করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত আদিবাসী গ্রাম

স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে হলে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামবাসীদের আসতে হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। দূরত্ব ১৫-১৬ কিলোমিটার। সমস্যা বাড়ে রাত্রির পর। রোগীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ।

করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরিষেবা থেকে বঞ্চিত আদিবাসী গ্রাম
নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Updated on: Jun 09, 2021 | 3:38 PM

বীরভূম: ইলামবাজার ও বোলপুর মধ্যবর্তী শালবনের ২৫০ হেক্টর জায়গাতে চৌপাহড়ী অঞ্চল। এই অঞ্চলে ৮টি আদিবাসী গ্রামের ৬-৭ হাজার মানুষের বসবাস। এই গ্রাম গুলিতে গিয়ে এক কঠিন সমস্যার কথা উঠে এল আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজনের বয়ানে। অতিমারির ভয়ঙ্কর ভয়াবহ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যের জন্য যখন লড়াই করেছে, তখন এই গ্রামে ভাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রই নেই। এমনকি নেই কোনও ওষুধের দোকানও।

স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে হলে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামবাসীদের আসতে হয় বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে। দূরত্ব ১৫-১৬ কিলোমিটার। সমস্যা বাড়ে রাত্রির পর। রোগীকে নিয়ে সমস্যায় পড়েন সাধারণ মানুষ।

গ্রামের বাসিন্দা রাম প্রসাদ বাউরির কথায়, চৌপাহড়ী অঞ্চলে চারদিকে শুধু শালবন। তবে জঙ্গলের মধ্যে বসবাস করছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ। মোট গ্রামের সংখ্যা রয়েছে ৮ টি। রাঙাবাঁধ, মোরগাবুনি, নীমবুনি, পাঁশকুড়া, খয়েরডাঙা, লক্ষ্মীপুর, জামবুনি, আমখোই গ্রামগুলোতে হাজার ছয় সাতেক মানুষের বসবাস।

এই গ্রামগুলোর জন্য স্বাস্থ্য পরিষেবা নেই বললেই চলে। বহু দূরে ইলামবাজার প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ওখানে গেলে অতি সামান্য থেকে সামান্য শারীরিক অসুস্থতা দেখতে পেলে ২০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তা অতিরিক্ত করে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে যেতে হবে এই গ্রাম বাসিন্দাদের।

শ্যামলী সোরেন, সোনালী সোরেন দুই বোন। বয়স ২০ ও ২২। দুই বোন স্নাতক উত্তীর্ণ। এঁরা জানচ্ছেন, “নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমন ধরনের স্বাস্থ্য পরিষেবা পেতে হয় আমাদের ‘আমখোই’ আদিবাসীদের। যদি সামান্য কোনো কিছু শারীরিক সমস্যা হয়, তার জন্য আমদের ১০০ টাকা টোটো ভাড়া করে যেতে হয়। রাত ৮ টার পর গ্রাম কেউ অসুস্থ হলে তাঁর পাশাপাশি যন্ত্রানা পোহাতে হয় রোগী পরিজনদেরও।”

এমন সব ঘটনা ঘটনার মধ্যে অ্যাম্বুল্যান্স বা গাড়িতে খবর দিতে হয়, চালকের মন হলে আসেন, না হলে আসেন না। আবার বোলপুর যাওয়ার জন্য ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়। গ্রামের কিছু টোটো চালক রয়েছেন। তাঁদের একটু কম লাগে গাড়ি থেকে ইলামবাজার স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যাওয়ার জন্য। বোলপুর হাসপাতালে যেতে হলে দিতে হয় ২০০ থেকে ৪০০ টাকা। আরও একটা বড় সমস্যার সম্মুখীন হতে হয় যুবতী ও কিশোরীদের।

আরও পড়ুন: মধ্যরাতে হাসপাতালের গেটে কিছু ঝুলতে দেখেছিলেন ওঁরা, হাওয়ায় দুলছিল! আঁধোআলোতে ভয়াবহ দৃশ্য 

আমখোই গ্রামে বহু পর্যটকের আনগোনা। কিন্ত এই গ্রামে নেই কোনো স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কোভিড আক্রান্ত হলে এবং তাঁর যদি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা বা অসুস্থতা দেখা দেয়, তাঁকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার আগেই মৃত্যু হতে পারে। এভাবেই বেঁচে আছেন এই আদিবাসী গ্রামের বাসিন্দারা।