়ারম্যান ছিলেন প্রাক্তন তৃণমূল নেতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ( Shyamaprasad Mukherjee)। সেসময় একাধিক প্রকল্পের টেন্ডার হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রকল্পগুলিতে কোনও কাজই হয়নি। মহকুমা শাসকের তরফে তদন্ত শুরু হয়। পরে রিপোর্ট জমা দেয় চিফ ভিজিল্যান্স অফিসার। তদন্তে দুর্নীতির একাধিক তথ্য উঠে এসেছে।

ইতিমধ্যেই,  তদন্তে নেমে শ্যামাপ্রসাদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে মোট ৬টি অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ করেছে পুলিশ। পাশাপাশি শ্যামাপ্রসাদের নামে একাধিক জমির হদিশও পেয়েছেন তদন্তকারীরা। একাধিক পেট্রোল পাম্পের মালিক হিসাবেও উঠে এসেছে প্রাক্তন মন্ত্রীর নাম। শ্যামাপ্রসাদকে আজ আদালতে পেশ করা হয়েছে। শেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, ১০ দিনের হেফাজত চেয়েছে পুলিশ।

তদন্তকারীরা বলছেন, এই মামলার জট অত্যন্ত গভীরে। জেলা পুলিশ সুপার ধৃতিমান সরকার বলেন, শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ও তাঁর পরিবারের অ্যাকাউন্টের নথি খতিয়ে দেখে দেখা গিয়েছে, অনেক অসঙ্গতি রয়েছে। আর্থিক লেনদেনের হিসাব পাওয়া যায়নি। এছা়ডা অনেক জমি ও পেট্রোল পাম্পেরও মালিকানার হদিশ মিলেছে। সব কিছু খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে তাঁর আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়াও বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে  তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন শ্য়ামাপ্রসাদ।

একুশের নির্বাচন আবহে শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। বিজেপি-র অন্দরেও দলের একাংশের বিরোধিতার মুখে পড়ে প্রায় এককোণে হয়ে পড়েন প্রাক্তন মন্ত্রী। তাঁর তৃণমূলে ফেরার চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। গত রবিবারই টেণ্ডার দুর্নীতি কাণ্ডে রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী ও বিষ্ণুপুর পৌরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করে পুলিশ। আরও পড়ুন: ‘দাড়ি কাটব না টুপি খুলব?’, সিপিএমের ‘স্বীকারোক্তি’-তে প্রশ্ন আইএসএফের