অশান্ত আফগানিস্তান নিয়ে চিন্তায় মাথায় হাত বাঁকুড়া শিল্পীদের, পাগড়ি ব্যবসার কী হবে?
Sonamukhi Weavers: এক সময় এখানে খুব আনাগোনা ছিল কাবুলিওয়ালাদের। শহরের অলিগলি ঘুরে তাঁরা হিং বেচতেন। প্রাচীন শহর সোনামুখীর কৃষ্ণবাজার, লালবাজারের তাঁত শিল্পীদের হাতের কাজ দেখে মনে ধরে তাঁদের। অর্ডার দিতেন পাগড়ি বানানোর। সেই শুরু।
বাঁকুড়া: এক সময় এখানে খুব আনাগোনা ছিল কাবুলিওয়ালাদের। শহরের অলিগলি ঘুরে তাঁরা হিং বেচতেন। প্রাচীন শহর সোনামুখীর কৃষ্ণবাজার, লালবাজারের তাঁত শিল্পীদের হাতের কাজ দেখে মনে ধরে তাঁদের। অর্ডার দিতেন পাগড়ি বানানোর। সেই শুরু। তার পর থেকে সিল্কের শাড়ির সঙ্গে পাগড়িও তৈরি করে আসছেন এখানকার তাঁত শিল্পীরা। আর তার একটা বড় অংশ যেত আফগান দেশে। কিন্তু এবার কী হবে? আফগানিস্তানে তালিবানরা ক্ষমতায় আসার পর মাথায় হাত পড়েছে বাঁকুড়ার পাগড়ি ব্যবসায়ীদের।
করোনা, লকডাউন তো তো আছেই, তার ওপর বন্ধ হল আফগানিস্তানে রফতানি। আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে বাঁকুড়া জেলার সোনামুখী শহরের পাগড়ি তৈরির সঙ্গে যুক্ত বহু শিল্পীর। এখানকার বাসিন্দাদের একটা বড় অংশই পাগড়ি তৈরি করেন। সেই পাগড়িই এতদিন নির্বিঘ্নে রফতানি হত আফগানিস্তানে। বড় বাজার ছিল সেখানে। ডুয়ার্সের চা শিল্পের মতো চিন্তায় বাঁকুড়ার পাগড়ি শিল্পীরাও।
গত ৪০ বছর ধরে পাগড়ির ব্যবসাই করে আসছে বাঁকুড়ার সোনামুখী শহরের শিল্পীরা। সুরাটের একটি সংস্থার মাধ্যমে তাদের তৈরি পাগড়ি রফতানি হত সুদূর আফগানিস্তানে। কিন্তু আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে পাগড়ি রফতানি বন্ধ। ফলে বিপর্যস্ত সোনামুখী শহরের বাসিন্দা ১৫০ পাগড়ি শিল্পীর পরিবার।
ক্ষতিগ্রস্ত পাগড়ি শিল্পীরা বলেছেন, ‘করোনা পরিস্থিতি এবং লকডাউন পাগড়ির ব্যবসার ব্যাপক ক্ষতি করেছে। এরপর আফগানিস্তানে রাজনৈতিক পালাবদলের পর ব্যবসার অবস্থা এখন আরও শোচনীয়।’
কাবুল থেকে সোনামুখী শহরের দূরত্ব ৩ হাজার কিলোমিটার। কিন্তু কেমন ভাবে তৈরি হয়েছিল এদের ব্যবসার যোগসূত্র? জানা গিয়েছে, প্রায় চার দশক আগে কয়েকজন কাবুলিওয়ালা পাঠানকোট থেকে জীবিকার তাগিদে সোনামুখী এসেছিলেন। কাবুলিওয়ালার ওই দলটির সঙ্গে স্থানীয় তাঁতিদের সুসম্পর্ক তৈরি হয়। সেসময় তাঁতিরা কেবল শাড়ি তৈরি করতেন। ওদের কাবুলিওয়ালারা ভালবেসে পাগড়ি তৈরির কলাকৌশল শিখিয়ে ছিলেন। সেই শুরু এক নতুন ব্যবসার। তার পর তাঁদের হাতে তৈরি পাগড়িই হয়ে উঠেছিল কাবুলিওয়ালিদের প্রিয়। বহুদিন অবশ্য তাঁদের দেখা নেই সোনামুখীর রাস্তায়। তবু পাগড়ি বানানোর চল রয়ে গিয়েছে শিল্পীর ঘরে। এরপর থেকে এখান থেকেই পাগড়ি রফতানি হত আফগানিস্তানে।
একেকটি পাগড়ির দাম পড়ে ৩ হাজার টাকার মতো। এদিকে আফগানিস্তানে বেশ কিছুদিন ধরেই পাগড়ি রফতানি বন্ধ থাকায় শিল্পীদের হাতে আর পয়সা আসছে না। বাঁকুড়া থেকে পাগড়ি কলকাতাতেও পাঠানো হয়। সেগুলো তারপর আফগানিস্তানে চালান করা হত এতদিন। ছিল সুরাটের একটি সংস্থাও। ব্যবসায়ীরা জানালেন, ইতিমধ্যে ক্ষতির পরিমাণ ছাড়িয়েছে ১ কোটি টাকা। ব্যবসায়ীদের বাড়িতে বহু পাগড়ি এখন মজুত হয়ে পড়ে রয়েছে। এখন পরিস্থিতি কবে স্বাভাবিক হবে কেউ কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। আগামিদিন কেমন বাজার থাকবে তা নিয়েও বিরাট চিন্তা রয়েছে। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, সে কথাও বলা যাচ্ছে না। সুদিনের আশায় অপেক্ষায় তাঁরা। আরও পড়ুন: ক্রাইম সিরিয়াল দেখে খুনের ছক! একটা চাবি রিং দিয়েই রোমহর্ষক মামলার জবনিকা টানল পুলিশ