মেয়ের নামে ১২ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছিল পেট্রোলপাম্প! ‘কত্তাবাবুর’ সম্পত্তির সরেজমিনে গোয়েন্দারা

Bishnupur Tender Case: শহর ও শহর সংলগ্ন মরার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় খড়িকাশুলিতে প্রায় ৪ বিঘার জমির ওপর নির্মীয়মান পেট্রোল-পাম্পে যান তদন্তকারী অফিসাররা। মরার গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও খড়িকাশুলিতে প্রায় ১২ বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে

মেয়ের নামে ১২ বিঘা জমিতে তৈরি হচ্ছিল পেট্রোলপাম্প! 'কত্তাবাবুর' সম্পত্তির সরেজমিনে গোয়েন্দারা
প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 01, 2021 | 10:11 PM

বাঁকুড়া: বিষ্ণুপুরে ১০ কোটি টাকার টেণ্ডার দুর্নীতি-কাণ্ডে তদন্তে নেমে একের পর এক পর্দাফাঁস তদন্তকারীদের। প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের (Shyamaprasad Mukherjee) নামে এ বার একাধিক জমি ছাড়াও পেট্রোল-পাম্পের হদিশ পেল পুলিশ। বুধবার, শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রামশঙ্কর মহন্তকে নিয়ে সেই পেট্রোলপাম্পে হানা দিলেন গোয়েন্দারা।

তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্য়ায় বিপুল পরিমাণ টাকা জমি কেনার কাজে বিনিয়োগ করেছিলেন। বিষ্ণুপুর শহরে ও আশেপাশে বিভিন্ন জায়গায় তাঁর নামে-বেনামে প্রচুর জমির খোঁজ মিলেছে। এমনকী, নিজের ছেলেমেয়ের নামেও বেশ কিছু জমি কিনেছিলেন তিনি। তদন্তে নেমে সেগুলির অনেকগুলির দলিলও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। সেই সব দলিল মিলিয়ে জমি চিহ্নিতকরণের কাজ শুরু হয়েছে।

এদিন, শহর ও শহর সংলগ্ন মরার গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় খড়িকাশুলিতে প্রায় ৪ বিঘার জমির ওপর নির্মীয়মান পেট্রোল-পাম্পে যান তদন্তকারী অফিসাররা। মরার গ্রাম পঞ্চায়েত ছাড়াও খড়িকাশুলিতে প্রায় ১২ বিঘা জমির খোঁজ মিলেছে। পেট্রোলপাম্প তৈরির কাজে নিযুক্ত ঠিকাদার জানিয়েছেন, প্রাক্তন মন্ত্রী শ্য়ামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে রূপা মুখোপাধ্য়ায়ের নামে কেনা হয়েছে ওই জমি। প্রায় ৯ মাস যাবত্‍ চলছে পাম্প তৈরির কাজ। এছাড়াও, শহরের তুর্কিডাঙায় রয়েছে ৬ কাঠা জমি। জমি কেনার ক্ষেত্রে ঠিক কত পরিমাণ টাকা ব্যয় করা হয়েছে, আর কারা এর সঙ্গে যুক্ত ছিল তাও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

সম্প্রতি, ধৃত রামশঙ্কর মহন্তকে জেরা করার পরেই একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে লকারের সন্ধান পান তদন্তকারীরা। রামশঙ্কর মহন্তের নামে সেই লকার ভাড়া নেওয়া হলেও আসলে সবই ছিল শ্যামাপ্রসাদের (Shyamaprasad Mukherjee) সম্পত্তি। রামশঙ্কর কেবল জমা রাখতেন। এমনটাই জেরায় জানিয়েছেন প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠ। যা গয়না পাওয়া গিয়েছে তার বাজার মূল্য প্রায় লক্ষাধিক।

অন্যদিকে প্রাক্তন মন্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট গুলি রীতিমতো চর্চার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সূত্রের খবর, ঐ অ্যাকাউন্ট গুলিতে বিভিন্ন সময়ে ২০ লক্ষ টাকা থেকে ৭০ লক্ষ টাকা নগদে জমা করা হয়েছে। এমনকি বিধানসভা নির্বাচনের আগে ২০ লক্ষ টাকা জমা করার তথ্যও হাতে পেয়েছেন তদন্তকারীরা। এছাড়াও বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে শ্যাম মুখোপাধ্যায়ের ছেলে-মেয়ের অ্যাকাউন্টগুলিতে। তাঁদের অ্যাকাউন্টে প্রায় কোটি টাকার কাছাকাছি জমা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তদন্তকারীরা। তবে, টাকার পরিমাণ সঠিকভাবে কত সে বিষয়ই এখনও স্পষ্টত মুখ খোলেননি তদন্তকারীরা। প্রশ্ন উঠছে প্রাক্তন মন্ত্রীর এত জমানো টাকার উত্‍স কী? সূত্রের খবর, টেণ্ডার দুর্নীতির ঘটনায় আরও এক প্রাক্তন মন্ত্রী ঘনিষ্ঠকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করছেন তদন্তকারীরা।

ধৃত শ্যাম-ঘনিষ্ঠ রামশঙ্করের বাড়ি থেকে ১৯ লক্ষ টাকা-সহ চারটি জমির দলিল এবং স্থানীয় পোস্ট অফিসে শ্যামাপ্রসাদের নামে আটটি সেভিংস অ্যাকাউন্টের পাশবইও হাতে এসেছে তদন্তকারীদের। শ্যামাপ্রসাদের টাকা রামশঙ্করের মাধ্যমেই বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে টাকা জমা পড়ত। প্রাক্তন মন্ত্রীর জমি কেনাবেচা ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত সব কিছুই দেখতেন রামশঙ্কর অনুমান গোয়েন্দাদের। ইতিমধ্যেই প্রাক্তন মন্ত্রীর আরেক ঘনিষ্ঠ বিষ্ণপুর পুরসভার প্রাক্তন ওভারশেয়ার দিলীপ গড়াইকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। টেন্ডার দুর্নীতিতে  তাঁর সক্রিয় যোগ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।

প্রায় তিন দশক ধরে মল্লগড় বিষ্ণুপুরে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন ‘মুকুটহীন সম্রাট’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। স্থানীয়দের কাছে তিনি ‘কত্তাবাবু’ নামেই পরিচিত। গত তিন দশকের বেশি সময় ধরে বিষ্ণুপুর পুরসভা চলত তাঁরই অঙ্গুলিহেলনে। ২০০৯ সালে কংগ্রেস ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেন শ্য়ামাপ্রসাদ। ২০১১ সালে বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র থেকে জয়ী হয়ে রাজ্যের আবাসনমন্ত্রী হলে শ্যামাপ্রসাদের ক্ষমতা আরও বাড়ে। কিছুদিনের জন্য জেলাসভাপতির দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। ২০১৬ সাল থেকে রাজ্যের বস্ত্র ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রকের দায়িত্বও সামলেছেন তিনি। মন্ত্রী থাকতেই চিটফাণ্ড কেলেঙ্কারিতে শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে নোটিস দিয়েছিল ইডি। তারপরেই ধীরে ধীরে ‘নিজ গড়ে’ ক্ষমতা হারাতে শুরু করেন ‘কত্তাবাবু’। নির্বাচন দলবদলের মরসুমে তিনি শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। কিন্তু, সেখানেও বিশেষ সুবিধা করতে না পেরে ফের তৃণমূলেই ফিরে আসেন। তাঁর সেই চেষ্টাও কার্যত ব্যর্থ হয়। আরও পড়ুন: দরপত্রে বিরোধ, তৃণমূল নেতা মোস্তফা শেখ হত্যা-মামলায় পুণে থেকে গ্রেফতার ৩