‘শিক্ষাগুরু’ বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে ফুলের তোড়া, গান্ধীগিরির পথে বিশ্বভারতীর বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা

Visva Bharato University: রবিবার শিক্ষক দিবসের দিন সকালেই উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর বাসভবনের গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে যান বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা।

'শিক্ষাগুরু' বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে ফুলের তোড়া, গান্ধীগিরির পথে বিশ্বভারতীর বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা
আন্দোলনকারী পড়ুয়ারা, নিজস্ব চিত্র
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Sep 05, 2021 | 8:58 PM

বীরভূম: সদ্যই কেটেছে অচলাবস্থা। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে (VBU) পরিস্থিতি যদিও স্বাভাবিক হয়নি। উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর বাসভবনের তালাও খুলেছে হাইকোর্টের নির্দেশে। কিন্তু, আন্দোলনে ছেদ পড়েনি। উপাচার্যের বাসভবন থেকে ৫০ মিটার দূরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ মঞ্চে শিক্ষক দিবসের  দিন থেকেই রিলে অনশনের পথে অধ্য়াপক ও পড়ুয়ারা। এমনকী, শিক্ষক দিবস উপলক্ষ্যে উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীকে ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা দিলেন বিশ্বভারতীর বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা।

রবিবার শিক্ষক দিবসের দিন সকালেই উপাচার্য বিদ্যুত্‍ চক্রবর্তীর বাসভবনের গেটে ফুলের তোড়া দিয়ে যান বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা। সেইসময়ে নিরাপত্তরক্ষীরা বাসভবনের গেটেই পড়ুয়াদের আটকে দেন। বিক্ষোভরত পড়ুয়াদের পক্ষ থেকে জানানো হয যে উপাচার্যকে তাঁরা সংবর্ধনা দিতে চান। কিন্তু উপাচার্য সেই সংবর্ধনা গ্রহণ করেননি। উল্টে গেট থেকেই পড়ুয়াদের ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এর পর  বিক্ষোভরত পড়ুয়ারা গেটের সামনে ফুলের তোড়া নামিয়ে রেখে চলে যান। রবিবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছিল পোস্টারও। তাতে লেখা হয়েছে, ‘উপাচার্য মহাশয়ের কাছে আবেদন তিনটি ছাত্রজীবনকে শিক্ষার অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না।’

কিন্তু যে উপাচার্যকে নিয়ে এত বিতর্ক, এত বিরোধ তাঁকেই ফুলের তোড়া দিয়ে সংবর্ধনা জানানোর কারণ? আন্দোলনের অন্য়তম মুখ তথা বহিষ্কৃত ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী এদিন বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি শিক্ষা দেওয়া ও শিক্ষা নেওয়া দুই মৌলিক অধিকার। তাই আমরা পোস্টারের মাধ্যমে আমাদের মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দেওয়ার আবেদন জানাই। সেই সঙ্গে শিক্ষক দিবসে উপাচার্যকে সম্মান জানাতে ফুলের স্তবক নিয়ে গিয়েছি। কিন্তু তিনি আমাদের সেই উপহার প্রত্যাখ্যান করেছেন। আমরা কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ করতে দেখিনি। আমরা আরও বৃহত্তর আন্দোলনের প্রস্তুতি নিয়েছি।”

কেবল উপাচার্যকে ফুলের তোড়া দেওয়া নয়, রবিবার থেকেই রিলে অনশনে বসেন বিশ্বভারতীর নিলম্বিত অধ্যাপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও ছাত্রী রূপা চক্রবর্তী। অধ্য়াপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য এদিন বলেন, “বিশ্বভারতী জুড়ে উপাচার্য একের পর এক অরাজকতা চালাচ্ছেন। কখনও তালাবন্ধ করে আবার কখনও বেতন বন্ধ করে ছাত্রদের ও অধ্যাপকদের উপর দোষারোপ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি, অভিযোগ করার জন্য আমি সাসপেন্ড হয়েছি। এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায় না। সেই কারণে আমিও পড়ুয়াদের সঙ্গে অনশনে অংশগ্রহণ করেছি। আর আগামী দিনে আমাদের দাবি-দাওয়া না মানা পর্যন্ত এ আন্দোলন জারি থাকবে।”

VBU HUNGER STRIKE 1

অনশন মঞ্চে অধ্য়াপক সুদীপ্ত ভট্টাচার্য ও রূপা চক্রবর্তী, নিজস্ব চিত্র

উল্লেখ্য, সম্প্রতি বিশ্বভারতীর অচলাবস্থা নিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। আদালতের নির্দেশেই দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থা কাটিয়ে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরুর দিকে নজর দেয় বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। পাশাপাশি, পড়ুয়াদের বিক্ষোভ মঞ্চ সরিয়ে দেওয়া হয় উপাচার্যের বাসভবন থেকে প্রায় ৫০ মিটার দূরে। শুক্রবার আদালতের তরফে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, দুপুর ৩টের মধ্যে যাতে অবরোধমুক্ত করা হয় ক্যাম্পাস। ৩ জন পুলিশ কর্মী সর্বক্ষণের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মোতায়েন থাকবে। আদালত জানিয়ে দেয়, ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ অবশ্যই শোনা হবে, তবে তার আগে হঠাতে হবে অচলাবস্থা।

প্রসঙ্গত, সরাসরি রাজ্য সরকারের বিরোধিতা করে পুলিশ প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে রিট পিটিশন জমা দিয়েছিল বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ। কী উল্লেখ করা হয়েছে সেই পিটিশনে? বলা হয়, পুলিশ ও আধিকারিক নিয়োগ করে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক করার নির্দেশ জারি করুক আদালত। পাশাপাশি, সেন্ট্রাল অফিসের সামনের গেটে পড়ুয়াদের তালা ঝোলানো, গেট টপকে উপাচার্যের বাসভবনে প্রবেশের চেষ্টা-সহ একাধিক অভিযোগ জানানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় (VBU) কর্তৃপক্ষের তরফে। ৩৮ পাতার সেই পিটিশনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বিক্ষোভের ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেও কোনও সাহায্য় পাওয়া যায়নি। এমনকি, পুলিশ সুপারকে ফোন করেও কোনও লাভ হয়নি বলেই অভিযোগ। তাই পূর্বের স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে ফিরুক বিশ্বভারতী।

সম্প্রতি, পড়ুয়াদের ঘেরাওয়ের জেরে রোজকার খাবারটুকুও জুটছে না বলে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী তথা বিশ্ববিদ্য়ালয়ের আচার্য নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লেখেন উপাচার্য বিদ্য়ুত্‍ চক্রবর্তী। ক্রমেই জটিল হচ্ছে বিশ্বভারতীর পরিস্থিতি। পড়ুয়া বিক্ষোভের জেরে বাড়তি নিরাপত্তা চেয়ে পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছেন বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের (VBU) উপাচার্য বিদ্যুৎ চক্রবর্তী। পুলিশের কাছে চিঠি মারফত বাড়তি নিরাপত্তা চেয়েছেন উপাচার্য। এই চিঠির কথা স্বীকার করেছেন জেলার পুলিশ সুপার নগেন্দ্র ত্রিপাঠী। এদিকে উপাচার্য যখন বাড়তি নিরাপত্তা চাইছেন, তখন শ্লীলতাহানির অভিযোগে থানায় এফআইআর করেন দুই ছাত্রীও!

তিন পড়ুয়াকে বরখাস্ত করার প্রতিবাদে ও তার কারণ জানতে চেয়ে আন্দোলনে নেমেছেন ছাত্রছাত্রীরা। উপাচার্যের বাড়ির বাইরে আন্দোলনে অনড় তাঁরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে একাধিক। শিক্ষকমহলের একাংশের প্রশ্ন, কেন এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করছেন না উপাচার্য? প্রশাসনিক প্রধান হিসাবে উপাচার্য এই দায় কি এড়িয়ে যেতে পারেন, সে প্রশ্নও উঠছে। আরও পড়ুন: অনড়-ভারতী! ‘অসুস্থ’ উপাচার্যের বাড়ির ‘দুয়ারে’ এসেও ফিরে গেলেন চিকিত্‍সকেরা