ভীমের দু’লাখি অপারেশনের জন্য ২ ঘণ্টায় মিলল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড

"অসহায় পরিবারের জন্য এই কার্ড যে কত মূল্যবান উপলব্ধি করতে পারলাম।" মুখ্যমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা মায়ের

ভীমের দু'লাখি অপারেশনের জন্য ২ ঘণ্টায় মিলল স্বাস্থ্যসাথী কার্ড
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Feb 13, 2021 | 1:18 PM

খড়গপুর: একমাত্র সন্তান। বাইক দুর্ঘটনায় পায়ের হাড় ভেঙে বাইরে বেরিয়ে চলে এসেছিল। জটিল অপারেশনের জন্য লাগবে ২ লক্ষ টাকা। কিন্তু কোথায় পাবেন একসঙ্গে এতগুলো টাকা! অকুলপাথারে পড়া দুঃস্থ মায়ের সহায় হিসেবে উঠে এল রাজ্য সরকারের স্বাস্থ্যসাথী কার্ড (Swasthya Sathi Card)। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের সহায়তায় মাত্র দেড়-দু ঘন্টার ব্যবধানে স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে একমাত্র ছেলের অপারেশন করতে পারলেন খড়্গপুর শহরের বাসিন্দা অনু শর্মা।

আরও পড়ুন: টিকা নিতে ধন্দ! অনিচ্ছুকদের ‘আর্কাইভ’ করার সিদ্ধান্ত স্বাস্থ্য ভবনের

রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করেন, একুশের ভোটের আগে স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পের মাধ্যমে মাস্টারস্ট্রোক দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। যদিও সেই কার্ড নিয়ে বহু বেসরকারি হাসপাতালে পরিষেবা না পাওয়ার অভিযোগ আছে। তবে বিপরীত উদাহরণও কম নয়। যেমনটি ঘটল পশ্চিম মেদিনীপুরের খড়্গপুর শহরের ২৭ নং ওয়ার্ডের (পুরী গেটের) বাসিন্দা অনু শর্মা’র একমাত্র সন্তান ভীম শর্মার সঙ্গে। গত মঙ্গলবার রাতে ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনার কবলে পড়েন ভীম। দুর্ঘটনায় তাঁর পায়ের হাড় মাংস সমেত বাইরে বেরিয়ে চলে আসে। বুধবার ভোরে তাঁকে মেদিনীপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন মা। চিকিৎসকেরা জানান, জটিল অপারেশন প্রয়োজন। তার জন্য অবিলম্বে দরকার ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা। শুনে আকাশ ভেঙে মাথায় পড়ার জোগাড় দরিদ্র মায়ের। কোথা থেকে জোগাড় করবেন এতগুলো টাকা!

মহিলার দুরবস্থার কথা বুঝতে পেরে ওই হাসপাতালেরই এক চিকিৎসক পরামর্শ দেন, স্বাস্থ্যসাথী কার্ড থাকলে বিনামূল্যেই অপারেশন করা যায়। একথা শুনেই ভীমের মা ছুটলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। তাঁর চরম অসহায় অবস্থার কথা জানালেন তাঁদের। এরপর ওই স্থানীয় নেতারা অনু দেবীকে নিয়ে খড়্গপুরের মহাকুমা শাসক আজমল হোসেনের কাছে পৌঁছন। এরপর নজিরবিহীন তৎপরতায় মাত্র ২ ঘন্টার মধ্যে অনু শর্মার হাতে ‘স্বাস্থ্যসাথী’ কার্ড তুলে দেন মহকুমা শাসক। অবশেষে এদিনই ওই বেসরকারি হাসপাতালে ভীম শর্মার পায়ের জটিল অপারেশন সম্পন্ন হচ্ছে বলে খবর।

এর আগে জরুরি সময়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় দ্রুততার সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার খবর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু এত দ্রুত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড হাতে তুলে দেওয়ার খবর পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় এই প্রথম বলেই জানিয়েছে ওয়াকিবহাল মহল! চোখের জল মুছতে মুছতে অনু দেবী শনিবার সংবাদমাধ্যমকে জানান, “প্রায় ২ লক্ষ টাকা অপারেশনের খরচ শুনে আমি ভয়ঙ্কর দুশ্চিন্তার মধ্যে পড়ি। কোনওমতেই এত টাকা জোগাড় করতে পারতাম না! ধন্যবাদ জানাই তাঁদের, যাঁদের জন্য মাত্র এক-দেড় ঘন্টার মধ্যে আমার হাতে উনি (মহকুমা শাসক) স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তুলে দিয়েছেন।” তিনি আরও বলেন, আমার অন্তরের অন্তর্স্থল থেকে প্রণাম জানাই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। আজীবন এই ঋণ পরিশোধ করতে পারব না। অসহায় পরিবারের জন্য এই কার্ড যে কত মূল্যবান উপলব্ধি করতে পারলাম। পাশাপাশি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও চিকিৎসককেও ধন্যবাদ জানান অনু দেবী।